avertisements 2

নৌকার ওপর নির্ভর করে ইলিশের দাম!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৪৪ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৬:৫৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

মাছ ধরার নৌকা বা ফিশিংবোটের ওপর নির্ভর করেই বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে ইলিশের দাম কমছে-বাড়ছে। যেদিন একসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০টি বোট ইলিশের মোকামে আসে, সেদিন দাম কমে। আর যেদিন ১৫ থেকে ২০টি বোট ঘাটে ভেড়ে, সেদিন দাম বাড়ে। গত ৫/৬ দিন ধরে ইলিশবাহী ফিশিংবোট বেশি আসায় ইলিশের দাম তুলনামূলক কম। ইলিশ সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় পচন ধরার আগেই তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং এ কারণেও দাম কম বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। তারা ইলিশ রফতানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি তুলেছেন।

সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) পাইকারি বাজারে চারশ’ গ্রাম (গোটলা) ওজনের কম ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। চারশ’থেকে পাঁচশ’ গ্রামের (ভ্যালকা) প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮ হাজার টাকায়। ছয়শ’ থেকে নয়শ’ (এলসি) গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৭ হাজার টাকায়। এককেজি ইলিশের মণ ৩২ হাজার টাকা এবং এর ওপরের ১২শ’ গ্রাম ইলিশ মণপ্রতি ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে
প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে

এ মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ ছয় হাজার মণ ইলিশ এসেছে। সর্বনিম্ন এসেছে তিন হাজার মণ। স্বাভাবিক দিনগুলোতে একদিনে ইলিশ আসতো তিনশ’ থেকে চারশ’ মণ।

নগরীর পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, যেখানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি ফিশিংবোট ইলিশ নিয়ে পোর্ট রোড খালে ভিড়তো, সেখানে গত চার-পাঁচ দিন ধরে সাগর থেকে ৪০ থেকে ৫০টি ফিশিং বোট একইসঙ্গে পোর্ট রোড খালে নোঙর করছে। প্রতিটি ফিশিংবোট ইলিশে ভরপুর। সেখান থেকে ইলিশ তুলে এনে ফেলা হচ্ছে প্রতিটি আড়তের সামনে। আড়ত থেকে তা বরিশাল জেলার খুচরা বাজার থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। এরপরও ইলিশ থেকে যাচ্ছে। সেগুলো সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় পচে যাওয়ার আগেই স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে কম দামে বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন আড়তদাররা।

প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে
প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে

পোর্ট রোডের আড়তদার জহির সিকদার জানান, ‘ইলিশ নিধনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে মৌসুমে সাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে জেলে এবং আড়তদাররা খুশি। তবে মাছ সংরক্ষণ করতে না পারায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। যেভাবে লাভ হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। এ কারণে রফতানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি উঠেছে। রফতানি উন্মুক্ত করে দিলে সরকারের রাজস্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও ইলিশের ভালো দাম পাবো। এতে আড়তদার থেকে শুরু করে জেলে ও খুচরা ব্যবসায়ী সবার মুখে হাসি ফুটবে।’

ক্রেতা জেমস লিটন বিশ্বাস বলেন, ‘ইলিশ যাতে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে এজন্য বর্তমান সরকার ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। এর সুফলও আমরা পাচ্ছি। কিন্তু আবার যদি রফতানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে ইলিশের দাম। সে বিষয়টি নজরে রেখে ভরা মৌসুমে, যখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে তখন সরকার যদি ইলিশ রফতানি উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে রফতানি উন্মুক্ত হলে স্থানীয় বাজারে দামের বিষয়টি অবশ্যই সরকারের নজরদারিতে রাখতে হবে। ইলিশ যাতে সাধারণ ক্রেতার নাগালের মধ্যে থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে
প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে

পোর্ট রোড আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, ‘গত পাঁচ বছরের তুলনায় এই মৌসুমে এত বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে এখন রফতানি উন্মুক্ত করা হলেও এর প্রভাব কোনোভাবেই সাধারণ ক্রেতাদের ওপর পড়বে না। এতদিন ক্রেতারা যেভাবে ইলিশ কিনে আসছিলেন, সেভাবেই কম দামে ইলিশ কিনতে পারবেন।’ তিনি আরও বলেন, ইলিশ রক্ষায় সরকারের যে পদক্ষেপগুলো আছে তা মাঠ পর্যায়ে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন থাকলে আগামীতে ইলিশের প্রজনন আরও বাড়বে।

পোর্ট রোড আড়তদার সমিতির সভাপতি নেতা মনু দাস বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি ইলিশের রফতানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। আর যত তাড়াতাড়ি ইলিশের রফতানি উন্মুক্ত হবে ততই উপকার আসবে জেলে ও আড়তদারদের। তা না হলে ইলিশ উৎপাদন বাড়লে আমাদের কোনও লাভই হবে না। সামনে দুর্গা পূজা, এর আগেই রফতানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানাই।’

প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে
প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বরিশালে

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘যেহেতু দৈনিক হাজার মণ ইলিশ আসা শুরু করেছে সেহেতু সুদিন উঁকি দিচ্ছে। দুই বছর আগে বার্মা থেকে বড় বড় ইলিশ আসতো। তখন এককেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হতো হাজার টাকার ওপরে। গত দুই দিনে সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। ইলিশ ব্যাপক হারে ধরা পড়ায় আড়তদাররা রফতানি খুলে দেওয়ার দাবি তুলেছে।’

বর্তমানে নদীতে স্বাদযুক্ত রুপালি ইলিশ ধরা না পড়ার কারণ হিসেবে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিম পাড়ার সময় ইলিশ নদীতে প্রবেশ করে। এখনও সেই সময় হয়নি। সময় হলেই ইলিশ নদীতে প্রবেশ করে ডিম পাড়বে। সে সময় পাওয়া যাবে নদীর স্বাদযুক্ত রুপালি ইলিশ।’

এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘ইলিশ রক্ষায় সরকারের যেসব কার্যক্রম চালু রয়েছে, তা মাঠ পর্যায়ে কঠোরভাবে পালন করায় এখন ইলিশের প্রজনন প্রতি বছরই বাড়ছে। এর সুফল হিসেবে নগরীর পোর্ট রোড ইলিশের মোকাম ভরা মৌসুমে ইলিশে সয়লাব হয়। এ কারণে আড়তদার থেকে শুরু করে জেলে নেতারা ইলিশ রফতানির দাবি জানিয়েছেন। আমরাও মনে করি ইলিশ রফতানি হলে সবাই লাভবান হবেন। একইসঙ্গে ইলিশ আহরণে জেলেরা উৎসাহিত হবে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2