রাজধানীতে করোনার প্রভাব পড়েছে ছিন্নমূল শীতার্তদের গায়ে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৫৮ পিএম, ২ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৫০ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দেশের কয়েকটি অঞ্চলে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানীতে তুলনামূলক কম হলেও, একেবারে যে নেই তা বলার উপায় নেই। রাত বাড়ার সাথে সাথে নগরীতে কমতে থাকে পথচারীদের সংখ্যা। রাত যতই গভীর হয় ঠান্ডার প্রকোপ ততটাই বৃদ্ধি পায়। আর এই শীতে অসহনীয় কষ্টে রাত পার করছেন ছিন্নমূল মানুষেরা। রাজধানীবাসী রাতে যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন এই নগরের লাখও ছিন্নমূল মানুষ অপেক্ষায় থাকে কখন শেষ হবে শীতের রাত। তারা অপেক্ষা করেন কখন দেখা মিলবে সকালের সূর্যের।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শীতে কিভাবে রাত কাটছে ছিন্নমূল মানুষের। এসময় দেখা যায় কেউ সারাদিন রিক্সা চালিয়ে রাতে রিক্সার মধ্যেই ঘুমিয়ে আছেন। আবার অনেকে ফ্লাইওভারের নিচে, কেউ ওভারব্রিজের নিচে, কেউ ফুটপাতের ওপরে, আবার কেউ রেলস্টেশনে রাত পার করছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জন্য শীতের কাপড় নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এই শীতে তেমন সহযোগিতা করা হয়নি। মাঝেমধ্যে সামান্য সহযোগিতা করা হলেও সকলের ভাগ্যে তা জোটেনি। তারা মনে করেন এ বছর করোনার জন্য মানুষ তেমন সহযোগিতা করতে পারছে না।
বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা জানান, করোনার কারণে যারা পূর্ব থেকেই চাকরি হারিয়েছেন আবার অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তাদের নিয়ে কাজ করার ফলে এ বছর শীতে ছিন্নমূল মানুষের পাশে পূর্বের মতো ততটা সহযোগিতা করার সুযোগ হয়নি। তারা মনে করেন একে বারে যে সহযোগিতা করেনি তা কিন্তু নয়। এরমধ্যেই যে যতটা পেরেছে তা করেছেন। অনেকে হয়তো মিডিয়ার অগোচরে ছিন্নমূল মানুষদের সহযোগিতা করেছেন।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি বিগত কয়েক বছরে যা হয়েছে, সেটা করোনার কারণে হঠাৎ করে ধ্বস নেমেছে। বিত্তবান লোকজন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পেয়েছে। সবাই একটা সংখ্যার মধ্যে রয়েছে। করোনা বিষয় নিয়ে অনেকেই কাজ করছে।
তিনি বলেন, করেনার কারণে অনেক মানুষ চাকরিচ্যুত হয়ে গেল, অনেকে কর্মহীন হয়ে গেল তাদেরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার কারণে প্রতিবছর ছিন্নমূল মানুষের পাশে যেমন দাঁড়ানো হতো এই বছর ততটা দাঁড়াতে পারেনি। সারা বিশ্বেই এরকম হয়েছে, শুধু বাংলাদেশে নয়। তারপরও আমি মনে করি যারা ছিন্নমূল মানুষ তাদের একটা প্রত্যাশা থাকে তাদের জন্য সহযোগিতা আসবে। যতটা সহযোগিতা দরকার ছিলো তা তারা পাচ্ছে না, করোনাই মনে হয় এর কারণ।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, শীতে ছিন্নমূল মানুষের পাশে মানুষ হাত বাড়াচ্ছে না এটা বললে ঠিক হবে না, অনেকেই হাত বাড়াচ্ছে। করোনার শুরু থেকে যার যা ছিল তা নিয়েই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে সবার যে অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো আছে তা কিন্তু নয়। কোভিড-১৯ থেকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মানুষের আয় বাড়ে নি।
তিনি বলেন, অন্যান্যভাবে অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, যার কারণে শীতে যেমন ভাবে দাঁড়ানোর কথা ছিলো তেমন ভাবে পারে নি। মনে করি না শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো একবারে বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে দিচ্ছে, হয়তো গোপনে দিচ্ছেন কাউকে জানাচ্ছেন না। মানুষের কিছুটা অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। আগে ভাগেই মানুষ অসহায় বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণেই হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবকদের সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান ইয়াছিন বলেন, আমরা করোনার শুরু থেকে মানুষের মঝে তৈরী খাবার বিতরণ করেছি। যখন লকডাউন করা হয়, তখন আমরা খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেই। আর শীতে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে আমরা আরও আগেই কম্বল বিতরণ করেছি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি শীতের সময় প্রস্তুতি নিতে নিতে শীত চলে যায়। আর শীতার্তদের কষ্ট কিছুতেই লাঘব হয় না। তাই শীত যখন শুরু হয়েছে তখনই আমরা ছিন্নমূল মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করি।