শীতের শুরুতেই করোনা জেঁকে বসছে ‘রেড জোন’ নারায়ণগঞ্জে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫৭ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৩২ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
‘রেড জোন’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জে শীতের শুরুতেই জেঁকে বসেছে করোনা। চলতি মাসেই প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশতের ঘর ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ ২ মাস আগেও এই আক্রান্তের গড় ছিল দৈনিক ৭ থেকে ৮ জনে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেলেও সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্য বিধির বালাই নেই নারায়ণগঞ্জে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, মার্কেট-বিপণী বিতান, নদীর ঘাট কিংবা বাজার, কোথাও নেই সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্য বিধির বালাই। বিশেষ করে গত আগস্ট থেকে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা গড়ে ৭-৮ জনে নেমে আসার পর শঙ্কা আর জীবনের চেয়ে জীবিকাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জে।
শিল্প ও বন্দর নগরী খ্যাত এই জেলায় বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ১০ লাখ কর্মজীবী মানুষ ছুটে চলেছেন করোনা ঝুঁকিকে সঙ্গে নিয়েই। অথচ দিন যতই যাচ্ছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে যেন পাল্লা দিয়েই।
জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনায় পুরো জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২৬ জন। অথচ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে করোনায় সেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৯ জনে। যার মধ্যে ১১২ জন আক্রান্তই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বেপজা ও বিটিএমএর সদস্যভুক্ত প্রায় ১ হাজার ২৪৩টি শিল্প কারখানার মধ্যে চালু রয়েছে ৯০ শতাংশ কারখানা। এছাড়াও আটা-ময়দা, সিমেন্ট, লবণ, ভোজ্য তেলসহ অন্যান্য শিল্পের প্রায় সাড়ে ৫০০ কারখানাও সচল রয়েছে পুরো জেলায়।
তবে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, শিল্প কারখানার কোনো শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন তথ্য আপাতত আমাদের কাছে নেই।
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে কিংবা অন্তত মাস্ক পরিধান করাটা শতভাগ নিশ্চিত করলে এই আক্রান্তের সংখ্যাও আগের মত নেমে আসবে। এদিকে শঙ্কার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে গণপরিবহনে উঠছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে গত কয়েক মাস আগে গণপরিবহনগুলোর ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মেনে আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী বসলেও এখন সেই দূরত্বের বালাই নেই। একই অবস্থা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ট্রেন সার্ভিসেরও।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই শহরের চাষাঢ়া, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মেট্রো হল মোড় থেকে ঢাকাসহ জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে বাসে যাত্রীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি বাসে উঠার জন্য যাত্রীদের ছিল দীর্ঘ লাইন। তবে যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ির ঘটনাই বেশি দেখা গেছে।
অপরদিকে জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন শিল্পঘন এলাকায় শ্রমিকরা চাপছেন অটোরিকশায় বা হিউম্যান হলারে। সেখানেও সামাজিক দূরত্বে কোনো পরোয়াই করেননি তারা। একই রকম অবস্থা শীতলক্ষ্যা নদীর ওপাড়ে বন্দর থেকে আসা লাখো যাত্রীর। এক নৌকায় ১০ জনের বেশি ওঠার নিয়ম না থাকলেও সেখানে ৪০ থেকে ৫০ জনও উঠে নদী পারাপার হচ্ছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জে করোনা ছড়িয়ে পরার অন্যতম প্রধান কেন্দ্রটি হল শহরের পাইকারি কাঁচা বাজারের হাটটি। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের পুরোটাই ভোর ৩টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে পাইকারি এই সবজির বাজার। পুরো জেলার সবজি ব্যবসায়ীরা এখানে কেনা-বেচা করছেন কোনো সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্য বিধি ছাড়াই।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ এই বিষয়ে যদি জনসাধারণে সচেতনতা বাড়ানো যায় তাহলে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির ফোকাল পারসন ডা. সফরদার জাহিদ জানিয়েছেন, করোনার প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা ভীতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলেও এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় কাজ করছে না। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিনই মাঠে নামতে হচ্ছে।