avertisements 2

বেশি দামের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলছেন কৃষক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪৬ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

পেঁয়াজের মূল্য আকাশ ছোঁয়া। তাই রাজবাড়ীতে সময়ের আগেই অপরিপক্ক পিয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন কৃষক। এতে ভালো মূল্যে পেলেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতাদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ পড়েছে। কিন্তু একই সময় বিক্রেতা এবং কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের কৃষক মো: ইউসুফ খাঁ বলেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ-রসুনে লোকসান হয়। এবার বাজারে বেশি দাম হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছি। কারণ পরে যদি দাম কমে যায়!

পেঁয়াজ অসময়ে ওঠালে উৎপাদন কমে যাবে এমন প্রশ্নে এই কৃষক বলেন, আমরা একটি সম্মানজনক দাম পাবো এই নিশ্চয়তা কে দেবে? পেঁয়াজের সঠিক দামের নিশ্চয়তা পেলে অসময়ে উঠাতাম না। যে কারণে বাজারে বেশি দাম থাকায় অতিরিক্ত লাভের আশায় আমরা কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছি। আশা করি, এবার পেঁয়াজে আমরা কিছুটা লাভবান হবো।

কৃষক মোছা: হাসিনা বলেন, তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে এভাবে দাম থাকলে কৃষক এবার কিছুটা লাভবান হবে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ ভালো করে পাকলে বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ হবে। এখন ওঠালে বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ হবে। তবে এই দাম তখন আমরা পাবো না। বাধ্য হয়ে বেশি লাভের আশায় আমরা অগ্রিম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছি। আশা করি, এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখব।

কৃষক হাসেম শেখ বলেন, বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ উঠিয়েছি। বাজারে তিন মণ পেঁয়াজ সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি।

তিনি বলেন, এখনো তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এমন দাম থাকলে সব পেঁয়াজ উঠিয়ে বিক্রি করব। ১৫ থেকে ২০ দিন পর এই পেঁয়াজ ওঠালে এক বিঘাতে ১০ থেকে ১২ মণ পেঁয়াজ বেশি হবে। তবে এমন দাম হয়তো আমরা তখন পাবো না। যে কারণে ইচ্ছা না থাকার পরও অসময়ে অপরিপক্ক পেঁয়াজ উঠাতে হচ্ছে।

এই কৃষক আরো বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি এর আগেও হয়েছে। সিন্ডিকেট না ধরে কৃষকের কাছে এলে কি হবে? পেঁয়াজের কারসাজি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। আইনের আওতায় সিন্ডিকেট গডফাদারদের নিয়ে আসতে হবে।

আগাম পেঁয়াজ উঠানোর পক্ষে মতামত দিয়ে একাধিক পেঁয়াজ ক্রেতা বলেন, আসুন আমরা পুরাতন পেঁয়াজ বর্জন করি। নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করি। নতুন পেঁয়াজে লাভবান হবে সরাসরি কৃষক আর পুরাতন পেঁয়াজে সিন্ডিকেট সদস্যরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের নীরব প্রতিবাদ এটা।

এ সময় পাশে থাকা বয়স্ক এক ব্যক্তি বলেন, কৃষক আগাম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করলে ক্রেতা মেনে নিচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও সরাসরি কৃষক লাভবান হবে। আর পুরাতন পেঁয়াজে কৃষক নয়, সিন্ডিকেট সদস্যরা লাভবান হবে। সুতরাং নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করতে হবে।

বালিয়কান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে অপরিপক্ক পেঁয়াজ ওঠালে কিছুটা উৎপাদন কমে গেলেও কৃষক সরাসরি বেশি দাম পাবে। আবার এই জমিতে পেঁয়াজ উঠিয়ে হালি পেঁয়াজ অথবা ভুট্টা লাগাতে পারবে। শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনো ফসলে বেশি দাম পেলে কৃষক-চাষি উৎসাহ পাবে। তবে সিন্ডিকেট নয়, সরাসরি কৃষক দাম পেলে উৎপাদন বেশি হবে।

তিনি আরো বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন পর পেঁয়াজগুলো কৃষকেরা তুললে বিঘা প্রতি আরো ১০ থেকে ১৫ মণ বেশি পেত। তারা লাভের আশার এখনি পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2