avertisements 2

জমির নামজারির জন্য এসিল্যান্ডের ঘুষ নির্ধারণ, অডিও ভাইরাল

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৫২ এএম, ১২ মে,রবিবার,২০২৪

Text


জমির নামজারিতে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে তা নির্ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এসিল্যান্ড অভিযোগটি অস্বীকার করলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের দেওয়া নাজিপুরের এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমানের ঘুষ নেওয়ার নির্দেশনামূলক বক্তব্য ভাইরাল হয়।

জমির নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত ফি ১ হাজার ১৭০ টাকা। কিন্তু ভাইরাল হওয়া অডিওতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি (৬ হাজার) টাকা নিতে নির্দেশ দেন মাসুদুর রহমান।

অডিও আলাপন থেকে জানা যায়, গত জুলাই মাসে নাজিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মাসুদুর রহমান।

অডিওতে শোনা যায়, বৈঠকের ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মাসুদুর রহমানে বলেন, ‘এখন আমাকে পরিষ্কার করে একটি বিষয় আপনাদের অবগত করতে হবে, আমি ইউএনও স্যারের চাপে আছি। ধরেন আমার অফিস থেকে নামজারিতে অতিরিক্ত আদায় বন্ধ করা হলো। আপনারা পার কেইসে যে ডিল করেন, এটা আপনারা নিশ্চিত করবেন কীভাবে যে আপনারা টাকা নিচ্ছেন না? আপনাদের মতামত শুনি। আপনারা কী চান? কত করে নেওয়া হবে? খোলামেলা আলোচনা করেন, মতামত দেন সবাই, এখানে উপস্থিত আছেন। যদি আমাকে বলেন, স্যার আপনি যদি না করে দেন তাহলে নিশ্চিত করব আমরা কোনো টাকা-পয়সার লেনদেন করব না। কিন্তু বাস্তবে এটা কখনো হবে না। আপনারা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই মানে খরচা আছে এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় আছে। যেটার কারণে এটা নিতে হচ্ছে বা নিচ্ছেন। এটা কমবেশি সবাই নিচ্ছে। কিন্তু এটা যে এই অফিসে দেওয়া হইতেছে বিধায় আপনারা এটাকে বড় আকারে একটা কিছু করবেন, এই ধরনের অভিযোগ এলে আমার জন্য বিব্রতকর।’

এ সময় ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এসিল্যান্ডের কাছে জানতে চান, ‘ধরেন একজনের দুই একর জমি আছে, তার কাছ থেকে নামজারির ক্ষেত্রে কত টাকা নেবেন? যেহেতু তার জমি বেশি, তার কাছ থেকে বেশি টাকা নেবেন? এ রকম? সবার জন্য সমান হওয়া উচিত।’

এ সময় বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে ৫ হাজার ছিল, আপনি অনুমতি দিলে এখন ৪ হাজার নিতে পারি। আপনি স্যার যেভাবে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেইভাবে করব।’

এরপর এসিল্যান্ড বলেন, ‘ধরেন আমি ৪ হাজার করে নির্ধারণ করে দিলাম। আপনারা কত করে ডিল করবেন? ক্লিয়ার কথা বলেন।’ তখন একজন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘সর্বোচ্চ ৬-এর বেশি আমরা নেব না।’

জবাবে এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা সঠিকভাবে বলেন, আপনারা কত টাকা করে নিতে চান। বলেন যে স্যার এই টাকা না হলে আমাদের আসলে চলবে না। আমি আমার দিক থেকে প্রস্তাব করব, আপনারা সাড়ে ৫ হাজার করে নেন। আমার এখানে ৪ হাজার দেবেন। আপনারা দেড় হাজার নেবেন।’

এরপর বৈঠকে উপস্থিত ইউনিয়ন পর্যায়ের সব কর্মকর্তা দলিল প্রতি ৬ হাজার টাকা করে নেওয়ার জন্য একমত হন। এ সময় এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বলেন, স্যার ৬ হাজার টাকা।’

তখন এসিল্যান্ড বলেন, ‘৬ হাজার মানে ৬ হাজারই, ৬ হাজার ১০০ টাকা হলে পরবর্তী সময়ে আমি ব্যবস্থা নেব। গত অর্থবছর পর্যন্ত যেগুলো ছিল সেটা এ সপ্তাহের মধ্যে ক্লিয়ার করবেন। প্রত্যেক মাস শেষ হওয়ার পর নতুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হিসাব ক্লোজ করে রোববারের মধ্যে আমাকে হিসাব বুঝিয়ে দেবেন। জুলাই মাস শেষ হলে যত মামলার হিসাব হবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এটাকে ক্লিয়ার করে পরের রোববার উপস্থাপন করবেন।’

অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তাদের (ইউনিয়ন পর্যায়ের সব কর্মকর্তা) সঙ্গে আমার এমন কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আমি এখানে নতুন এসেছি। আমি সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার জন্য এই মুহূর্তে ঢাকায় আছি। পরীক্ষা দিয়ে আগামী মঙ্গলবার নাজিরপুরে যাব। সেখানে গেলে তখন বুঝতে পারব বিষয়টি কী হয়েছে। এখানে খাসজমি উদ্ধারসহ কিছু কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই কার্যক্রমগুলো শুরু করতে গিয়ে দেখি যে বিভিন্ন ধরনের রোষানলের শিকার হচ্ছি।’

নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জীব দাশ বলেন, ‘অডিওর বিষয়টি আমি এক দিন আগে জেনেছি। অভিযোগটি খুবই গুরুতর। এরই মধ্যে এসিল্যান্ড নাজিরপুরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘আমি অডিওর কথাগুলো শুনেছি। বিষয়টি কী তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2