avertisements 2

পদায়নে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন, তোলপাড় কারা প্রশাসনে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ১২:১৭ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪

Text

এক কর্মকর্তার পদায়ন নিয়ে কারা প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। বঞ্চিত কর্মকর্তারা বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারছেন না। এ বদলি বাতিলের জন্য তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

তারা বলছেন, ৪২ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ওই কর্মকর্তাকে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদায়ন করা হয়েছে। এতে অনেক কর্মকর্তার মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। হতাশা থেকে কর্মস্পৃহা লোপ পাওয়ার যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।

পাশাপাশি কারা অধিদফতরের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। এ সংক্রান্ত তিনজন সহকারী কারা মহাপরিদর্শক, ছয়জন সিনিয়র জেল সুপার ও চারজন জেল সুপারের আবেদন হাতে এসেছে।

তিন কর্মকর্তাকে পদায়নে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সে অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (চলতি দায়িত্ব) ইকবাল কবির চৌধুরীকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একই পদে, নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) এবং গাইগান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার মাহবুবুল আলমকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

এর মধ্যে সুভাষ কুমার ঘোষের পদায়ন নিয়ে কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন জেল সুপার পদমর্যাদার বঞ্চিত কর্মকর্তারা।

সুভাষ কুমার ঘোষকে বিতর্কিত কর্মকর্তা উল্লেখ করে বঞ্চিত কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, নারায়ণগঞ্জের আগে কাশিমপুর কারাগার-২ এর দায়িত্বে ছিলেন সুভাষ ঘোষ।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার সুপারিশে সেখান থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলে পদায়ন পান। কাশিমপুর কারাগারে দায়িত্ব পালনকালে সুভাষ কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠে।


২০১২ সালের ডিসেম্বরে ওই শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেয়ে মুক্ত হওয়ার পর বিষয়টি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যথাসময়ে জানানো হয়নি।

২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি বরগুনা জেলা কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় কারাগার থেকে এক বন্দি পালিয়ে যান। এ বিষয়ে সুভাষের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল।

বঞ্চিত কর্মকর্তা আরও জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ কর্মরত থাকাকালে আবুল হোসেন নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি মুক্তি দিয়েছিলেন।

নির্দেশনা থাকলেও আবুলের জামিনের বিষয়টি গোয়েন্দা শাখাকে জানানো হয়নি। একই কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাপ্পু নামের এক আসামিকে তিনি নির্মম নির্যাতন করেছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট হলে তৎকালীন প্রধান বিচারপ্রতি এসকে সিনহার মধ্যস্থতায় বিষয়টির মীমাংসা হয়।

জানতে চাইলে সুভাষ কুমার ঘোষ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার পদায়ন আমার হাতে নয়। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। আর আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেসবের কোনো সত্যতা নেই। আমি যেখানেই চাকরি করেছি যথাযথ নিয়ম মেনে কাজ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘এসকে সিনহা ও আবুল হোসেনকে জড়িয়ে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি অপপ্রচারের অংশ। আমি এ দু’জনের কাউকেই চিনি না।’

সূত্র জানায়, সুভাষ ঘোষের পদায়ন প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর থেকেই এর বিরোধিতা শুরু করেন অনেক কর্মকর্তা।

২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছ লেখা আবেদনে কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক সুরাইয়া আক্তার বলেন, ৪২ জন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ৪৩ নম্বর সিরিয়ালের যে কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, জেল সুপার পদে ৫ বছর চাকরি করার পর সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতির বিধান আছে। বর্তমানে কারা অধিদফতরে সফলতার সঙ্গে জেল সুপার পদে ৫ বছর সময় অতিক্রমকারী উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তা রয়েছেন।

গত ৭ বছরের বেশি সময় ধরে জেল সুপার থেকে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তাই অধিদফতরের চেইন অব কমান্ড সমুন্নত রাখতে দেশের সব কেন্দ্রীয় কারাগারে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়মিত জেল সুপার অথবা চলতি দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে সিনিয়র জেল সুপার পদে পদায়ন করতে আপনার বিশেষ আজ্ঞা হয়।

নিজ নিজ আবেদনে একই ধরনের অনুরোধ জানান সহকারী কারা মহাপরিদর্শক আমিরুল ইসলাম ও মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন।

এছাড়া সুভাষ ঘোষের পদায়নসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সিনিয়র জেল সুপার- রত্না রায় (কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১), প্রশান্ত কুমার বণিক (বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার), হালিমা খাতুন (চলতি দায়িত্বে, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার), শফিকুল ইসলাম খান, সুব্রত কুমার বালা (যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার), আবদুল জলিল (সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-১), জেল সুপার- গোলাম দস্তগীর (বাগেরহাট জেলা কারাগার), কানওয়ালিন নাহার (জয়পুরহাট জেলা কারাগার), ওবায়দুর রহমান (গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার) ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ-আল-মামুন (টাঙ্গাইল জেলা কারাগার)। তারা প্রত্যেকেই স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) এবং কারা মহাপরিদর্শকের কাছে ই-মেইল ও ডাকে পত্র পাঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদফরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, বদলি একটি রুটিন ওয়ার্ক। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার তিনজনকে বদলি করা হয়েছে।

এর মধ্যে একজনের বদলি নিয়ে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, সুভাষ কুমার ঘোষকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি।

তাকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাত্র। এটা যে কাউকে দেয়া যেতে পারে। যাকে দেয়া হয়েছে তাকে দু’দিন পর সরিয়ে দেয়া যেতে পারে।

আবরার হোসেন আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে নিশ্চয়ই তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2