জমিতে বিদ্যুতের খুঁটি, ভয়ে চাষ করছেন না কৃষকরা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:৫৮ এএম, ২৫ নভেম্বর,
বুধবার,২০২০ | আপডেট: ১২:৩৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঠিকাদারের দায়সারা কাজ আর পল্লী বিদ্যুতের উদাসীনতায় অন্তত ৩০ বিঘা জমির বোরো আবাদ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া হেলে পড়া খুঁটির কারণে পৌর এলাকাসহ অনেক এলাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যার পানির প্রবল স্রোতে পল্লী বিদ্যুতের নবনির্মিত লাইনের ১৫-২০টি খুঁটি ও তার আবাদি জমিতে দীর্ঘদিন পড়ে আছে। হেলে পড়া খুঁটির কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মির্জাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রাখতে সরকার ঢাকার ধামরাই থেকে মির্জাপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৩৩ হাজার ভোল্টের সঞ্চালন লাইন টাঙানোর উদ্যোগ নেয়। টেন্ডারের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের সাহা ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। এক বছর আগে ঠিকাদার কাজ শুরু করে।
মির্জাপুর-উয়ার্শী-বালিয়া সড়কের পাশ দিয়ে খুঁটি স্থাপন ও তার টাঙানোর কাজ করে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে গত আগস্ট মাসের শুরুতে উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের উত্তর রোয়াইল এলাকায় প্রথমে বিদ্যুতের একটি খুঁটি উয়ার্শী-বালিয়া সড়কে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় স্থানীয় লোকজন খুঁটিটি রাস্তার পাশে সরিয়ে রাখে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্তত ১৫-২০টি খুঁটি রাস্তার পাশে আবাদি জমির ওপর পড়ে যায়। এছাড়া মির্জাপুর পৌর এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় অনেকগুলি খুঁটি হেলে পড়ে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, খুঁটিগুলো স্থাপনের সময়ই অনেক খুঁটি হেলে পড়ে। এতে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যাবস্থা নেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তারা জানান, বন্যার পানি নেমে গেছে। এখন কৃষক বীজতলা তৈরিসহ রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের কাজ করছেন। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে বোরো আবাদ শুরু হবে। কিন্তু জমিতে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পড়ে থাকায় কৃষকরা তাদের জমি চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করতে পারছেন না।
খুঁটিগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়া না হলে ওই এলাকার অন্তত ৩০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ নিয়ে সংশয় দেখা দেবে বলে জমির মালিকরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে উত্তর রোয়াইল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার পূর্ব পাশে খুঁটিগুলো পড়ে আছে। জমির পানি নেমে গেছে। এই মৌসুমে কৃষক তাদের জমিতে সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করছেন।
কিন্তু জমিতে পড়ে থাকা খুঁটির কারণে শিপন দেওয়া ৭০ শতাংশ, মোকাদ্দেছ ৩০ শতাংশ, খোরশেদ দেওয়ান ৪৮ শতাংশ, করিম দেওয়ান ৩২ শতাংশ, লাবু মিয়া ৮০ শতাংশ, পতিত সূত্রধর ৩৬ শতাংশ, সুলতান খান ৪০ শতাংশ, কাজী ফরমান ৫০ শতাংশ ও নিতাই সূত্রধরের ৭০ শতাংশসহ প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে আবাদ করা বন্ধ রয়েছে।
তাছাড়া সামনে বোরো মৌসুম। এজন্য কৃষক তাদের জমি চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করতে পারছেন না।
উত্তর রোয়াইল গ্রামের গোবিন্দ সূত্রধরের স্ত্রী অর্পনা সূত্রধর বলেন, আমাগো খ্যাতের মধ্যে কারেনের খাম্বি ম্যালাদিন পইড়া রইছে। এহন কিছু বুনা পারতাছি না।
একই গ্রামের খোরশেদ মিয়া বলেন, ৩-৪ মাস আগে থিকা আমার জমির ওপর খুঁটি পইরা আছে। পানি নাইমা যাওয়াই এখন জমি চাষ করুম। খুঁটিগুলা না সরানোয় কাজ হইতাছে না। সক্কলেই জমি বুইনে ফেলতাছে।
ওই গ্রামের মিনুর হোসেন, আলাল দেওয়ান, শিপন দেওয়ান, সুলতানসহ আরও অনেকেই বলেন, জমিতে খুঁটি ও তার পড়ে থাকায় ইঞ্জিনচালিত লাঙল নামানো যাচ্ছে না।
আলম দেওয়ান ও জোয়াহের দেওয়ান বলেন, টেলিভিশনে দেখছি সরকার দেশে আবাদি জমির পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলছে। আর পল্লী বিদ্যুৎ আবাদি জমিতে খুঁটি ফেলে রেখেছে। তাহলে কিভাবে আবাদী জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহীনুর রহমান বলেন, বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুঁটিগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বার বার চাপ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে খুঁটিগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে।