avertisements 2

দুই পাশে রাস্তা-জনবসতি নেই

ফসলের মাঠে ৩৮ লাখ টাকার সেতু নির্মান!    

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:০০ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৪

Text

 

বসতবাড়ি নেই, আশেপাশে রাস্তা নেই, বিশেষ করে রাস্তার প্রয়োজনও নেই তবু ফসলি মাঠের মাঝখানে ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে একটি সেতু।এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামে ফসলি মাঠে সম্প্রতি এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠের ওপর দুই পাশে সংযোগ সড়কহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার শাকিল হোসেন তার বাড়ির পাশের ওই মাঠ থেকে ফসল আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য সরকারি খরচে সেতুটি নির্মাণ করেছেন। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা নুরু মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ সুন্দর খাতা গ্রামে সার্ভেয়ার শাকিলের বাড়ির পশ্চিম পাশে ফসলের মাঠে ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৮ লাখ টাকা। কাজটি সম্পন্ন করেছেন ঠিকাদার নুর আলম।

সরেজমিনে ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দর খাতা গ্রামের পশ্চিমপাশে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। মাঠের যে অংশে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে তার দুই পাশে কোনো রাস্তা নেই।
তবে মাঠের কৃষকরা শুনেছেন, সেতুর দুই পাশে সড়ক তৈরি হবে। কিন্তু সেই সড়ক কবে হবে এবং কেন হবে তারা কেউ জানেন না।

মাঠে কাজ করা কয়েকজন কৃষক জানালেন, এ সেতুটি কোনো কাজে আসবে না। অপ্রয়োজনে সরকারের লাখ লাখ টাকা জলে ফেলা হয়েছে ।

সেতুর একপাশে বসত বাড়ি থাকলেও অন্যপাশে পাশে বিশাল ফসলের মাঠ । সামনে প্রায় এক কিলোমিটারের মধ্যে নেই বসতবাড়ি ।নেই কোনো জনসাধারণের চলাচল । ব্রিজটির ২০০ মিটার পূর্বে সুন্দরখাতা-ডিমলা পাকা সড়ক, এক কিলোমিটার দক্ষিণে মাইজালির ডাংগা সড়ক। আধা কিলোমিটার উত্তরে খোকসার ঘাট ব্রীজ ও পাকা সড়ক।এক কিলোমিটার সামনে বুড়িতিস্তা নদী ও বাঁধকাম রাস্তা। যা খোকসারঘাট ব্রীজের সংযোগ রাস্তার সাথে মিশেছে। নদীর ওপারেই ডোমার উপজেলা।
 

স্থানীয়দের অভিযোগ,এই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সেতুর প্রয়োজন অথচ আশপাশে সড়ক নেই, বাড়িঘরও নেই এমন স্থানে সেতু হয়েছে। জনগণের স্বার্থ ছাড়া কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে ধরে নিতে হবে সেখানে দুর্নীতির উদ্দেশ্য রয়েছে। কারো ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে এই অপ্রয়োজনীয় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

সুন্দর খাতা গ্রামের বাসিন্দা আবদেছ আলী বলেন, সড়ক ও বসতি না থাকায় সেতুটি নির্মাণের শুরুতে কাজ বন্ধ করে নির্মানসামগ্রীর সব মালামাল ফেরত নিয়ে যায় প্রকৌশল অফিসের লোকজন। পরে শুনেছি অনেক তদবিরের পর আবার কাজ শুরু হয়।
মধ্যম সুন্দর খাতা গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, মানুষ নয়, গরু-মহিষ পারাপারের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আগে দেখতাম সড়ক নির্মাণ করে তারপর ব্রিজ বা কালভার্ট হতো। এ ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা।

একই গ্রামের ওয়াজেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, যেখানে দরকার সেখানে সেতু নির্মাণ না করে ফসলের ফাঁকা মাঠে করা হয়েছে। এটা হাস্যকর। সেতু এলাকায় কোনও বসতি নেই। মানুষও চলাচল করেনা। অথচ পাশের এই গ্রামে সহস্রাধিক মানুষের বাস।গ্রামের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে সড়কটি হাঁটু পানির নীচে থাকে।কালভার্ট না থাকায় বৃষ্টির পানির চাপে বারবার ভেঙে যায় সড়কটি। এছাড়া পাশেই সিংগাহারা নদীর ওপর দুটি সেতু মাঝ বরাবর দেবে হেলে পড়েছে । অন্তত পাঁচ গ্রামের ১০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সেতু দিয়েই যাতায়াত করছে। অতিপ্রয়োজনীয় এসব সেতু ও রাস্তা সংস্কার না করে কেন বা কার স্বার্থে সরকারি খরচে ফসলের ফাঁকা মাঠে সেতু নির্মাণ করা হলো তার সঠিক উত্তর জানা নেই গ্রামবাসীর।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার শাকিল হোসেন বলেন, সরকারি বরাদ্দের অর্থ যাতে ফেরত না যায় সেজন্য ওই স্থানে সেতুটি দেওয়া হয়েছে। এখন রাস্তা নেই, ভবিষ্যতে হবে। নিজের পরিবারের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণ করেছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সে সময় অন্য কোথাও জায়গা খুজে পাইনি। তাছাড়া কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলাম ।বিষয়টি আমার জানা নেই । তারপরও রাস্তা ছাড়া কী কারণে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2