avertisements 2

ছাগলের সঙ্গে বৃদ্ধের বসবাস,

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ মে,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৭:০১ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

পাঁচ সন্তানের পিতা বৃদ্ধ শানু মৃধা ছাগলের খোয়ারে বসবাস করছেন। খাবার চাইলেই ছেলে সুলতান মৃধা বাবাকে মারধর করছেন। অর্ধাহারে অনাহারে ছাগলের সঙ্গেই তার বসবাস করতে হচ্ছে।

ছেলে সুলতানকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম তার বাবার ভরণ পোষণ ও ভালো স্থানে বসবাসের নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না তিনি। উল্টো তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কটাক্ষ করছেন।

এ ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার উত্তর কুকুয়া গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী পাষণ্ড ছেলে সুলতানের শাস্তি দাবি করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার উত্তর কুকুয়া গ্রামের বৃদ্ধ শানু মৃধা এক কানি সম্পত্তির মালিক ছিলেন। গত এক বছর পূর্বে বড় ছেলে বাবার সব সম্পত্তি লিখে নেন এমন অভিযোগ বাবার। পরে ঘরের পাশে একটি ছাগলের খোয়ারে তাকে থাকতে দেন।

রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, বৃদ্ধ শানু মৃধা একটি ছাগলের খোয়ারে নোংরা অবস্থায় বসে আছেন। তার পাশে ছাগল ছোটাছুটি করছে। মানুষ দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে দেয় আর খাবার চায়। শরীর ও ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। নাক চেপে মানুষকে বৃদ্ধের কাছে যেতে হয়। মল-মূত্র ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ওই মল-মূত্রের মধ্যে তিনি বসবাস করছেন। কেউ তার নোংরা পোশাক পরিষ্কার করছে না।

বৃদ্ধ বাবা ছাগলের খোয়ারে অর্ধাহারে অনাহারে ছাগলের সাথেই বসবাস করছেন। চিকিৎসার অভাবে রুগ্ন অবস্থায় জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়ে বেঁচে আছেন। চলাফেরা করতে পারেন না। এ ঘটনা স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে জানান। তিনি পুলিশ পাঠিয়ে ছেলে সুলতানকে বাবার ভরণপোষণসহ ভালো স্থানে বসবাসের নির্দেশ দেন; কিন্তু পাষণ্ড ছেলে ইউএনওর কথা মানছেন না। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবার খেয়ে তিনি বেঁচে আছেন।

বৃদ্ধ শানু মৃধা হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, মোর পোলায় মোরে ভাত দেয় না। ভাত চাইলে মোরে এ্যাকছের মারে। কাগজে টিপ নিয়ে জাগাজমি লেইখ্যা লইয়্যা গ্যাছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, খাবার চাইলে প্রায়ই ছেলে সুলতান বাবাকে মারধর করে। আমরা এ বিষয়ে কিছু বললেও সে আমাদেরও গালাগাল করে।

তারা আরও বলেন, বড় ছেলে জমি লিখে নেয়ার কারণে তার আরেক ছেলে লিটন অন্য গ্রামে বসবাস করেন, তিনিও বাবার খোঁজখবর নেন না।

ছেলে সুলতান মৃধার স্ত্রী নিলুফা বেগম জমি লিখে নেওয়া ও খাবার না দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার শ্বশুর জীবনে অন্তত ২০টি বিয়ে করেছেন। বিয়ে করতে গিয়ে সব জমিজমা মানুষের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু জমি ছিল তাও বিক্রি করছিল। ওই জমিটুকু আমার স্বামী টাকা দিয়ে কিনে রেখেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার শ্বশুর মানসিক রোগী কথা শুনে না। তাই আমার স্বামী মাঝে মধ্যে একটু গালমন্দ করেন। পুলিশ-প্রশাসন আসলে কী হবে তারাতো খাবার দিয়ে যায় না। আমাদেরই তো সব করতে হয়। তাদের কথা শুনলেই কী আর না শুনলেই কী?

কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার বলেন, সুলতান একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তাকে বারবার বলা সত্ত্বেও বাবার ভরণপোষণ দিচ্ছে না। উল্টো বাবার সঙ্গে খাবার আচরণ করছে।

তিনি আরও বলেন, শুনেছি সুলতান বাবার জমিজমা লিখে নিয়ে গেছেন। আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। ইউএনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ছেলে সুলতানকে ডেকে বৃদ্ধের ভরণপোষণসহ ভালোভাবে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি সুলতান বাবার ভরণ পোষণ ও যত্ন না নেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2