ডাক বিভাগের দুর্নীতি, দুদককে শক্ত অবস্থান নিতে হবে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:০৮ পিএম, ১২ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৫:৫৬ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ডাক বিভাগের অভ্যন্তরে দুর্নীতির যে মহোৎসব চলছিল তা টের পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে সব। দুর্নীতির মহোৎসবের মূল নায়ক ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র। ভদ্র মহোদয় যে এত অভদ্র তা আগে জানা ছিল না।
মূলত ডাক বিভাগের প্রায় ৫৪১ কোটি টাকার ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ নামের প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর অন্যতম। এ প্রকল্প থেকে অন্তত ১০০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন মহাপরিচালক। প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা ৫৪০ কোটি টাকার মধ্যে ১৬০ কোটি টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ ব্যাপারে প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট বিভাগ, অডিট রিপোর্ট, দুদক ও সংসদীয় কমিটির তদন্তে আরও যেসব দুর্নীতির ঘটনা উঠে এসেছে সেগুলো হল- নোয়াখালীর পোস্টাল অপারেটর স্থানীয় ডাকঘর থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ঢাকা পোস্ট অফিসের ফরেন শাখা থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং রংপুর ডাকঘর থেকে সঞ্চয়ের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ।
ওদিকে কাগজপত্রে যেসব জায়গায় ই-পোস্ট অফিস দেখানো হয়েছে, বাস্তবে সেখানে কোথাও জঙ্গল, কোথাও খেলার মাঠ, কোথাও পুরনো ভাঙাচোরা পোস্ট অফিস ঘর। অথচ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ল্যাবসহ ডিজিটাল পোস্ট অফিস স্থাপনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন তিনি।
ডাক বিভাগের মহাপরিচালকের সব ধরনের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে হবে। শুধু তিনি নন, তার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে যারা দুর্নীতিতে অংশ নিয়েছেন, তাদেরও আনতে হবে আইনের আওতায়। ইতোমধ্যেই অবশ্য দুর্নীতি তদন্তে যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য মহাপরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেছেন, ডাক বিভাগের অনুসন্ধান জোরালোভাবে চলছে, মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এ বিষয়ে আলাদা পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এখন দেখার বিষয়, ডাক বিভাগের দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে দুদক কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। বস্তুত দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতির উন্নতি বহুলাংশেই নির্ভর করছে দুদকের ওপর। এ
ই সাংবিধানিক সংস্থাটি যদি দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে পারে, তাহলে একদিকে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি হবে, অন্যদিকে দেশ থেকে দুর্নীতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তা ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা ডাক বিভাগসহ দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি উন্মোচনে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে দুদকের সাফল্য কামনা করি।