avertisements 2

সাড়ে ১১ কোটি টাকা ঋণখেলাপি, তবুও মনোনয়নপত্র বৈধ!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

গোপালগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাড়ে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি (বিএল) করা চেয়ারম্যানপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট না দেখেই ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রির্টানিং কর্মকর্তা।

বিষয়টি জানজানি হওয়ার পর গোবরা ইউনিয়নে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হবে কি না, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। সদর উপজেলার গোবরা ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল কবির কদর ১১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৪ টাকার ঋণখেলাপি করেছেন বলে সিআইবি রির্পোট থেকে জানা গেছে।

সিআইবি’র ওই রিপোর্টে দেখা গেছে, মোট ৫টি ব্যাংক হিসাবে ওই প্রার্থী ১১ কোটি ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৪ টাকার ঋণখেলাপি (বিএল) করেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সিআইবি সাবজেক্ট কোর্ড নং এ ০০০২৭৩০৭৬-তে ৪ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার ৪৬৬ টাকা, সিআইবি সাবজেক্ট কোর্ড নং এক্স ০০০০৮৪৪০৬২-তে ৩৮ লাখ ৪৮৮ টাকা, ওই কোর্ডে ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৫ টাকা ও ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮২ টাকা ঋণখেলাপি হয়েছে।

এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে সিআইবি সাবজেক্ট কোর্ড নং জি ০০০০২১৩৫৭৬-তে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৩ টাকার ঋণখেলাপি রয়েছেন চেয়ারম্যানপ্রার্থী ফয়সাল কবির।

গোবরা ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যানপ্রার্থী সফিকুর রহমান চৌধূরী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় সিআইবি রিপোর্ট চাইতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সে মেতাবেক রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রার্থীর সিআইবি রিপোর্ট দেখবেন। প্রাপ্ত সিআইবি তথ্যের ভিত্তিতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বৈধ বা অবৈধ ঘোষণা করবেন। শুনেছি চেয়ারম্যানপ্রার্থী ফয়সাল কবির ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মানোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং কমকর্তা মনোনয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় ওই প্রার্থীর সিআইবি রিপোর্ট না দেখেই তা বৈধ ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ফয়সাল কবির কদর ঋণখেলাপি। ঢাকার তার কার ম্যাক্স, গান ম্যাক্স, মুনভিউসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। গাড়ি ইমপোর্ট করার জন্য তিনি সোনালী, বেসিক ও এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। পরে ঋণের দায়ে ব্যাংক তার ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান কার ম্যাক্স সিলগালা করে দেয়। এছাড়া মুন ভিউ নামক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফয়সাল কবির কদর প্রপাটিজ, প্রমোটার ও ডেভেলপারের ব্যবসা করছেন।

তারা আরও জানান, তিনি অনেক টাকা খরচ করে এনআইডি কার্ড ও টিন নম্বরে কারসাজি করেছেন। এর আগে তিনি গোবরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেবারের মনোনয়নপত্র খুঁজে বের করলে তার আগের এনআইডি ও টিন নম্বর পাওয়া যাবে। ওই এনআইডি ও টিন ব্যবহার করে তিনি ব্যাংকঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণে তিনি সাড়ে ১১ কোটি টাকার খেলাপি। এ নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের সময় তিনি কারসাজি করা এনআইডি ও টিন নম্বর জমা দিয়েছেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল কবির কদর বলেন, আমি কোনো তথ্য গোপান করে প্রার্থী হইনি। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার আইডি কার্ড নম্বর, টিন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই দাখিল করেছি। ২০ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ে আমার মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার বৈধ ঘোষণা করেছেন। মনোনয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসার সিআইবি প্রতিবেদন কোনো প্রার্থীর কাছে চাননি। আমি ঋণখেলাপি হলে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংক রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করতো। সেই সময়ও পার হয়ে গেছে। এখন আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করার ক্ষমতা কারো নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষ নেগেটিভ নিউজ সহজে গ্রহণ করেন। তাই এই সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও গোবরা ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার শেখ বদরুদ্দিন বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি গোবরা ইউনিয়নের প্রার্থীরা মানোনয়নপত্র দাখিল করেন। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা সিআইবি রিপোর্টের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর কাছে প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠাই। পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে প্রার্থীদের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করি। এই কাজ শেষ হওয়ার পর দুপুর ২টার দিকে সিআইবি রিপোর্ট আমি হাতে পাই। ততক্ষণে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়ে গেছে। তারপরও ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রার্থীর ঋণখোলাপির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কেউ এ ব্যাপারে আপিল করেননি। তাই এখন আর ওই মানোনয়নপত্র বাতিলের সুযোগ নেই।

গোপালগঞ্জের আইনজীবী বিজন বিশ্বাস বলেন, ঋণখেলাপি কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হতে পরেবেন না। তারপরও যদি কেউ প্রার্থী হয়, তা হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ঋণখেলাপির বিষয়ে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন এটি আমলে না নিলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2