avertisements 2

ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেট, তর্জন গর্জনই সার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:০১ পিএম, ৩ মে,শুক্রবার,২০২৪

Text

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ব্যাপক আলোচনায় দেশের চায়ের রাজ্য হিসেবে খ্যাত সিলেট। ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে বার বার সতর্ক করা হলেও অপরিকল্পিত নগরায়ন আরো ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নগরীর। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের প্রায় ৪২ হাজার ভবনের ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভবনই ভূমিকম্পের কথা চিন্তা না করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ৮০ শতাংশ বহুতল ভবন ভেঙে পড়তে পারে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন কেবল তর্জন গর্জনেই সীমাবদ্ধ রেখেছে ঝুঁকি মোকাবেলার সকল প্রয়াস। নগর ভবন বলছে, অর্থসংকটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জরিপ বা পরীক্ষা করা যাচ্ছেনা।

দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছরে সংঘটিত ভূমিকম্পের অন্তত ২০টির উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের ভেতরে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর ১১টি হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে। বাকি ৭টি ছিল সীমান্ত এলাকাসহ আশপাশের দেশগুলোতে। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিষয়টি মোটেও হেলাফেলার নয়। কার্যকর ভূমিকা না নিলে তুরস্ক সিরিয়ার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে সিলেট অঞ্চলের।  

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, সিলেটের প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। কিছু ভবন তারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিতও করেছিলো। তবে এগুলো শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেনি তারা। ২০২১ ও ২২ সালে কয়েকদফা ভূমিকম্পের পর ঝুঁকি মোকাবেলায় কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে ২০২১ সালের মে মাসে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া সিলেটের ৬টি বিপণিবিতান বন্ধ করে দিয়েছিলো সিলেট সিটি কপোর্রেশন (সিসিক)। উল্টো কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের খুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানগুলো।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানান, ২০২১ সালের মে ও জুনে পরপর ছয় দফা ভূমিকম্পের পর বড় ভূমিকম্পে ক্ষতি কমিয়ে আনতে নগরীর সব বহুতল ভবনের ভূমিকম্প সহনীয়তা পরীক্ষা ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। ওই সময় বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকার কিছু ভবন পরীক্ষা করানো হয়। পরবর্তীতে আর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি বলেন, সিলেট নগরীর ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভবনই ভূমিকম্পের কথা চিন্তা না করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ৮০ শতাংশ বহুতল ভবন ভেঙে পড়তে পারে। 

ড. জহির বিন আলম বলেন, সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যে ভেঙে ফেলতে হবে তা নয়- ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙে না ফেলে রেক্টোফিটিংও করা যেতে পারে। সাপোর্টিং পাওয়ার দিয়ে ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষার পর ২০২১ সালের ৩০ মে নগরের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা প্রকাশ করে সিসিক। ওইদিনই নগরের সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, সমবায় মার্কেট, মিতালী ম্যানসন ও রাজা ম্যানসন নামের ৭টি বিপণিবিতানকে ১০ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ী আন্দোলনের ঘোষণা দেন। কেউ কেউ আবার আদালতেও চলে যান। নগরবাসী হিসেবে যে সচেতন ভূমিকা পালন করার কথা, সেটিও করছেন না।

নগরীর ৪২ হাজার ভবনে ভূমিকম্পের সহনীয়তা নিয়ে প্রকৌশলগত মূল্যায়নের উদ্যোগ প্রসঙ্গে নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই খাতে এত বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করার মতো তহবিল নেই। চারতলা একটি ভবন মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে নগরীর ৪০ থেকে ৪২ হাজার ভবন পরীক্ষা করাতে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ভবন পরীক্ষার টাকা সংশ্লিষ্ট ভবন মালিকদেরই দেওয়ার কথা। কিন্তু কেউই টাকা দিতে রাজি হচ্ছে না। এরজন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি।
 
অপরদিকে ২০২১ সালে নগরীর জিন্দাবাজারস্থ রাজা ম্যানসন মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর মার্কেটটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। 

ওই মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক এর দাবি, অনেকটা অনুমান করে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছিলো। তবে পরে বিভিন্ন জরিপ ও পরীক্ষা করে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ভবনটি রেক্টোফিটিং করে এর স্থায়িত্ব বাড়ানো যাবে। সয়েল টেস্টের পরীক্ষাও মার্কেটের অনুকূলে। ফলে সংস্কার করে আমরা মার্কেটটি খুলেছি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঞা বলেন, সিলেটের অলিগলির রাস্তাও সরু। ফলে আমাদের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। গত বুধবার নগরীর গোলাপবাগে একটি বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। শুধু রাস্তা সরু থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়েও ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। 

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে এ নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2