avertisements 2

ভর্তি না হয়েই ৩ লাখ টাকায় মেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ মে,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৪৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে সার্টিফিকেট পেতে ন্যূনতম খরচ আট থেকে ১০ লাখ টাকা। অথচ ভর্তি না হয়ে এবং পড়ালেখা ছাড়ায় এমন সার্টিফিকেট মিলছে মাত্র ৩ লাখ টাকায়। যা দেখতে আসল সার্টিফিকেটের মতোই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওয়েবসাইটেও যার তথ্য পাওয়া যায়। এমন জাল সার্টিফিকেট বা ভুয়া সনদপত্র চক্রের পেছনে রয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। ভর্তি এবং লেখাপড়া ছাড়াই জাল সার্টিফিকেট দিতে তিন লাখ টাকা করে নিলেও এটা বানাতে খরচ হয় মাত্র একশ থেকে দেড়শ টাকা।

শুক্রবার (৫ মে) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর লালবাগে অভিযান চালিয়ে ভুয়া সনদপত্র তৈরি চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। গ্রেফতাররা হলেন- প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতু, প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপু।

ডিবি বলছে, চক্রের হোতা প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান। তিনি বিদেশে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন। দেশে ফিরে শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন নকল সার্টিফিকেট তৈরিতে। জিয়া মূলত একজন সহযোগীকে দিয়ে এই কাজ করাতেন। তার নাম ইয়াসিন। আর তাকে এই কাজে সহায়তা করতেন দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ। তারা এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের কাছে এসব জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে এই সার্টিফিকেট তৈরি হতো। অর্থের বিনিময়ে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়র সার্টিফিকেট তৈরি করতেন চক্রের সদস্যরা। অভিযুক্তরা আগেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও তারা ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির কাজ শুরু করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তা এবং এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চক্রের সদস্যরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট তৈরি করে বিক্রি করতেন।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলন, রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে গ্রেফতার করা হয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের একাডেমিক অনেক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ইনভেলপ ও নগদ টাকা।

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে নীরবে বিপুল টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন চলমান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন তারা। পাশাপাশি বিভিন্ন বোর্ডের সেকেন্ডারি (এসএসসি) ও হায়ার সেকেন্ডারি (এইচএসসি) পরীক্ষার মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন।

ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল সার্টিফিকেট বিক্রি করা হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। তারা সার্টিফিকেট, মার্কশিট, ট্রান্সক্রিপ্ট ও টেস্টিমোনিয়াল বানিয়ে দেন। যাতে যারা সার্টিফিকেট কেনেন তারা দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন।

এসব জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিটগুলো বোর্ড অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা মূল কাগজ দিয়েই তৈরি করা হতো। এমনকি সেগুলোকে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হতো। যেন পরবর্তীতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সেগুলোর তথ্য পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যে অনেকদিন ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অপরাধীদের শনাক্তের পর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে লালবাগ থানার বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মিরি গলির একটি বাসায় শুক্রবার সকালে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেফতার করা হয়।

নামিদামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বানানো এ ধরনের সার্টিফিকেট কয়েক হাজার জনকে বিক্রি করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবিকে জানিয়েছেন জিয়া। এ চক্রের মূলহোতা জিয়া এক সময় নীলক্ষেতে এসব কাজ করতেন। কিন্তু পরে সতর্কতার জন্য লালবাগে বাসায় এসব কাজ করেন। এজন্য তিনি স্ক্যানার, মেশিন ও প্রিন্টার বসিয়ে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে হাজার হাজার জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও টেস্টিমোনিয়াল তৈরি করে বিক্রি করেন। তবে তিনি যেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট জাল করেছেন সেগুলোর বেশ কয়েকটার অস্তিত্ব এখন নেই। আবার কোনোটা এখনো চালু আছে। এছাড়া বিভিন্ন বোর্ডের নামেও সার্টিফিকেট তৈরি করতেন জিয়া।

এই চক্রের সদস্যরা দুই ধরনের জালিয়াতি করতেন-
১. কোনো ধরনের ভেরিফিকেশন হবে না এমন সার্টিফিকেট, মার্কশিট ও টেস্টিমোনিয়াল সরবরাহ করা। এবং
২. দেশে-বিদেশে অনলাইনে ভেরিফিকেশন হবে এমন মার্কশিট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি সরবরাহ করা।

গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের এই উপ-পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা অনলাইন ভেরিফিকেশন করে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। লাখ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এসব প্রতারকের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2