ব্রিজের মুখ বন্ধ করে খালের ওপর আওয়ামী লীগ নেতার মার্কেট

ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নে সরকারি খাল দখল ও ব্রিজের মুখ বন্ধ করে গড়ে তুলেছেন দ্বিতল মার্কেট। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। গত ৫ বছর ধরে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আজম বাবলু খাল ভরাট করে সেখানে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করেছেন। মার্কেটের কারণে অস্তিত্ব হারিয়েছে খালটি। এতে খালের পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের।

রোববার (৩০ এপ্রিল) সকালে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, শিয়ালকোল ইউনিয়নের শিবনাথপুর ও কয়েলগাঁতী মৌজার বেতনালী খালের পানি প্রবাহ কয়েক বছর আগেও স্বাভাবিক ছিল। খালে মাছ ধরার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকরা এই খালের পানি কাজে লাগাতেন তাদের ফসলি জমিতেও।

এছাড়াও অতি বৃষ্টিতে স্থানীয়দের ঘর-বাড়িতে ওঠা পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ছিল এই খালটি। কিন্তু কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উপকারে আসা এই খালের দিকে নজর পড়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আজম বাবলুর। এই নেতা খালটিকে ভরাট করে মার্কেটে রূপান্তর করেছে। ভূমি অফিসকে ম্যানেজ করে বালু ফেলে খালটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এর ফলে বন্ধ হয়ে গেছে খালের পানি প্রবাহ।

এবিষয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় স্থানীয় ফসলি জমিগুলোতে পানি না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক জানান, এই খালের পানি আমাদের ফসলি জমিতে কাজে লেগেছে।

বৃষ্টির সময় বাড়ি-ঘরে ওঠা পানি এই খাল দিয়ে প্রবাহিত হত। কিন্তু প্রভাবশালী চক্রের কারণে খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আমরা একাধিকবার ভূমি অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি।

শিয়ালকোল ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারি জায়গায় মার্কেট নির্মাণের সময় ভূমি অফিস ও ইউএনও সাহেব ওই জায়গা মাপ-জরিপ করেছিলো। তখন মার্কেটটি সম্পূর্ণ সরকারি জায়গায় হচ্ছে মাপ-জরিপে সেটাই পেয়েছিলেন। পরে মার্কেট ভেঙে দেয়ার কথা বলে তারা চলে যায়। কিন্তু আজও সেই মার্কেট দৃশ্যমান রয়েছে কিভাবে আমার জানা নেই।

শিয়ালকোল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. হাসান আলী বলেন, আমি এখানে ৫ মাস ধরে এসেছি। সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট ও বাড়ি নির্মাণ করে তাহলে সেটা ভেঙে দেওয়া হবে।

সরকারি খাল ভরাটকারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আজম বাবলু জানান, আমার ৩৬ শতক জমির উপরে মার্কেট নির্মাণ করেছি। নিচ তলায় ১২টি ও দ্বিতীয় তলায় ১২ রুম তৈরি করে ভাড়া দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরে এডিপি’র ১২ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মার্কেটের নিচ নিয়ে পাইপ দিয়েছি। সেই পাইপ দিয়ে বর্তমানে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এতে কারও সমস্যা হচ্ছে না। সরকারি জায়গা দখলে মার্কেট নির্মাণ করে সেই জায়গায় এডিপি’র ১২ লক্ষ টাকা কিভাবে পেলেন এক প্রশ্নের উত্তরে বাবলু বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হলে অনেক কিছুই সম্ভব বলে ফোন কেটে দেন।

শিয়ালকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম রেজা, সরকারি জায়গা দখল করেছে কিনা আমার জানা নেই। কাগজপত্র দেখে বিষয়টি জানানো হবে। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) এস.এম রাকিবুল হাসান বলেন, সরকারি খাল দখলের বিষয়টি আমি অবগত নয়। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। খোজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশুকাতে রাব্বী জানান, খাল ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।