জাতীয় পার্টিতে দেবর ভাবির সমঝোতা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:২৪ এএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির সমঝোতা হয়েছে। গতকাল যৌথ বিবৃতিতে দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, 'জাতীয় পার্টিতে বিভক্তির প্রশ্নই ওঠে না। আমরা দু'জনই ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বদ্ধপরিকর।' জাপা সূত্রে জানা যায়, দু'পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি মধ্যস্থতায় এ সমঝোতা হয়েছে।
জি এম কাদের সমকালকে জানান, গত শনিবার তিনি বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের বাসায় যান। সেখানে ঐক্যের বিষয়ে কথা হয়। রওশন এরশাদ এতে সম্মত হন। পরদিন রোববার যৌথ বিবৃতিটি তৈরি হয়। ওই দিনই সই করেন জি এম কাদের। কিন্তু সেদিন রওশন সংসদে না আসায়, তাঁর সই নেওয়া যায়নি। সোমবার তাঁর গুলশানের বাসায় পাঠালে বিবৃতিতে সই দেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সংবিধান অনুযায়ী, অনুষ্ঠিতব্য আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে দলকে সুসংহত করার প্রত্যয় ঘোষণা করছি।' জি এম কাদের সমকালকে বলেছেন, এই বিবৃতির পর জাপায় আর কোনো সংশয় নেই।
রওশনের পক্ষ নিয়ে জাপা থেকে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁরাও দলে ফিরবেন। তবে জি এম কাদেরপন্থিদের ঘোর আপত্তি রয়েছে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে দলে ফেরানো নিয়ে। সরকারি মধ্যস্থতায় সমঝোতা করাতে রাঙ্গার 'হাত' থাকায়, তাঁকে ঠেকানো বা আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়া কঠিন হবে।
জি এম কাদের বলেছেন, রওশন এরশাদকে ব্যবহার করে কিছু মানুষ জাপাকে ভাঙতে চেয়েছিল। এই লোকজন আগে বিদিশার সঙ্গে ছিল। তাঁদের দলে ফেরানো খুব জরুরি কিছু নয়। মসিউর রহমান রাঙ্গার বিষয়ে তিনি বলেছেন, দেখা যাক। রওশনপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদকে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে বলেছেন জি এম কাদের। জাপা সূত্রের খবর, চাচা-ভাতিজার সমঝোতায় দেবর-ভাবির সমঝোতা সহজ হয়। আগামী নির্বাচনে সাদ ফের রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন, দলে তাঁকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে- ছেলের জন্য এসব সুবিধা নিশ্চিত করেই সমঝোতা করেছেন রওশন।
জাপায় দেবর-ভাবির বিরোধ কয়েক দশকের। জি এম কাদের বিএনপির সুরে কথা বলছেন- এমন কারণ দেখিয়ে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে রওশন গত ৩১ আগস্ট সম্মেলন ডাকলে জাপা ফের ভাঙনের মুখে পড়ে। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদছাড়া করার চেষ্টা করেন জি এম কাদের। ১ সেপ্টেম্বর দলের ২৬ এমপির মধ্যে ২৪ জনের সমর্থন নিয়ে স্পিকারকে চিঠি দেন। কিন্তু চার মাসে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও স্পিকারের কথায় জাপা নিশ্চিত হয়, রওশনকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদে চায় সরকার। তাঁরা ৩০ অক্টোবর সংসদ বর্জনের ঘোষণা দিলে আধা ঘণ্টার মাথায় কাউন্সিল স্থগিত করেন রওশন। সূত্র জানায়, রওশনকে থামিয়ে জাপাকে সংসদে নেয় সরকার।
তবে ৩১ অক্টোবর রওশনপন্থি নেতা জিয়াউল হক মৃধার মামলায় দলীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা পান জি এম কাদের। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে গতকাল সোমবার জেলা জজ আদালতে শুনানি হয়েছে এ মামলার। আদেশ হবে ১৫ জানুয়ারি। রওশনের সঙ্গে সমঝোতার পর নিষেধাজ্ঞা উঠবে কিনা- প্রশ্নে জি এম কাদের বলেছেন, 'এসব মামলা কিচ্ছু না। আমাকে হাইকোর্ট দেখাল আর কী।'
জাপা সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট থেকে যা চলছে, তার সবকিছু ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও, সরকারের নির্দেশনায় চলছে দুই পক্ষ। সরকার বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশনকে চাইলেও, তাঁকে একতরফা সমর্থন দেয়নি। বছরখানেক ধরে সরকারের সমালোচনায় মুখর জি এম কাদেরকে চাপে রাখলেও, 'বন্ধুত্ব' ভাঙেনি।
থাইল্যান্ডে পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফেরেন রওশন। ২৯ নভেম্বর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জি এম কাদের। ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রওশন। বৈঠকে জি এম কাদেরকেও ডেকে নেন সরকারপ্রধান। ১৪ ডিসেম্বর আকস্মিক রওশনকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন তাঁর অনুসারীরা। কিন্তু পৌনে এক ঘণ্টার মাথায় এ ঘোষণা স্থগিত হয়। জি এম কাদেরের আমন্ত্রণে গত ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে ছেলে সাদসহ অংশ নিয়ে ঐক্যের ডাক দেন রওশন। এর পর থেকেই নীরব রওশনপন্থিরা।