দর্শক সারিতে বসে অঝোরে কাঁদলেন শামীম ওসমান
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:১৩ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রয়াত বড় ভাইয়ের নামে নামকরণকৃত সেতু উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দর্শক সারিতে বসা ছিলেন দুই ছোটভাই সেলিম ওসমান এমপি ও শামীম ওসমান এমপি। হঠাৎই চোখের সানগ্লাস কিছুটা তুলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছছিলেন তাদের একজন।
একপর্যায়ে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেল ‘রাজনীতির লৌহ পুরুষ’ খ্যাত দেশের অন্যতম প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে। কিছুতেই যেন তার কান্না থামার নয়।
অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখার বিশাল স্ক্রিনে সেই দৃশ্য ধরা পড়তেই পাশে বসা অতিথি আর মিডিয়া কর্মীদের ক্যামেরা মুহূর্তেই সেদিকে ঘুরে গেল। তবে কারোই বুঝতে বাকি ছিল না শামীম ওসমানের এই অঝোরে কান্নার কারণ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধনকালে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের একে-একে নাম ধরে যখন তাদের অনবদ্য অবদান স্মরণ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- তখন সেগুলো শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখের নোনাজল ঝরাচ্ছিলেন এমপি শামীম ওসমান। যিনি ওই পরিবারের সন্তান।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের নামে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের শামীম ওসমানের দাদা প্রয়াত খান সাহেব ওসমান আলী, বাবা প্রয়াত একেএম সামসুজ্জোহা ও বড়ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমানের ত্যাগ ও অবদান নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, নাসিম ওসমান তার ভাই শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাত্রির আগের দিন ১৪ আগস্ট রাতে নাসিম ওসমানের বিয়েতে গিয়েছিলেন শেখ কামাল। পরের দিন নবপরিণীতা স্ত্রীকে রেখেই হত্যার প্রতিবাদ জানাতে প্রতিরোধ যুদ্ধে গিয়েছিলে নাসিম ওসমান। তার বাবা প্রয়াত একেএম সামসুজ্জোহা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ধানমন্ডিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারকে মুক্ত করতে গিয়ে গুলি খেয়েছিলেন এবং ১৫ আগস্টের পর গ্রেফতার হয়ে মুক্ত হওয়ার পরপরই দিল্লিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেখতে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় শামীম ওসমানের দাদা প্রয়াত ওসমান আলী সম্পর্কে বলেন, ওসমান আলী সাহেব ছিলেন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। প্রধানমন্ত্রীর এসব স্মৃতিচারণ শুনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শামীম ওসমান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এমপি শামীম ওসমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জে শুধু নাসিম ওসমান সেতুই দেননি তিনি আমার দাদার নামে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম করেছেন, যা নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। তিনি আমার আব্বার নামে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রোড হবে। তার নামকরণ হবে একেএম সামসুজ্জোহা সড়ক। আমরা চাইনি তিনিই দিয়েছেন। আমার মাকে তিনি অনেক ভালোবাসতেন। তিনি ভাষাসৈনিক ছিলেন। সেই মায়ের নামে চাষাঢ়া থেকে আদমজী পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়ক হচ্ছে। এতে প্রায় ১০ থেকে ২০ লাখ লোক উপকৃত হবেন। এছাড়া যে পরিমাণ কাজ নারায়ণগঞ্জে হয়েছে আমার মনে হয় আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করতে পারব না।
প্রয়োজনে আবারো রক্ত দেওয়ার কথা তুলে ধরে শামীম ওসমান বলেন, নেত্রী বারবার একটা কথা বলেছেন, সাংগঠনিকভাবে এবং তার বিপদে নারায়ণগঞ্জের মানুষ তার পাশে ছিল। আজকে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলতে চাই, যে কয়দিন বেঁচে আছি অতীতেও যেভাবে জাতির পিতার পরিবার, নিজের দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে এ পরিবারের পাশে ছিল, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে নারায়ণগঞ্জের মানুষ এভাবেই থাকবে। অতীতেও যেমন রক্ত দিয়েছে, আগামীতেও দরকার হলে রক্ত দিয়েই জাতির পিতার কন্যার যেই স্বপ্ন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে।