avertisements 2

বিএনপি কেন আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারল না?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:২৮ পিএম, ২২ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৬:৪৭ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

বিএনপির প্রতিও জনগণের আক্ষেপের শেষ নেই। বিএনপি কেন আন্দোলনের মাধ্যমে নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারল না? তারা কেন একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠনে ব্যর্থ হলো? জনগণের সমস্যাকেন্দ্রিক আন্দোলনের পথ কেন তারা গ্রহণ করল না? ইত্যাদি ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে জনগণের। শিক্ষিত জনশ্রেণীর একটি অংশ বিশ্বাস করে, বিএনপি নেতৃত্বের কোথাও না কোথাও আপসকামিতা রয়েছে। বিশেষ করে নেতৃত্বের যে মধ্যবর্তী অংশ দীর্ঘকাল ক্ষমতায় ছিল তারা গণআন্দোলন সংগঠনে ব্যর্থ হয়েছে বলে জনগণ মনে করে। প্রবীণ নেতাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ কম নয়। যারা অতি আবেগপ্রবণ নয় তারা অবশ্য বাস্তবতার কথা বলেন। ১৯৪৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা ৯ মাস বাদে অন্য কোনো সময়ের চেয়ে এই সময়ে রক্তপাত বেশি হয়েছে। দেখামাত্র গুলির আদেশ এ দেশের ইতিহাসে আর কখনোই দেখা যায়নি।

মানববন্ধন কিংবা যেকোনো প্রতিবাদ মিছিল পুলিশের লাঠিপেটার সম্মুখীন হয়নি। আইয়ুব-ইয়াহিয়ার রাজনৈতিক সময়েও মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা এতটা সঙ্কুচিত হয়নি। এরশাদের আমলেও নির্বাচন এতটা নির্বাসিত হয়নি। নিষ্ঠুর, নিকৃষ্ট অপশাসন দ্বারা গত এক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। এ কেমন দেশ যে দেশে ধর্ষণের প্রতিবাদে আহূত মিছিলেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকেরা হামলা করে? বিগত ১২ বছরে পলিটিক্যাল রিপ্রেশন বা রাজনৈতিক নির্যাতন সীমা লঙ্ঘন করেছে। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা হয়েছে। তারা ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। এ দেশ নাকি গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছে? অথচ অনলাইনে দু’লাইন লিখলে বা সরকারি নেতা-নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। রাস্তায় নামলে ঘরে ফেরা দায় হয়ে যায়। এমনকি ঘরে ঘরে হানা দিয়ে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যায়। আর বলে তারা কেউ কিছু জানে না। এমন নির্মম, নিকৃষ্ট অবস্থার মধ্যে কী করে বেরুবে মানুষ? কী করে গোছাবে আন্দোলন? অনেকেই পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক দিনগুলোর উদাহরণ দেন। ’৬২, ’৬৬, ’৬৯ মনে করিয়ে দেন।

তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, সে দিন আর এই দিন এক নয়। সময়, সংস্কৃতি ও সঙ্কট নতুন মাত্রা অর্জন করেছে। সুতরাং নতুন করে ভাবতে হবে। ভীরুতা, কাপুরুষতা নিশ্চয়ই নেতৃত্বের লক্ষণ নয়; কিন্তু এটাও কাম্য নয় যে, অকারণেই কামানের মুখে বুক পেতে দিলেন। প্রতিটি মৃত্যুই অর্থবহ হতে হবে। সুতরাং নতুন কৌশলে, নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে বন্ধুর পথে।

দীর্ঘ সফলতা ও ব্যর্থতার পথপরিক্রমায় সম্ভবত বিএনপির আত্মসমালোচনা ও আত্মসমীক্ষার সময় এসেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি মাটি ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি কোনো ভক্তের অতিকথন নয়। বাস্তব সত্য। রাজনীতি নিরপেক্ষ কোনো গবেষককে দিয়ে যদি বাংলাদেশের মানুষের মনোসমীক্ষা করা যায় তাহলে দেখা যাবে, এ দেশের মানুষ এ দেশের জলবায়ুর মতোই ‘নাতিশীতোষ্ণ’। আর সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুন তার আল মোকাদ্দিমায় জনগণের মানস গঠনে জলবায়ুর প্রভাবের কথা বলেছেন। এ দেশের মানুষ মধ্যপন্থী। বিএনপি রাজনৈতিক আদর্শ, অর্থনৈতিক কৌশল ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সব ক্ষেত্রেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে। বিএনপি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। বিএনপি মোল্লাতন্ত্র ও নাস্তিকতন্ত্র উভয় থেকে সমদূরত্ব বজায় রাখে।

বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। বিএনপি দেশের বেশির ভাগ মধ্যবিত্তের সমর্থনপুষ্ট দল। দলটি গণতন্ত্রকে জীবনপদ্ধতি হিসেবে বেছে নিয়েছে। এটি একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলও বটে। ঘোষিত ১৯ ধারা কর্মসূচিতে একটি শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার রয়েছে। এটি একটি ভালো মানুষের দল। শহীদ জিয়াউর রহমান সে সময়ে সারা দেশ থেকে ভালো মানুষদের এনে বিএনপিতে জড়ো করেছিলেন। হয়তো অনেকে বেঁচে নেই। কিন্তু এখনো বিএনপির নেতৃত্ব অপেক্ষাকৃত সৎ ও নিষ্ঠাবান। নতুন প্রজন্মেও ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করতে পারলে বিএনপি হয়ে উঠতে পারে একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক দল।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2