জাতীয় পার্টি কি বিএনপিতে ঝুঁকছে?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৫৭ এএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বিএনপি হঠাৎ করেই আন্দোলনমুখী হয়েছে, আন্দোলনে চাঙ্গা হয়েছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে অনেকে অনেক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, বিএনপির এই অতি উৎসাহের কারণ জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের টানাপড়েনের খবর তাদের কাছে গিয়েছে এবং গতকাল বিএনপির এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন যে, সরকার এখন একলা হয়ে গেছে, সরকারের পাশে কেউ নেই।
বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন, বিশেষ করে জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়েছে বলেও ওই নেতা দাবি করেছেন।
আর এ কারণেই বিএনপি মনে করছে যে, জাতীয় পার্টিকে যদি মহাজোট থেকে আলাদা করা যায়, জাতীয় পার্টি যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ ঘটবে। বিএনপি’র অতি উৎসাহের এটি একটি বড় কারণ বলেই অনেকে মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের কথাবার্তায়ও তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির নেতারা আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুখী নয় বলেই তাদের বিভিন্ন বক্তব্যে মনে হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে বলেছেন যে, কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যদিও এর আগে জাতীয় পার্টির মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান ছিল যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে মানে না।
বরং তারা মনে করে যে সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়া উচিত। সেই অবস্থান থেকে জি এম কাদের কেন ইউটার্ন নিলেন, সেটি রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় প্রশ্ন।
এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিবও নির্বাচন, ইভিএম ইত্যাদি নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। ফলে জাতীয় পার্টির ভূমিকা ক্রমশ রহস্যময় হয়ে উঠেছে। জি এম কাদেরের সিঙ্গাপুর সফর নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম গুঞ্জন রয়েছে।
সিঙ্গাপুর হলো তারেক জিয়ার মধ্যবর্তী স্থান, যেখানে তারেক জিয়া তার নিজস্ব লোকদেরকে পাঠান এবং এই সমস্ত লোকজন বাংলাদেশ থেকে আগত রাজনৈতিক উদ্বাস্তুদের সাথে কথা বলেন, তাদেরকে বিভিন্ন রকম টোপ দেন।
জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক সিঙ্গাপুর সফরের পিছনে এরকম কোনো কারণ আছে কিনা সেটিও এখন দেখার বিষয়। এই কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, জাতীয় পার্টির মধ্যে এখন একটি মেরুকরণ ঘটছে। বিশেষ করে, জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ ভাবাপন্ন অংশ ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অংশের প্রধান নেতা ছিলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি রাজনীতিতে কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা অবলম্বন করছেন। অন্যদিকে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা গেছেন, রওশন এরশাদ অসুস্থ। ফলে আওয়ামী লীগপন্থী জাতীয় পার্টিরা একটু কোণঠাসা অবস্থায় চলে গেছেন।
আর অন্যদিকে বিএনপিপন্থী জাতীয় পার্টিরা এখন বেশ জাঁকিয়ে বসেছেন দলের ভেতর। এরশাদের মৃত্যুর পর তারা দলের ভেতর নানাভাবে সক্রিয় হচ্ছে। আর এ কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে একটি ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপির কি ধরনের যোগাযোগ হচ্ছে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে অনেকেই মনে করছেন যে। জাতীয় পার্টির নেতারা গত ৩ বছরে মন্ত্রিত্বের স্বাদ না পেয়ে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন।
আর এই কারণেই তারা এখন সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে কতটুকু ঘনিষ্ঠ হয়, সেটার উপর নির্ভর করছে রাজনীতির নতুন মেরুকরণের অনেক হিসেব নিকাশ।