avertisements 2

৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনেই হলেন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৫১ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

রাজনীতিতে এসেছেন সবে ছয় বছর। মাত্র ছয় বছরের রাজনৈতিক জীবনেই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ পেয়ে গেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল মমিন মণ্ডল। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তার থেকে ৪০ বছরের বড় রাজনীতিবিদ আশানূর বিশ্বাসকে। এ নিয়ে বেলকুচিতে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।  

দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৩ মে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থকলেও গোপন ব্যালটে ভোট না নিয়ে সমঝোতা প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হয়। সম্মেলনের কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে সভাপতি প্রার্থী হন আব্দুল মমিন মণ্ডল। এদিকে ১০ বছর ধরে নিজেকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আশানূর বিশ্বাস।  

সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের ব্যাপারে কাউন্সিলরদের মতামত নেন। এরপর আব্দুল মমিন মণ্ডলকে সভাপতি ও অপর সভাপতি প্রার্থী আশানূর বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করলেন। এসময় সাতজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী প্রতিবাদ করলেও তাদের কথায় কর্ণপাত করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধুকুরিয়া বেড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সভাপতি বলেন, আমার বাবার আমল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। জীবনে এমন সম্মেলন দেখি নাই।  

ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম ও ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, কাউন্সিলররা ভোটের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় অধিবেশনে সমঝোতার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচেনের জন্য মতামত চাইলে আমরা সেটা সমর্থন করি। কিন্তু এমনটা হবে অনেকেই বুঝতে পারেন নাই।  

বড়ধূল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানতাম, তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন হবে। যখন আমাদের হাইকমান্ডের নেতৃবৃন্দ দু’পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি করার কথা বলেন, আমরা সমর্থন করি। কিন্তু যে কমিটি করা হলো, সেটা বেমানান।  

এদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেন, সভাপতি প্রার্থীরা সমঝোতা করলেও সাতজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর দাবি ছিল নির্বাচন হোক। এখানে সমঝোতা হয়েছে সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে। সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বসেন নাই, ডাকেনও নাই। সভাপতি প্রার্থীও তিনজন ছিলেন। সমঝোতা প্রক্রিয়ায় তৃতীয় প্রার্থী ইকবাল রানাকে রাখা হয়নি। সভাপতি প্রার্থী দু’জনের মধ্যে পদগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত একতরফা ও গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমাদের প্রতারিত করা হয়েছে।  

অপর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ফজলুল হক সরকার বলেন, সমঝোতা প্রক্রিয়ায় আমরা ছিলাম না। সবাই প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু আমাদের কোনো কথা শোনা হয়নি।  

নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আশানূর বিশ্বাস বলেন, ১৯৭৪ সাল থেকে রাজনীতি করি। ২০১১ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ১৯৯৬ সালে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। বারবার ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। ২০১১ সালে দলের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু আমাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবারও প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে সভাপতির পরিবর্তে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আব্দুল মমিন মণ্ডল আমার ছেলের বয়সী, তাকে সভাপতি করা হয়েছে। এটা বেমানান হলেও মেনে নিয়েছি।  

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী দেলখোশ আলী প্রামাণিক কমিটি বেমানান হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, যিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, তিনি কীভাবে এটা মেনে নিলেন?  

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশন ছিল, সম্মেলনে সংঘর্ষ হতে পারে। তাই সভাপতি প্রার্থী আশানূর বিশ্বাস ও আব্দুল মমিন মণ্ডলকে ডেকে বললাম, সম্মেলন পিসফুল হবে। আর আলোচনা না হলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হবে। কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে সমঝোতার প্রক্রিয়ায় তিন কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলার বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত থেকে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন। ৯৯ ভাগ মানুষ এটা সমর্থন করেছেন।  

সমঝোতা প্রক্রিয়ায় সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের ডাকা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা আব্দুল মমিন মণ্ডল আর আশানূর বিশ্বাসেরই লোকজন। এ জন্যই তাদের ডাকা হয়নি।

একাধিক সূত্র জানায়, দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আব্দুল মমিন মণ্ডল। ২০১৬ সালের আগে রাজনীতির প্রথম পাঠও পড়া ছিল না তার। বাবা মণ্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের (বেলকুচি এবং চৌহালী) এমপি নির্বাচিত হন। ওই বছরের শেষ দিকে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৬ সালের শেষে ওই কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপুন বিহারী মারা গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হন আব্দুল মমিন মণ্ডল।  

এভাবেই রাজনীতি শুরু হয় শিল্পপতি আব্দুল মমিন মণ্ডলের। ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাবা আব্দুল মজিদ মণ্ডল অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন তিনি। এরপর থেকেই দল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পৈতৃক বাড়ি শাহজাদপুর উপজেলাধীন খুকনী ইউনিয়নের রুপনাই গ্রামে হলেও নির্বাচনী এলাকা বেলকুচির দৌলতপুরের ভোটার হন তিনি। বেলকুচি পৌর এলাকার শেরনগরে নির্মাণ করেন বাড়ি।

এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী মাস্টার বলেন, আব্দুল মমিন মণ্ডল আগে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপুন বিহারী দত্ত মারা যাওয়ার ৯০ দিন পর কোয়াপশন করে তাকে সাংস্কৃতিক সম্পাদক করা হয়। এরপর থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন।  

এনায়েতপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম সিরাজ বলেন, এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের বাড়ি শাহজাদপুর উপজেলাধীন এনায়েতপুর থানার রুপনাই গ্রামে। তিনি রাজনীতি করার উদ্দেশে বেলকুচিতে বাড়ি তৈরি করেছেন এবং দৌলতপুরের ভোটার হয়েছেন।  

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2