না’গঞ্জে আ’লীগের রাজনীতিতে আইভী সমর্থকদের উত্থান
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২২ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
নতুন খেলা শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে একের পর এক নাটকীয়তা। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয়ের পর এবার রাজনীতির চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে চলেছে তার ঘনিষ্ঠ জনেরা। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পর এবার শ্রমিক লীগের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতারা বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের আলোচিত নেতা শামীম ওসমানের অনুসারী ছিলেন, যারা সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে আন্তরিক ছিলেন না বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া আগামীতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিও বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। আর এসব কমিটির নিয়ন্ত্রণে আসতে যাচ্ছেন আইভীর ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা।
এ দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সাথে তার নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়ক ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৬ জানুয়ারি ভোট চলাকালে জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং এর অন্তর্গত থানা ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। জেলার আহ্বায়ক পদে ছিলেন নিজামউদ্দিন। আর মহানগরের সভাপতি জুয়েল হোসেন ও সেক্রেটারী ছিলেন সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দফতর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এবার সিটি নির্বাচনের শুরুতেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক ছিল। এক দিন সভার পর আর নেতাদের দেখা মেলেনি। অভিযোগ আছে এসব নেতা নৌকার পক্ষে নামেনি।
এর আগে ভোটের প্রচারণা চলাকালে ৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দুর নেতৃত্বে কমিটি বিলুপ্ত করার আদেশ আসে। এই দুই নেতাও শামীম ওসমানের অনুসারী ছিলেন। ছাত্রলীগ কমিটির নেতারা ভোটের প্রচার না চলাকালে আইভীর পক্ষে নামেননি বলে অভিযোগ ছিল। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সেখানেই মহানগর কমিটি বিলোপের কথা জানান।
সবশেষ গত ১৭ জানুয়ারি বিলুপ্ত করা হয়েছে শ্রমিক লীগের কমিটি। বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর কবির বকুল শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। তাকে আইভীর পক্ষে সক্রিয় দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশ করলেই কেবল তাদের দেখা গেছে সেখানে। সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না নিজে ছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করে তিনি জিতেছেন। তবে তিনিও নিজের প্রচার নিয়ে ছিলেন ব্যস্ত। আইভীর পক্ষে সেভাবে ভোট চাননি বলে অভিযোগ আছে। এর মধ্যে শহর যুবলীগের কমিটিও বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে এমন আভাস পাওয়া গেছে। যুবলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু হলেন শামীম ওসমানের লোক।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেছেন, নেত্রী বলেছেন আমার নৌকার বিরুদ্ধে যে অবস্থান নেয় আমার গণভবনের দরজা তাদের জন্য বন্ধ। আমার নৌকাকে যদি বিজয়ী করে আসতে পারে তাহলে গণভবনের দরজা খুলে দেবো এর আগে নয়।
এ দিকে নাসিকের পরাজিত মেয়রপ্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার নয়া দিগন্তকে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে মহামারী চলছে। যারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করছে তাদের বহিষ্কার চলছে; অন্য দিকে যারা আমার প্রতীক হাতির পক্ষে কাজ করছে তাদেরও বহিষ্কার চলছে। আমি মনে করি, এ মহামারী থেকে বাঁচার জন্য খতমে জালালি পড়তে হবে ত্যাগী নেতাকর্মীদের।
তিনি বলেন, আমি ভাবতেও পারিনি দলীয় মহাসচিবের কথা কচু পাতার পানিতে পরিণত হবে। কারণ মহাসচিব বলেছিলেন দলগতভাবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না; কিন্তু কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্থানীয় নির্বাচনে গেলে দলের কোনো আপত্তি থাকবে না।
কেন্দ্র থেকে বা দল থেকে তো আমাকে একবারের জন্যও বলেনি আপনি নির্বাচন কইরেন না। তাহলে দলের যারা পল্টন অফিসে বসে নারায়ণগঞ্জের নেতাদের আমার নির্বাচনে যেতে নিষেধ করেছিল তারা অবশ্যই চেয়েছিল ভোটটা নৌকায় পড়–ক। তিনি বলেন, বিএনপির যারা আমাকে নির্বাচন চলাকালে অব্যাহতি দিয়েছিল, এখন বহিষ্কার করেছে, এর অর্থ হলো তৈমূরকে ভোটটা দিও না। তারাই পল্টন অফিস থেকে আমার অনেক নেতাকে বলেছিল তৈমূরের পক্ষে যেও না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের বিএনপি তো ভোটটা দেবে, কাকে দেবে? তাদের কথায় প্রমাণ হয় ভোটটা নৌকায় যাবে এটাই চেয়েছিল তারা।
এ টি এম কামাল নয়া দিগন্তকে বলেন, দল আমার ব্যাপারে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমি জিয়ার সৈনিক। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কর্মী। দলের একজন সাধারণ সদস্য হয়ে থাকতে চাই।