তারেকের কাছে রাজনীতি মানেই ‘টাকা কামানোর মেশিন’!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫১ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
নতুন নয়, এই অভিযোগ বেশ পুরনো। আবারও এলো নতুন করে। সম্প্রতি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। ২৫ ডিসেম্বর (শনিবার) তাকে অব্যাহতি দেয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন, দলের ‘হাঁড়ির খবর’ ফাঁস করার অপরাধে তাকে এই অব্যাহতি প্রদান। কিন্তু এবার বেরিয়ে এলো থলের বিড়াল। টাকার অংকে গড়মিল হওয়ায় মঞ্জুকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তারেক, এমন মন্তব্য সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর। তার ভাষ্য, তারেককে খুশি করতে না পারাটাই কাল হয়েছে। পেতে হলো অব্যাহতি।
দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, গত ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ওই কমিটিতে মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। শুধু তাই নয়, ওই কমিটিতে তাদের কোনো অনুসারীকেও রাখা হয়নি। এ ঘটনায় নেতাকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে কমিটি ঘোষণার দুই দিন পর (১২ ডিসেম্বর) খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে বলেন, বিতর্কিত ও সুবিধাবাদী নেতৃত্ব রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরোধী। তাই এই কমিটির প্রতি খুলনা বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীর কোনো সমর্থন, আস্থা কিংবা বিশ্বাসও নেই।
এই ঘটনার বেশ ক’দিন পেরিয়ে গেলেও বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে কোন মন্তব্য আসেনি। বরং তারা ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে কমিটি পুনর্গঠনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও দূর্বৃত্তায়ন নিয়ে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ২৯ পৃষ্ঠার বিস্তারিত একটি আবেদন পত্র পাঠান। আর তখনই তারেক তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে বলেন, কাঙ্খিত অংকের টাকা মিললে পুনরায় কমিটিতে রাখা হবে। ফিরিয়ে দেয়া হবে নেতৃত্ব।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করে সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে। তিনি বলেন, দলের দুবৃত্তায়ন ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। তাই বিএনপি আজ ৪৪ বছরের রাজনীতির ‘পুরস্কার’ আমাকে দিয়েছে। দিয়েছে অব্যাহতি পত্র। আরেকটি খারাপ লাগার বিষয় হচ্ছে, অব্যাহতি পত্র দেয়ার আগে আমার সঙ্গে ‘পদ ফিরিয়ে দিতে’ দেন দরবার করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে তিনি আমার কাছে ১০ কোটি টাকা দাবি করেন। বলেন, ১০ কোটি টাকা দিলেই খুলনা আপনার। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় তারপরেই আমার কাছে আসে অব্যাহতি পত্র। আর আমি রাজি হবোই বা কেন, এত বছর রাজনীতি করেছি। দলের জন্য মাঠে থেকেছি। কি করিনি আমি! আর তার এই প্রতিদান!
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরও বলেন, তারেক থাকেন সুদূর লন্ডনে। সেখানে যাপন করেন আয়েশি জীবন। দামি অ্যাপার্টমেন্ট, বিলাসবহুল গাড়ি, নাইট ক্লাব, পার্টি, জুয়া, নারী, মদের বার-এ নিয়েই তার জীবন। তাই এসবের অর্থ যোগান দিতে তিনি পদ-কমিটি-মনোনয়ন বাণিজ্য করেন। যার কাছ থেকে যেমন পারেন, তেমন অংকের টাকা আদায় করে নেন। আসলে তার কাছে রাজনীতি মানে জনসেবা নয়, টাকা কামানোর এক অদ্বিতীয় মেশিন। আর তাই তিনি অযাচিতভাবে এমনটা করে আসছেন বহুদিন ধরে। কিন্তু ভয়ে এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ না খুললেও আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মুখ খুললাম। খুলতে বাধ্য হলাম।
এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সত্য কখনো চাপা থাকে না। তা একদিন না একদিন প্রকাশিত হয়েই যায়। মঞ্জুও যেমন করলেন। জানালেন, তারেককে খুশি করতে না পারাটাই তার অপরাধ হয়েছে। আর সে কারণেই সেই রাগ তিনি অব্যাহতি প্রদানের মাধ্যমেই দিলেন। এ থেকে আরও একবার প্রমাণিত হলো, বিএনপি দুর্নীতি-অস্বচ্ছতাকে লালন করে, প্রশ্রয় দেয়। আর সুযোগ পেলেই লুটে-পুটে খায়, অর্থ পাচার করে বিদেশে।