avertisements 2

খুলনা বিএনপির জনপ্রিয় নেতা মঞ্জুকে অব্যাহতি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৫ পিএম, ৮ মে, বুধবার,২০২৪

Text

মহানগর বিএনপি সভাপতি পদের পর এবার খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকেও নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৩৪ বছর পর খুলনা বিএনপি থেকে বাদ পড়লেন মঞ্জু। দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শেষে তার এমন পরিণতি মানতে পারছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা। খুলনার অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও বিএনপির এ সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি কর্মীদের মন্তব্য, নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও খুলনা বিএনপি যেন একই প্রতিষ্ঠান। মঞ্জুবিহীন খুলনা বিএনপি- মানতে পারছেন না তারা। তাদের দাবি, তোষামোদকারীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। এর মধ্য দিয়ে ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে খুলনায় বিএনপিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করা হলো।

এদিকে দলের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির চার নেতা। আজ রোববার তারা এ সংক্রান্ত চিঠি কেন্দ্রে পাঠাবেন বলে সমকালকে জানিয়েছেন।

তারা হলেন- মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব কায়সার, খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু, নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি এমএ তরিকুল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কামাল টিটো।

গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির ৩ সদস্যের দুটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বাদ পড়েন নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা। দলের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে ১২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে দেওয়া বক্তব্যকে ভালোভাবে নেননি হাইকমান্ড। বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষুব্ধ হন মঞ্জুর ওপর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ডিসেম্বর শোকজ করা হয় মঞ্জুকে। ১৬ ডিসেম্বর শোকজের জবাবের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মৌখিক শুনানির আবেদন জানান তিনি। কিন্তু তা না করেই গতকাল তাকে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

দলের সিনিয়র নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ১৯৮৭ সাল থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, ১৯৯২ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ সাল থেকে গত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ৩৪ বছরে খুলনা বিএনপি এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু যেন এক নামেই জড়িয়ে ছিলেন।

রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরেও সারাবছর বিভিন্ন সামাজিক কাজে দেখা যায় তাকে। এ ছাড়া ইতোপূর্বে খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য থাকার কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে। এসব কারণে তিনি বাদ পড়ায় অবাক হয়েছেন খুলনার সব শ্রেণির মানুষ।

১৯৭৭ সালে জাগদল থেকে খুলনা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইকবাল হোসেন খোকন। সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে থাকা প্রবীণ এ নেতা সমকালকে বলেন, সুসময়-দুঃসময় মাঠে-ময়দানে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকেই দেখা যায়। তাকে এভাবে বাদ দেওয়া দলের জন্য ভালো হলো না।

১৯৭৮ সালে যুবদল থেকে রাজনীতিতে রয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব কায়সার। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডে দুই দফা কাউন্সিলর তিনি। সমকালকে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপির সঙ্গে বর্তমান দলের অনেক ফারাক। মঞ্জুসহ সিনিয়র নেতাদের যেভাবে অবমূল্যায়ন করা হলো, তাতে এদের সঙ্গে থাকায় আর রুচি নেই।

খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু বলেন, তোষামোদকারীদের কারণে সিনিয়র নেতারা আজ মূল্যহীন। এভাবে একটি দল চলতে পারে না।

সার্বিক বিষয় নিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সমকালকে বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি কখনও সিদ্ধান্ত অমান্য করিনি। আমি বলেছি, বিএনপি ভালোমানুষের দল হোক; প্রকৃত ত্যাগী, পরীক্ষিতদের দিয়ে কমিটি হোক। খুলনা বিএনপির কমিটি গঠনের আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হোক। এ জন্য আমি ২৭ পাতার দীর্ঘ চিঠি দিয়েছি। তিনি বলেন, আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। খুলনায় সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের ওপর এটা বড় একটা আঘাত।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2