জাহাঙ্গীরের জায়গায় আসছেন কে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ নভেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীরকে পদটি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাঁকে বহিষ্কারের পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগে এখন একটাই আলোচনা, কে হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে কেউ বহিষ্কৃত হলে বা পদত্যাগ করলে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল হতে পারেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিগত কয়েক বছর দলীয় প্রায় সব কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি আতাউল্লাহ মণ্ডল। তবে তাঁর দাবি, তিনি সুস্থ আছেন।
এদিকে, আতাউল্লাহর বিকল্প হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জোর আলোচনায় আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি। তিনি গাজীপুর-২ আসনের প্রয়াত সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের আওয়ামী লীগে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। সেখান থেকে পুনরায় গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি বানাতে হলে মতিউর রহমান মতিকে প্রয়োজন।’
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, ‘আতাউল্লাহ মণ্ডল প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। তবে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ পেলে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হতে পারেন।’
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়ে মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘দলের প্রয়োজনে দল আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। দলের প্রয়োজনে জামায়াত-বিএনপির লাগাতার অবরোধে নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজপথে ছিলাম।’
আতাউল্লাহ মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন, ‘মহানগর কমিটি গঠনে ত্যাগী ও প্রবীণ নেতা হিসেবে আমাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের পর দল আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত আছি। শারীরিকভাবে আমি সুস্থ আছি।’
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন, এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ও গাজীপুরের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর আলম।
এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করা হয়। মেয়র সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষও হয়।
সমালোচনার মুখে এক এক ভিডিও বার্তায় জাহাঙ্গীর দাবি করেন, ফেসবুকের ভিডিওটি সুপার এডিট করে প্রচার করে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করা হচ্ছে। এ ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে তাঁকে এর জবাব দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি। অবশেষে গত শুক্রবার তাঁকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ।