দলের পদ-মেয়র দুটোই হারাচ্ছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:১১ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অপরাধকে দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের পাশাপাশি সংবিধান লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ কারণে তাকে দলের পদ তো হারাতে হবেই; উপরন্তু মেয়র পদটিও খোয়াতে হতে পারে।
মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা ডাকা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটূক্তি করার অপরাধে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে হাইকমান্ড এক ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে। গঠনতন্ত্রের বিধান অনুসরণ করে ১৯ নভেম্বরের বৈঠকে তা চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, তার অপরাধ কেবল দলীয় বিশৃঙ্খলা নয়। জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটূক্তি দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। এ কারণে দল থেকে বহিষ্কার হলে শপথ ভঙ্গের অপরাধে মেয়র পদও চলে যাবে তার।
গত সপ্তাহে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জাহাঙ্গীরের বিষয়ে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান দলের মনোনয়ন বোর্ডের দুই জন সদস্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য
বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর তা আমাদের কাছে সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার হলে স্বাভাবিকভাবেই মেয়র পদও হারাবেন জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মেয়র জাহাঙ্গীরের পাঠানো শোকজের জবাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার ‘স্পিরিট’ হলো জাহাঙ্গীর সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধ করেছেন। ওই নেতা জানান, দল থেকে করা শোকজের জবাবে জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, ‘তার কণ্ঠ নকল করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বক্তব্য জোড়া লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এই ভিডিও ভাইরাল করেছে। তবে আমি পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। পাশাপাশি আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আকুল আবেদন জানাচ্ছি’। সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের ওই বক্তব্য আমরা আমলে নিতে পারিনি।’
ওই দিন মনোনয়ন বোর্ড সভায় উপস্থিত থাকা দলের সভাপতিমণ্ডলীর অপর এক সদস্য বলেন, ভাইরাল হওয়া পুরো ভিডিও ক্লিপটি আমরা পর্যালোচনা করেছি। কিন্তু দলের কারও কাছে এটিকে অসত্য মনে হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের হাতে তার আরও অনেক অসংলগ্ন বক্তব্য ও নানা অপকর্মের তথ্য এসেছে। সেগুলো ওভারলুক করলেও ভাইরাল হওয়া বক্তব্য ওভারলুক করতে পারছি না। কারণ, এই অপরাধ বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো। ফলে ক্ষমা করার কোনও সুযোগ নেই। সভাপতিমণ্ডলীর ওই সদস্য বলেন, এই অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। ভবিষ্যতে যাতে এমন কথা বলার সাহস কেউ দেখাতে না পারে। শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, মেয়র পদ থেকেও অপসারণের ব্যাপারেও এক ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে। এজন্য আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে দলের কয়েকজন আইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহীদের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে জাহাঙ্গীর সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করা মানে শপথ ভঙ্গ করা। এর অর্থ হলো তার মেয়র পদও থাকে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আগামী ১৯ নভেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা আহ্বান করা হয়েছে জাহাঙ্গীর ইস্যুর মীমাংসা করার জন্য। বিষয়টা গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে তা ধরেই নেওয়া যায়। তিনি বলেন, ওই দিনই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে।