কওমি আলেমদের সংগে চরমোনাই পীরের 'বিরোধ' কোথায়?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৫৪ পিএম, ২১ এপ্রিল,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ফজলুল করীমের সময়ে দেশের ইসলামী দল ও কওমি আলেমদের সংগে সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছিলো তার উন্নতি ঘটাতে পারেনি বর্তমান আমির রেজাউল করীম ও তার ভাইয়েরা। দিন দিন তাদের সম্পর্কের আরো অবনতি হচ্ছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার হেফাজত নেতারা জানান, হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে যে প্রক্রিয়ায় বৈঠক হয়েছিলো সেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ডাকা হয়েছিলো। তখন হেফাজতের সংগে দেশের সিংহভাগ ইসলামী দল একাত্মতা পোষণ করলেও হেফাজতকে সমর্থন করেনি ইসলামী আন্দোলন। দলের আমির মুফতি রেজাউল করিম, তখন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদদের মত পরোক্ষভাবে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন বৈঠক বা ইস্যুতে আন্দোলনের কর্মসূচি ও নেতৃত্ব নিয়ে তাঁরা বিতর্কিত বক্তব্য দিতে থাকেন তখন।
গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় হেফাজতের সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজী গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বৃহৎ সমাবেশের ডাক দেয়। তার ঠিক কিছুদিন আগে শাপলা চত্বরে চরমোনাই একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করে, যা কওমি আলেম ও হেফাজতের সংগে তাঁদের দূরত্ব আরো বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, কওমীর মুরুব্বী আলেমরা দাবি করেন, নিজেদের হকপন্থী দাবি করলেও হকপন্থী যে কোনো আন্দোলনে চরমোনাই হট্টগোল লাগিয়ে অতিথি পাখির মতো চলে যায়।
কওমি আলেমদের অভিযোগ, চরমোনাই পীরের দল 'তাবলীগ জামায়াত' অপছন্দ করতো। যখন টঙ্গীতে তাবলীগের ইজতেমা হতো ঠিক ওই সময় তারা পরিকল্পিতভাবে বরিশালে বাৎসরিক মাহফিল করতো। যার কারণে কওমি আলেমদের একটি বড় অংশ তাঁদের পছন্দ করেন না। এসব কারণেই তাদের হেফাজতের কমিটি থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনুল হকের বড় ভাই হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, মুরুব্বীরা হেফাজতের দায়িত্বশীল বাছাই করেছেন। কাদেরকে রাখা হয়নি, কাদেরকে রাখা উচিত ছিলো এ ব্যাপারে কথা বলার এখতিয়ার আমার নেই।
ইসলামী ঐক্যজোটের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন রাজনীতির মাঠে নিজেদের আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিরোধী ‘স্বতন্ত্র’ রাজনৈতিক শক্তি দাবী করলেও ধারণা করা হয়, তারা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকে। এ কারণেই হয়তো চরমোনাই পীরপন্থীদের হেফাজতের কমিটিতে না রাখা হয় না।
চরমোনাইর দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননারও অভিযোগ রয়েছে। লালবাগে ইসলামী দলের এক সম্পাদক জানান, ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা ঠিক না। কিন্তু চরমোনাই অহরহ ধর্মকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনেন না। বরিশালে গত মেয়র নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে তাঁরা দাবি করতো, হাতপাখায় ভোট দিলে নবীকে ভোট দেয়া হবে। এটা এক ধরণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার শামিল। তাঁদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ থাকলেও সরকারের সহানুভূতি থাকায় সবসময়ই তাঁরা পার পেয়ে যান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির রেজাউল করীমকে ফোন দিলে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, এ বিষয়ে পীর সাহেব হুজুর বলতে পারবেন। আমি তাঁকে জানিয়ে দিবো।
পরে চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীমের মোবাইল ফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।