ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে সারা পৃথিবীর মঙ্গল হবে: ডা. জাফরুল্লাহ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৫৯ পিএম, ৯ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২১ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে সারা পৃথিবীর জন্য মঙ্গলকর হবে বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। করোনা সংক্রমণের ভয়বহতার প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে নাগরিক সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত আপনাকে রক্ষা করবে না। ভারত জানে কখন আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়। আপনারা সমঝোতা করেছেন, কী দিয়েছে? খালি প্লেট দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তারা যতটা সহায়তা করেছে, মুক্ত হওয়ার প্রথম মাসে সেই অর্থ তুলে নিয়েছে ভারত।
তিনি বলেন, আজ ভারতকে পরিস্কারভাবে বলে দিতে চাই, তুমি আমাকে সাহায্য করেছো সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তোমাকে আরো বেশি কৃতজ্ঞ হতে হবে, কারণ তোমাকে আমরা রক্ষা করেছি। ভারতের এখনো যে অখণ্ড আছে তার চাবিকাঠি কিন্তু আমাদের হাতে। আমরা রক্ষা করেছি বলে এখনো ভারতের অরুণাচল, মনিপুর, ত্রিপুরা, কাশ্মীর এক আছে। তবে ভারত দ্বিখণ্ডিত হলে সারা পৃথিবীর জন্য মঙ্গলকর হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, করোনা জাতীয় জীবনে ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছে। করোনায় একজন মানুষের মৃত্যু হয়, কিন্তু পুরো পরিবারকে হত্যা করছে সরকার। কারণ সরকারের অব্যবস্থপনা, সরকারের জবাবদিহিতার অভাব, কোনো ধরনের পরোয়া না করা। একটা আইসিউতে প্রতি দিনের খরচ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা। এন্টিসেপ্টিক ও ডিজইনফেক্টেডের উপরেও ট্যাক্স আছে। আমরা ১৩০০ টাকার ওষুধ ৪০০ টাকায় দিচ্ছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে একটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। এটা সরকারের ব্যর্থতা। সরকার নির্দিষ্ট বিষয়ে অজ্ঞ লোক দিয়ে সব কিছু চালাচ্ছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আইসিইউের ওষুধের দাম খুব বেশি। কাজেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারগুলো সর্বশান্ত হচ্ছে। একটি সিরিঞ্জের সুইয়ের ট্যাক্সও ৩১ শতাংশ। এই জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। সকল ওষুধের মূল্য সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে। তাহলে ওষুধের দাম বর্তমান দামের তুলনায় এক তৃতীয়াংশে নেমে আনা সম্ভব। অক্সিজেনের উপরেও ভ্যাট ১৯ শতাংশ। ভারতীয় কম্পানি সময় মত ২য় ডোজের ভ্যক্সিন পাঠাচ্ছে না। কারণ তাদেরও চাহিদা বেশি। এই জন্য সরকারকে নিজ দেশে উৎপাদনে যেতে বলেছিলাম।
ড. বিজন কুমার শীলের মতো মানুষের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে তাকে অবিলম্বে ভিসা প্রদানের জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, সবে মাত্র মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। ৫০ হাজারের মতো পরীক্ষায় পাস করেছে। তারা ১০ হাজার ভর্তি করছেন। এটা হওয়া উচিৎ ২০ হাজার। ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে মেডিক্যালে ভর্তি করানো উচিৎ। তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ফিজিক্স-ক্যামেস্টি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বোঝে কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সমাজের শ্রেণি বোঝে কিনা? সমাজের জন্য দরদ আছে কিনা? সাধারণ মানুষের জন্য তার বিবেক কাঁদে কিনা? এই সবের কোনো কিছুই পরীক্ষায় নেই। আমরা তাদের ডাক্তার বানাচ্ছি, কিন্তু মানুষ বানাচ্ছি না।
সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নূরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, রাষ্ট্র চিন্তার দিদারুল ভুঁইয়া, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু,পানি বিশেষজ্ঞ ম ইনামুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান। জুমে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ও বেলা‘র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা অ্যাডভোকেট রিজওনা হাসান।
সভাপতির বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু গণস্বাস্থ্যের কিটের জরুরি অনুমোদন দেওয়া ও কিট বিজ্ঞানী ডা. বিজন কুমার শীলের দেশে ফিরিয়ের আনার জোর দাবি জানান। করোনার এ মহামারী থেকে উত্তরণের জন্য সকলস্তরের নাগরিকদের নিয়ে সরকার জরুরি একটি সর্বদলীয় নাগরিক কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন।
এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সরকারের আগাম প্রস্তুতির অভাব ছিল শুরু থেকেই। এমন কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও প্রস্তুতির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত দেশও সফল হয়েছে। করোনার সংক্রমণকে অগ্রাধিকার দিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করলে প্রথমেই এটাকে মোকাবেলা করা সম্ভব হতো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ৪৯ দিনের একটি লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণকে একদম নিম্ন পর্যায়ে আনা যেতো। সেক্ষেত্রে সরকারকে আড়াই কোটি পরিবারের জীবিকা নিশ্চিত করতে হতো যার সামর্থ আমাদের ছিল। শুধুমাত্র ভুল পদক্ষেপের কারণে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এমনকি দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবিলার জন্যও সরকারের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। স্বাস্থ্যখাতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষকে অভুক্ত রেখে এই লকডাউন নামের তামাশা চলতে পারে না।