হেফাজত নিয়ে বিপাকে সরকার!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:০১ পিএম, ৩০ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২১ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
দীর্ঘদিন আস্থায় থাকা দেশের কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে হঠাৎ বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে সংগঠনটি বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিলে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের যে দূরত্ব বেড়েছে তা প্রকাশ্য হয়ে পড়ে।
দুই দিনের বিক্ষোভ ও একদিনের হরতাল কর্মসূচিতে হেফাজতের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের পর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যদি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করা না হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশে যখন ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টরা ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তখন মরহুম আহমদ শফির নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল হেফাজতে ইসলাম। সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে ৫ মে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল তারা।
এতে সমর্থন জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার সরকার তখন কঠোরভাবে হেফাজতে ইসলামকে দমন করেছিল। নানা বিতর্কের পর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতের মরহুম আমির আল্লামা আহমদ শফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কওমি জননী’ উপাধি দেয়া হয়।
ঢাকায় শুকরানা মাহফিলে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন তাকে এই উপাধি দেন। মুফতি রুহুল আমীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা আপনি স্বীকৃতি দিয়েছেন, সবকিছু উপেক্ষা করে। অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন, তার জবাব দিয়েছেন। ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জননীর ভূমিকা আপনি (শেখ হাসিনা) পালন করেছেন। আজ কওমি মহাসমুদ্রে আমি ঘোষণা করতে চাই, আপনি কওমি জননী। আজ থেকে আপনাকে এ উপাধি দিলাম। আপনার মাতৃত্বের ভ‚মিকা না থাকলে দেশবিরোধী, সাহাবাদের শত্রু, জামায়াত-মওদুদীবাদীরা এ দেশে (স্বীকৃতি) তা হতে দিত না।’
আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই শুকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আহমদ শফির সঙ্গে এক মঞ্চে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংবর্ধনা গ্রহণের পর সরকারের আস্থায় ফিরে হেফাজতে ইসলাম। তবে এই সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়।
এর এক গ্রুপে নেতৃত্বে ছিলেন আল্লামা আহমদ শফির ছেলে আনাস মাদানি, অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে হেফাজতের তখনকার মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী, যিনি এখন হেফাজতের আমিরের দায়িত্বে আছেন। আল্লামা আহমদ শফি হেফাজতে ইসলামের আমির থাকতে সংগঠনের তরফে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন তারই ছেলে আনাস মাদানি- এমন অভিযোগ জুনায়েদ বাবু নগরী গ্রুপের।
তবে আনাস মাদানি গ্রুপেরও অভিযোগ, সরকারের বিরোধীদের সঙ্গে যোগযোগ ছিল জুনায়েদ বাবু নগরীর গ্রুপের। আহমদ শফির মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব জুনায়েদ বাবু নগরীদের হাতে চলে গেলে সংগঠনটি বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্ষ নির্মাণের বিতর্কে জড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় হেফাজত নেতারা। যদিও এই সংগঠনের নেতারা বলেছিলেন, তাদের অবস্থান ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই সরকার বা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে নয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১২টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক এ কথা বলেছিলেন।
ভাস্কর্য ইস্যু যখন সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে তখন একাধিকবার বৈঠক করে সরকার ও হেফাজতের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা হয়। এরপর হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক সুনামগঞ্জে ওয়াজ করতে গেলে সেখানে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, মামুনুল হকের অনুসারী হেফাজতের নেতাকর্মীরা ওই হামলা করেন। তবে হেফাজত নেতারা এ দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ হামলার সঙ্গে হেফাজতের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।