avertisements 2

‘চাপ’ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২১ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

কয়েক দিন আগেও কথিত ‘তৃতীয় শক্তির’ আলোচনা বেশ জোরদার হয়েছিল জনমনে। আর ‘বিএনপি নির্বাচনেও ব্যর্থ, আন্দোলনেও ব্যর্থ’—এমন বক্তব্য ছিল সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীদের মুখে মুখে। কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদল হয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। কারণ বিএনপি একই সঙ্গে এখন চার ইস্যুতে মাঠে আছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বিএনপি কোনো ইস্যুতে ছাড় দেবে না। প্রতিটি ইস্যুতেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

এদিকে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অবস্থান থেকেও বিএনপি আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসার চিন্তা করছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের পর আগামী দিনে পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নেও দলটি একই অবস্থান নিতে পারে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। যদিও জাতীয় নির্বাচনের আগের দলীয় কর্মকৌশল এখনো ঠিক হয়নি, তবে নির্বাচন কমিশনসহ বিদ্যমান সরকারব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে শর্তহীনভাবে দলটি আগামী নির্বাচনে আর যাবে না।

নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদ এবং কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দলটির কর্মসূচি চলছে। পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচি তো রয়েছেই। শুধু মার্চ মাসেই জনসভাসহ দলটির রয়েছে ১৯ দিনের কর্মসূচি। জানা গেছে, আগামী ৮ অথবা ৯ মার্চ মুশতাক ইস্যুতে বিএনপি আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে। আজ-কালের মধ্যে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আলজাজিরায় প্রকাশিত ডকুমেন্টারি ও মুশতাক ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপের পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের অবস্থান, কূটনীতিকদের তৎপরতা ও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকা পর্যবেক্ষণে রাখছে দলটি। কারণ ওই ইস্যুতে সরকার কোনো চাপের মুখে পড়লে বিএনপি এর সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে।

জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল ও মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত রবিবার প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রদলের সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এর আগে বরিশাল ও খুলনায় অনুষ্ঠিত জনসভা ঘিরেও ওই এলাকাগুলোতে এক ধরনের উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়। বিশেষ করে, জনসভার আগের দিন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বিএনপির কর্মসূচিগুলো আলোচনায় নতুন মাত্রা পাচ্ছে। দলের ভেতরে ও বাইরে আন্দোলন নিয়ে হতাশাগ্রস্তদের মধ্যে এসব ঘটনা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কারো মতে বিএনপি চাঙ্গা হয়েছে, আবার কারো মতে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সাহসী হয়ে উঠছে। অন্যদিকে কথিত তৃতীয় শক্তির আলোচনাও আপাতত থেমে গেছে।

সর্বশেষ গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানীর বোখারা রেস্টুরেন্টে ‘নৈশ ভোজে’ মিলিত হওয়ার কথা ছিল কথিত তৃতীয় শক্তির সমর্থকদের। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড আগের দিন দলটির নেতাদের ওই অনুষ্ঠানে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাশাপাশি আলজাজিরায় প্রকাশিত ডকুমেন্টারি নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে প্রশাসন থেকেও নিষেধাজ্ঞা জারি করায় শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। এর পর থেকে তৃতীয় শক্তির আলোচনা ঢাকা পড়ে যায়। বরং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে বিএনপির সমাবেশের উদ্যোগ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি সুবর্ণ জয়ন্তীর কর্মসূচি কেন্দ্র করে ঢাকার নেতাদের চোখে পড়ার মতো তৎপরতাও দেখা যায়। সব মিলিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি এখন বেশ লাইমলাইটে মনে করা হচ্ছে।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, বিএনপি চাইলে বড় আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু তারা তো ঘুমিয়ে থাকে। যা হোক এখন তারা কিছুটা জেগেছে বলে মনে হয়। নড়াচড়া শুরু করেছে। এটা ভালো।  

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি সব সময়ই সাহসী দল। কিন্তু বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার দমন-পীড়ন চালু করে বিএনপিকে স্তব্ধ করে দিতে চায়। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত কোনো ইস্যু ছেড়ে দিইনি।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার রক্ষায় যত দিন প্রয়োজন হয়, বিএনপি রাজপথে লড়াই করে যাবে। সব ইস্যুতেই মাঠে থাকবে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার এখন নিজের ছায়া দেখলেই ভয় পায়। তাই বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনও এখন তারা সহ্য করতে পারে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপিকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনেও ব্যর্থ, আন্দোলনেও ব্যর্থ যাঁরা বলেন তাঁরা প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করে দিন না; দেখা যাবে কারা ব্যর্থ।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মতে, ‘দেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি চালু থাকলে দেশের অন্য সব শক্তির তুলনায় বিএনপিই বড় শক্তি। কিন্তু সরকার বিএনপিকে স্পেস দিচ্ছে না। কারণ তারা বিএনপিকে ভয় পায়।’

বিএনপির সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দাবি করে টুকু বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। পাশাপাশি কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু ও জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদেও আমাদের কর্মসূচি চলবে।’

দলের নির্দেশনার কথা জানতে চাইলে বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভাগের কর্মসূচির সঙ্গে ঢাকার সুবর্ণ জয়ন্তীর কর্মসূচি সমন্বয় করে পালন করা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির কর্মসূচি থাকবে।’

নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে দেশের ছয়টি মহানগরীতে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর মধ্যে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায় এবং এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রাজশাহী মহানগরীতে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2