সাংগঠনিকভাবে তরুণদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছে বিএনপি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৪৮ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৪ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি। সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই শাখার আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হচ্ছে। এতে শীর্ষ পদে থাকছের না বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের কেউই। নতুন কমিটিতে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তরুণ নেতাদের। আন্দোলনের পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই কমিটি ঘোষণা হতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও যুবদল দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব রেখে মহানগর দক্ষিণের কমিটি ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অনুমোদন হয়নি। যদিও আমানকে রাখার বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিন প্রভাবশালী সদস্য ও মহানগরের বেশির ভাগ নেতা বিরোধিতা করছেন। তারা আহ্বায়ক হিসেবে বর্তমান সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে চাইছেন।
আবার প্রয়াত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে সদস্য সচিব হিসেবে চাইছেন দলের একটি পক্ষ। শুক্রবার রাতে আমান-মজনু কমিটি স্বাক্ষর হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। শনিবার মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ায় আপাতত তা হচ্ছে না। তিনি দেশে ফিরলে ফেব্রুয়ারি মাসের যেকোনো দিন মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি একই সঙ্গে ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরে আহ্বায়ক পদে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সদস্য সচিব হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করা তাবিথ আউয়ালকে দেখা যেতে পারে। এর বাইরে উত্তরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হিসাবে আলোচনায় আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, মহানগর নেতা বজলুল বাসিত আঞ্জু, মোয়াজ্জেম হোসেন ও ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। দলে গতি আনতে মহানগরকে দুই ভাগ করা হয়। কিন্তু এর পরও আশানুরূপ দক্ষতা দেখাতে পারেননি নেতারা। সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজাতে চায় হাইকমান্ড।
এজন্য সাংগঠনিক দিকসহ সব কিছু বিবেচনা করে তরুণ ও সাবেক ছাত্রনেতাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে মহানগরের দুই শাখা। নেতৃত্ব খুঁজতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে দায়িত্বও দেওয়া হয়। তিনি উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃত্বে যারা যোগ্য তাদের একটি তালিকা পাঠান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজ থেকেও খোঁজ নিয়েছেন। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুক্রবার বলেন, সারা দেশে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। এর অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে। সাংগঠনিকভাবে ঢাকা মহানগর দলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু বিবেচনা করে সবার সমন্বয়ে কমিটি করা হবে।
মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগ করে সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দক্ষিণের সভাপতি, কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্যের আংশিক এবং উত্তরে এমএ কাইয়ুমকে সভাপতি, আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পার হওয়ায় অনেক আগেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণার সময়েই তা পূর্ণাঙ্গ করার জন্য কেন্দ্র থেকে এক মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তা মেয়াদ শেষেও সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তরে কমিটি ঘোষণার পরপরই দলীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। মালয়েশিয়া থেকে সভাপতি এমএ কাইয়ুম কিভাবে দলের নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে সে সময় বিতর্কও ওঠে। ২০১৮ সালে ঘোষিত থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে ‘অযোগ্য ও বিতর্কিতদের’ পদায়ন করায় তা নিয়ে কোন্দল আরও তীব্র আকার ধারণ করে। যদিও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কমিটিতে প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল নেই।
সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারকে দলের কর্মসূচিতে দেখা গেলেও ৭০ সদস্যের কমিটির অনেককেই পাওয়া যায় না। দক্ষিণের একাধিক নেতা জানান, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে বিপদে-আপদে নেতাকর্মীরা পাশে পেয়েছেন। তিনি দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু দলের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা তাকে সহযোগিতা করছেন না। যে কারণে ব্যর্থতার সব দায়ভার এখন তার ওপর পড়ছে।