ওবায়দুল কাদেরের ভাই সুর পাল্টালেন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:০৫ পিএম, ৬ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২০ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জার যে বক্তব্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তা ‘বিকৃত প্রচার’ বলে দাবি করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে কাদের মির্জা বলেছেন, আমার কথা নিয়ে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমি শুধুমাত্র বৃহত্তম নোয়াখালীর আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে নানা অনিয়মের কথা বলেছিলাম। জাতীয় ইস্যুতে আমি কোন বক্তব্য রাখিনি।
কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার টানা তিন বারের মেয়র। এবারও লড়ছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র পদে। ওই আসনেই ওবায়দুল কাদের সংসদ সদস্য। কাদের মির্জার কয়েকটি বক্তব্য সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় আলোচিত হয়। যেখানে তাকে বিশেষত নোয়াখালী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনায় মুখর দেখা যায়। ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায় তাকে।
একটি বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায়, বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি। তিনি বলেন, নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সত্য। কিন্তু আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও অনেক লোক জড়ো করতে পারব। না হয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেব।
কাদের মির্জা তার বক্তৃতায় বলেন, নোয়াখালীর রাজনীতি অতি কষ্টের। এই বৃহত্তর নোয়াখালীতে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, মওদুদ সাহেব (বিএনপির মওদুদ আহমদ), আবু নাছের সাহেব (জামায়াতের)—এই তিনজন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সমমর্যাদার কেউ নেই। কোনো নেতা সৃষ্টি হয়নি। এখন তো ওবায়দুল কাদের, মওদুদ আহমদের নাম বিক্রি করি। তারা তিনজন তো অসুস্থ, তারা মারা গেলে কার নাম বিক্রি করবে, কেউ নাই।
তিনি বলেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেন, তারা হচ্ছেন নেতা। টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট যারা করেন, তারা হচ্ছেন নেতা। পুলিশের, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দিয়ে যারা পাঁচ লাখ টাকা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা। গরিব পিয়নের চাকরি দিয়ে তিন লাখ টাকা যারা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা। আবদুল কাদের মির্জা বলেন, আবদুল মালেক উকিল, শহীদ উদ্দিন এস্কেন্দার ও নুরুল হক সাহেবের নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি চলছে। এই অপরাজনীতি চলতে পারে না। তাই তিনি সবাইকে অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
আরো অন্তত দুটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে কাদের মির্জার। অন্য একটি বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায়, আমি রাজনীতি করবো, প্রয়োজনে একা করবো। কোনো বেঈমান, মোনাফেক, সুবিধাবাদী এদের সাথে আমি থাকবো না। আমি অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বলবো। কিছু নেতার দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
তার এই বক্তব্য জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং তাদের জোটের নেতারা। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল, নির্বাচন কমিশনকে কোলের মধ্যে বসিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে।
মঙ্গলবার কুষ্টিয়ায় এক অনুষ্ঠানে হানিফ বলেন, এলাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে তিনি (আব্দুল কাদের) ক্ষোভের সঙ্গে এই কথা বলেছেন। তার এ বক্তব্য সামগ্রিক চিত্র নয়। রাজনীতির মাঠের চিত্রও এমন নয়। কোনো এমপিই পালাবে না।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান কাদের মির্জা। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন সভায় দেওয়া আমার বক্তব্য নিয়ে একটি কুচক্রিমহল নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। নির্বাচন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে মানুষের মাঝে।
বক্তব্যের ব্যাখ্যায় কাদের মির্জা বলেন, আমি শুধু একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, এ জন্য নানা নির্বাচনী কর্মসূচিতে আমি কথাগুলো বলছি।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, বিগত একযুগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে সে বিষয়গুলোও আমার বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলাম। বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন যারা বলেন- উমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সত্যি কথা হলো সাধারণ মানুষ বলে শেখ হাসিনা একলা কি করবেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণে বৃহত্তর নোয়াখালীতে বিএনপির দুর্গ ভেঙে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। কিন্তু কোনো কোনো গণমাধ্যমে সেগুলো বিস্তারিত উল্লেখ না করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্যের খণ্ড অংশ বিশেষ প্রকাশ করেছে। আমি শুধুমাত্র বৃহত্তর নোয়াখালীর আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে নানা অনিয়মের কথা বলেছিলাম। জাতীয় ইস্যুতে আমি কোনো বক্তব্য রাখিনি
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ সকল মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এ ছাড়াও সমুদ্র সীমানা বিজয়, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, স্থল বন্দর স্থাপন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, রেসিটেন্স বৃদ্ধি, বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি, বড় বড় শহরগুলোতে ও জেলায় ফোর লেন নির্মাণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সার্বিকভাবে জাতীয় প্রবৃত্তি বৃদ্ধি, বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ করোনাকালীন সময়ে দুযোগ মোকাবিলা করে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার মানষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসার পাশাপাশি বিবৃতিতে বলেন, জিয়াউর রহমান হাঁ-না ভোটের মাধ্যমে এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও বৃহত্তর নোয়াখালীর উন্নয়ন ও জাতীয় সারাদেশে উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
পূর্বপশ্চিমবিডি