avertisements 2

জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করছেন না প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:১৯ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে বলেও তিনি মনে করছেন।   এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কয়েকজন মন্ত্রীর প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিয়ে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যদের। 

গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগির প্রসঙ্গ ওঠে। কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী সমকালকে জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি কখন কী করে, তার ঠিক নেই। ওরা (জাতীয় পার্টি) নির্বাচনে থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। 

এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, রংপুর-১ আসনের এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। এ সময় বলা হয়, জি এম কাদেরের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেই তারা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাননি। 

মন্ত্রীদের অনুরোধ নাকচ

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানিয়েছেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলের শীর্ষ নেতা বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এমনকি কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। বেশির ভাগ আসনেই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ফলে কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা প্রতিদিনই বাড়ছে। এসব নিয়ে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

এ অবস্থায় কয়েকজন মন্ত্রী গতকাল বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এখনও নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন, তাদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এই অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। অন্যসব রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সক্রিয় থাকার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। 

বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে সরকারি দলেও। এ অবস্থায় ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আসনেই দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সমকালকে জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বেলায় আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। দলীয়ভাবে তাদের বাধা দেওয়া হবে না।

নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রমাণ করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা নিশ্চিত করেছেন। এতে ভোটকেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য দলীয়ভাবে নানা ধরনের কৌশল নেওয়া হচ্ছে। প্রার্থীসহ দলের তৃণমূল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য দলীয়ভাবে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার নিয়ে আলোচনা

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, শুধু দল মনোনীত প্রার্থীরাই নির্বাচনী পোস্টার ও ফেস্টুনে দলীয়প্রধানের ছবি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। কিন্তু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর মধ্যে যারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তারা ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নির্বাচনী পোস্টার এবং ফেস্টুনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় ঘরানার রাজনীতিতে আলোচনা রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভার অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাতে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের সুযোগ না পান– তা নিয়ে নির্দেশনা প্রয়োজন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ তাঁর ছবি ব্যবহার করলে তিনি কীভাবে বাধা দেবেন? তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সুতরাং, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2