বিএনপি রোববার থেকে ফের হার্ডলাইনে যাচ্ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:৩২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এখনই কঠোর আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না বিএনপি। তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধের পর রোববার থেকে ফের হার্ডলাইনে যাচ্ছে দলটি। মাঝে শুক্র ও শনিবার তেমন কোনো কর্মসূচি না রাখার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি ও যুগপৎ শরিকদের। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, কোনোভাবেই এই মুহূর্তে আন্দোলনের গতি কমানো যাবে না। হরতাল-অবরোধ থেকে সরে এলে সরকার নেতাকর্মীদের ওপর আরও চেপে বসবে। তারা কাউকে রেহাই দেবে না। আর মাঝারি মানের সমাবেশ কিংবা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিলে প্রশাসনের আর অনুমতি পাওয়া যাবে না। নতুন কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গত কয়েক দিনের আন্দোলনোত্তর অবস্থা পর্যালোচনা করবে। মাঠ পর্যায়ে শক্তিমত্তা আরও বাড়াবে।
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে হরতালের পর দেশজুড়ে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার। শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশি হামলায় পণ্ড করে দেওয়ার প্রতিবাদে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছিলেন। হরতালের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ মাঠ পর্যায়ের কয়েকশ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। মাঠপর্যায়ে নেতাদের খোঁজে পুলিশ বাসাবাড়িতে যাচ্ছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। নেতাকে না পেলে পরিবারের কাউকে আটক করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কৌশলে গ্রেফতার এড়িয়ে রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চান। পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের কারণে মাঠের নেতারা কেউ ঘরে থাকতে পারছেন না। তারা কোথাও একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা কিংবা প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনলাইনে সব কাজ করছেন। লন্ডন থেকে হাইকমান্ড সাংগঠনিক নেতাদের কাছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি নেতা থেকে কর্মী সমর্থক সবাইকে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। মাঠে নিষ্ক্রিয়দের বিষয়ে সতর্ক করছেন।
বিএনপির চলমান আন্দোলন নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সময়ের আলোকে বলেন, আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সরকার হার্ডলাইনে গেলে আমরা তো সফটলাইনে থাকতে পারি না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সরকারের উসকানি এবং শত চেষ্টার পরও সাধারণ মানুষ হরতাল অবরোধকে সফল করছে।
সিনিয়র নেতারা মাঠে নামছেন না কেন; জবাবে চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা জানান, তারা অনেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ। দীর্ঘদিন থেকে নানা রোগে ভুগছেন। এ জন্য চাইলেও তারা মাঠে সক্রিয় হতে পারছেন না। আড়ালে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন সময়ের আলোকে বলেন, শুক্রবার হয়তো গায়েবানা জানাজা হতে পারে। শনিবার বিরতি দিয়ে টানা জোরালো কর্মসূচি আসবে। নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে, তাদের ওঠানো যাবে না।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো পিকেটিং করছি। এখন পর্যন্ত আন্দোলনের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। মাঠে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। কারণ এত গ্রেফতার, হয়রানি অভিযান-কল্পনার বাইরে। তবে নীরবে মানুষ অবরোধ পালন করছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি নেই বললেই চলে। তারা ব্যাপকভাবে সমর্থন দিচ্ছে। বড় কোনো সংঘর্ষ নেই।
গাইবান্ধা জেলার সভাপতি মইনুল হাসান সাদিকের মতে, আন্দোলনে তৃণমূল বেশ সক্রিয় আছে। ঢাকায় আরও ব্যাপকভাবে নামতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এবার হাইকমান্ড সবার তৎপরতা দেখছেন। মাঠের আন্দোলনে কারও ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। তৃণমূল কর্মীরা শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির একজন নেতা বলেন, আমরা বিভিন্ন টিম ভাগ করে মাঠে আছি। কৌশলগত কারণে সবাই এক সঙ্গে নামছি না। প্রত্যেক টিমের সমন্বয়ক দায়িত্ব ভাগ করে দিচ্ছেন। সবকিছু অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আমাদের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার করলেও নেতৃত্বে সংকট হবে না। দ্বিতীয় সারি থেকে প্রয়োজনে নেতৃত্ব দেওয়া হবে।
জোরদার কূটনৈতিক তৎপরতা
আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। অনানুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। তারা সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে দমনপীড়নে পুলিশকে কিছুটা নিবৃত করতে কাজ করছে দলটির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ড. মঈন খান বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। ইতিমধ্যে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার ফিরিস্তি তুলে ধরে তারা বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে। বিদেশিদের সঙ্গে গুলশানে দুটি বৈঠকও করেছে বিএনপি।
নীরব আতঙ্ক নয়াপল্টনে
অন্যদিকে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের চারদিন পেরিয়ে গেলেও নয়াপল্টন এলাকায় নীরব আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতে দিচ্ছে না পুলিশ। দোকানপাঠ-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলছে না। কার্যত অবরুদ্ধ বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। কার্যালয়টি ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ। মূল ফটকে ঝুলছে তালা। ফটকের সামনের রাস্তায় পুলিশের সশস্ত্র অবস্থান রয়েছে। কার্যালয়ের দুই প্রান্ত ফকিরাপুল মোড় এবং নাইটিংগেল মোড়েও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। অবরোধের সমর্থনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের কেউ জমায়েত হচ্ছেন না। গত তিন দিনে কার্যালয়ের আশপাশ থেকে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।