avertisements 2

দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ মার্চ,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫৮ এএম, ৪ মে,শনিবার,২০২৪

Text

বিভাগীয় গণসমাবেশ, গণবিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি, পদযাত্রা এবং শেষমেশ মানববন্ধন। বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের গত ছয় মাসের ক্রমধারা এটি। যেন দৌড়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল বিএনপি। মাঝখানে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছিল আলোচিত ১০ ডিসেম্বর।

গত বছরের মাঝামাঝি আন্দোলন শুরু করেছিল বিএনপি। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের আগে দলের মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার গতি বদলে দেয় সেই আন্দোলনের। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে গণবিক্ষোভের মতো কর্মসূচির ঘোষণা বাস্তবে আন্দোলনের রাশ টেনে ধরে। আজ সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা মানববন্ধন করবে দলটি।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক বছর পর নেতাকর্মীদের বিপুল অংশগ্রহণে সরকারবিরোধী আন্দোলন দ্রুত একটা পর্যায়ে পৌঁছে যায়। উত্তপ্ত ওই সময়টি সরকার পতন আন্দোলনে যাওয়ার উপযুক্ত সময় ছিল বলে মনে করেন তাঁরা। পল্টন থানা বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন মনে করেন, সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেনি তাঁর দল। বড় আন্দোলনের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। তবে বিএনপি এখনো শক্ত আন্দোলনের সুযোগ খুঁজছে বলে বিশ্বস করতে চান তিনি।

চলমান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, ‘আমরা ২০১৪-১৫ সালের মতো হঠকারী আন্দোলন করতে চাই না। আমাদের হাতে সময় আছে। বড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করার জন্য সারা দেশে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। কোনো না কোনো পর্যায়ে আন্দোলন দানা বাঁধবে।’

গত ৪ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে এক সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘এবার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আমরা পদযাত্রা শুরু করব। ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা, মহানগর এবং এরপর ঢাকামুখী লং মার্চের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতার মসনদ জনগণ দখল করে নেবে।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রের বিশ্লেষণ, মার্চে সরকারবিরোধী শক্ত আন্দোলনে যাওয়ার ভাবনা থেকে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব। কিন্তু গত কয়েক মাস দেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচি দেখে মনে হচ্ছে ‘শক্ত আন্দোলনের প্রেক্ষাপট’ তৈরি করা দিন দিন শক্ত হয়ে উঠছে। ফলে আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে হচ্ছে বিএনপিকে। 

সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে নেতারা বলেছেন, বড় কর্মসূচি দেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। এখনই শক্ত কর্মসূচিতে গেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না। এর পরই মূলত বড় আন্দোলনের পরিকল্পনা থেকে আপাতত সরে আসেন দলের নীতিনির্ধারকরা।  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছি। ইউনিয়ন ও থানায় কর্মসূচি দিয়েছি। আগের কর্মসূচিগুলোতে জনগণের ব্যাপক সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছিল। মানববন্ধনে জনসম্পৃক্ততা আরো বাড়বে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিচ্ছি। এতে ফল পেয়েছি। আমাদের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি গণজোয়ার সৃষ্টি হবে এবং সরকারকে বিদায় নিতে হবে।’

উত্তাল আন্দোলন যেভাবে মিইয়ে গেল : গত বছরের মাঝামাঝিতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। ওই সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে কয়েক জায়গায় পুলিশের গুলিতে দলের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মী নিহত হন। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির পাশাপাশি নেতাদের হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশের ডাক দেয়। নানা বাধা ডিঙিয়ে কর্মসূচির দুই দিন আগ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অংশ নিতে শুরু করেন। এক দিনের কর্মসূচি তিন দিনের কর্মসূচিতে রূপ নেয়। বাধা ডিঙিয়ে সমাবেশ সফল হওয়ায় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন।

দলের নেতাকর্মীদের মতে, ক্ষমতাসীনদের নানা বাধা অতিক্রম করে বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গণসমাবেশ সফল করায় আন্দোলনের পারদ ভিন্ন উচ্চতায় উঠেছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সাদামাটা কর্মসূচি দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। ঢাকার গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণার পর ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের পথ’ সেখানেই থেমে যায় বলে মনে করেন কর্মীরা।

গণমিছিল থেকে মানববন্ধনে বিএনপি : গত ২৪ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ছিল। সেদিন থেকে প্রায় আড়াই মাস ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরপর ১১ জানুয়ারি অবস্থান কর্মসূচি, ১৬ জানুয়ারি সমাবেশ, ২৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’ বিক্ষোভ সমাবেশ, ৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় সমাবেশ হয়।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2