খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগের কেন দরকার
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:১৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। শুরু থেকেই বিএনপি দাবি করে আসছে, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। মামলায় দুই নেত্রীকেই জেলে যেতে হয়েছিল। সেই সময়ে আলোচিত ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ কার্যকর করতেই এমনটা হয়েছিল বলে প্রচার রয়েছে। এর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগের দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা একে একে সব মামলা থেকেই অব্যাহতি পেয়েছেন। বিপরীতে, সেই সময়ে করা মামলার জের টেনে খালেদা জিয়াকে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে। নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির পর থেকে তিনি গুলশানের বাসাতেই রয়েছেন।
করোনা মহামারিতে দীর্ঘমেয়াদে খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি থেকে কয়েক দফা চিকিৎসা নিয়েছেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া বাসা থেকে বের হননি। দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গেও দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে এই সময়ে। দলের মহাসচিব এবং শীর্ষ পর্যায়ের দু’একজন ছাড়া কারও সঙ্গে সাক্ষাতের খবরও জানা যায়নি। পুরোটা সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে বাসাতেই ছিলেন। এই সময়ে বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করেছে। সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। দেশের রাজনীতিতে মাঠ দখলে রাখা নিয়ে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোথাও খালেদা জিয়াকে দেখা যায়নি।
সম্প্রতি হঠাৎ আইনমন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সরকারের আরও কয়েকজন মন্ত্রী তাঁর রাজনীতি করা নিয়ে প্রকাশ্যে মতামত জানিয়েছে।
তাতে দেখা গেছে, দল ও সরকারে থাকা শীর্ষ নেতারা কেউ বলছেন– খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন; কেউ বলছেন– আইন অনুযায়ী পারবেন না। এখন প্রশ্ন– মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারা খালেদা জিয়াকে কেন সরকারের হঠাৎ প্রয়োজন হলো? কেন সরকারের মন্ত্রীরা খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ বা অধিকারের আইনি ব্যাখ্যা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সোচ্চার হলেন?
আমরা জানি, রাষ্ট্র ও সরকারের অনেক ক্ষমতা। ক্ষমতাসীন দল রাজনৈতিকভাবে কিছু একটা করতে চেয়েছে, কিন্তু আইনি বাধায় তা করতে পারেনি– এমন নজির বাংলাদেশে অতীতে দেখা যায়নি। তাই খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে শুধু আইনের দোহাই যে টিকছে না– সে কথা স্পষ্টভাবে বলা যায়।
সবকিছু ঠিক থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে। যেদিনই হোক, সেই নির্বাচনটি যে বর্তমান সরকার অতীতের মতো করতে পারবে না–এটা অনেকটা নিশ্চিত। সে জন্যই কি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার ‘খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অধিকার’ নিয়ে নতুন কৌশল দাঁড় করিয়েছে?
ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা সভা-সমাবেশে বলেছেন, আগামী নির্বাচন ‘ভালো’ করতে চান। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা কি বিগত দুটি নির্বাচন ‘ভালো’ না হওয়ার কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন? যাহোক, সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে ‘পোষা’ বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে হাতে রাখাই যথেষ্ট বলে মনে হচ্ছে না। তাই খালেদা জিয়াকে ভোটের ময়দানে যে কোনো প্রক্রিয়ায় হাজির করতে চাওয়া ক্ষমতাসীন দলের আকাঙ্ক্ষা হতে পারে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল চাইছে এতে খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করতে। যাতে আগামী নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী বিদেশি মিশন ও দাতা সংস্থাগুলোকে সরকার বলতে পারে– দেখ, আমরা বিরোধীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করছি; নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করছি; সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষের প্রধান নেতাকে রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছি।
এ ছাড়া বিএনপি যেখানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে– এমন বার্তা ছড়িয়ে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি টানা ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীর মাঝেও বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ পাওয়া যাবে।
লক্ষণীয়, সরকার যতই নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করুক না কেন, বাস্তব পরিস্থিতি– পিঠ ঢাকতে পেট উদাম! ক্ষমতাসীন দলের মারমুখী নেতাকর্মী ও পুলিশি বাধার কারণে বিএনপি নেতাকর্মী যেখানে সাধারণ কর্মসূচিই পালন করতে পারছে না, সেখানে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কতটা সম্ভব, বলাই বাহুল্য। ফলে দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে কার্যত গৃহবন্দি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অধিকারের বিতর্ক মূলত আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার মরিয়া চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।