avertisements 2

পচা শামুকে পা না কাটলে উকিলের পথ পরিস্কার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ ফেব্রুয়ারী, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:৫৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

শুরু থেকেই উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া নানামুখী আলোচনায়। ৪৩ বছর বিএনপির রাজনীতি করা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের পাঁচবারের এই এমপিকে উপনির্বাচনে জেতাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা ছাড়াও আচরণবিধি ভেঙে আওয়ামী লীগের এমপিরাও নেমেছেন তাঁর পক্ষে। উকিলকে জেতাতেই যেন সব আয়োজন। পচা শামুকে পা না কাটলে উকিল সাত্তারের আবার এমপি হওয়া সময়ের ব্যাপার।

উকিল সাত্তারের জয় ঠেকাতে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা একাট্টা হয়ে দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভোট দিতে পারেন- ভোটের আগের দিন গতকাল উকিল সাত্তারের নিজ এলাকা সরাইলের অরুয়াইল ও পাকশিমুল ঘুরে এমনই বার্তা মিলল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া উকিল সাত্তারকে জেতাতে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হন বিএনপি থেকে বহিস্কার হওয়া আবু আসিফ আহমেদ। গত শুক্রবার থেকে তিনি লাপাত্তা। আসিফ ভোটে নেই- ধরে নিয়ে উকিল সাত্তারের এমপি হওয়া শতভাগ নিশ্চিত মনে করা হচ্ছিল। তবে একতরফা এ নির্বাচনে কিছুটা হলেও উত্তাপের আঁচ এসেছে আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুন্নেসার ঘোষণায়। তিনি গতকাল জানিয়েছেন, খোঁজ না মিললেও তাঁর স্বামী নির্বাচনে আছেন। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদনও করেছেন তিনি।

ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি। উকিল সাত্তারের বাড়ি সরাইলে। আঞ্চলিকতার কারণে আশুগঞ্জে আসিফ আহমেদের প্রতি সহানুভূতি দেখা যাচ্ছে। মেহেরুন্নেসার দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাঁর স্বামীর জয় নিশ্চিত।

তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কা কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে। উকিল সাত্তারের পক্ষে আদাজল খেয়ে নামা আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনেরও ধারণা, ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। উপস্থিতি বাড়াতে আওয়ামী লীগ নেতারা গতকালও গণসংযোগ করেন।

বিএনপির এমপিরা গত ডিসেম্বরে দলের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন। উকিল সাত্তার পদত্যাগী সাত এমপির একজন। তবে ২০ দিন পার না হতেই তিনি উপনির্বাচনে অংশ নিতে মাঠে নামেন। রাজনৈতিক সূত্রের ভাষ্য, বিএনপির পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উকিল সাত্তারকে নির্বাচনে এনেছে সরকার। তাঁকে বিজয়ী করতে উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। দলটির তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও সরে যান। জাপার দুইবারের এমপি জিয়াউল হক মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও পরে ভোটের মঞ্চ থেকে নেমে যান। অভিযোগ রয়েছে, সবাইকে 'চাপ' দিয়ে সরানো হয়েছে।

তিতাস নদীর তীরে অরুয়াইল বাজার। পাশেই আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ডিগ্রি কলেজে। বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উকিল সাত্তার। বাজার থেকে নদী পেরোলে উকিল সাত্তারের পৈতৃক বাড়ি। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি যতবার নির্বাচন করেছেন, ততবারই এই এলাকায় একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন।

বাজারের স্পিডবোট ঘাটের এক ব্যবসায়ী এদিক-ওদিক তাকিয়ে গলা নামিয়ে বললেন, 'এবার হিসাব বদলে যেতে পারে।' তাঁর কাছে জানতে চাইলাম- কেন? নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, উকিল সাত্তারের কারণে অরুয়াইল বিএনপি অধ্যুষিত। তিনি ভূঁইয়া পরিবারের সন্তান। পারিবারিক জমি বেচে রাজনীতি করেছেন। নিজে সহায়-সম্পদ করেননি। তবে শেষ বয়সে ছেলের কথায় বিএনপির বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভালো করেননি। স্থানীয় মানুষ ক্ষুুব্ধ। তারা শিক্ষা দেবে উকিল সাত্তারকে। বিএনপির ভোট লাঙ্গলে চলে যাবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুল হামিদ ভাসানীর বাড়িও সরাইলে। তবে তিনি দুর্বল প্রার্থী। জাতীয় পার্টি শক্ত প্রার্থী দিলে উকিল সাত্তারের জেতা কঠিন হতো।

তবে সবার একই অভিমত নয়। নিজেকে বিএনপির কর্মী পরিচয় দিয়ে অরুয়াইল বাজারের আরেক ব্যবসায়ী সলিমুল ইসলাম বলেন, 'কলা (উকিল সাত্তারের প্রতীক কলার ছড়ি) ছাড়া কারও খাওয়া এইনে। উকিল সাত্তার এলাকার মানুষ। রাগ-কষ্ট যত যা-ই থাক; ভোট তারেই দিব।'

নদীর ঘাটে এক গদিতে গতকাল বিকেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘরোয়া সভা চলছিল। আলোচনার বিষয়বস্তু- আজ বুধবারের ভোটে কে কীভাবে উকিল সাত্তারের পক্ষে কেন্দ্রে কাজ করবেন। সেদিকে দেখিয়ে সলিমুল ইসলাম বলেন, 'দেখছেন, উকিল সাত্তারের জাদু? কয়দিন আগেও এই নেতারা ছিলেন উকিল সাত্তারের বিপক্ষে। এখন তাঁদের সবাইকে পেছনে ঘুরাচ্ছেন উকিল সাত্তার।'

অরুয়াইল বাজার থেকে সরাইলের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। সড়কটির পুনর্নির্মাণ চলছে। স্থানীয়রা জানালেন, ভয়ংকর খারাপ অবস্থা ছিল রাস্তাটির। মাসখানেক আগে এক নারীর সন্তান প্রসব হয় সিএনজি অটোরিকশায়। রাস্তার বেহাল দশায় হাসপাতালে যেতে পারেননি। উকিল সাত্তার চার বছরে এলাকায় কাজ করেননি। ভোটের আগে এসে রাস্তা ঠিক করা হচ্ছে।

উকিল সাত্তার বিএনপির বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাঁকে আটকাতে দলটির কর্মী-সমর্থক জাতীয় পার্টিকে ভোট দিতে পারে- এমন গুঞ্জন চলছে কয়েক দিন ধরে। একই কথা জানান সরাইল থেকে অরুয়াইল যাওয়ার ভাড়া করা অটোরিকশার চালক। রুবেল নামে এ যুবক জানান, লাঙ্গলের পোস্টার কম, কিন্তু ভোট আছে। বিএনপির লোকজন দেবে।

তবে লাঙ্গলের অবস্থা দুর্বল। দলটির প্রার্থী ১৩২ কেন্দ্রের মাত্র ৩০টিতে দেওয়ার মতো এজেন্ট পেয়েছেন। আসিফ আহমেদের স্ত্রীর অভিযোগ, ভয়ে কেউ তাঁর স্বামীর এজেন্ট হতে চাইছে না। আসিফ আহমেদের কর্মী ও এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ নাকচ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহগীর আলম। তিনি বলেন, সব প্রার্থীর এজেন্টদের কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন।

রুবেলের ভাষ্য, উকিল সাত্তারকে এমপি বানাতে যেসব অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাতে ভোটাররা ভোট দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। উকিল সাত্তারেরও জনসমর্থন কমেছে। তবু তিনি জিতবেন। সবাই জানে- উকিল সাত্তারকে জেতাতেই নির্বাচন হচ্ছে। একই কথা বলছেন আরও অনেকে।

ভোটের উত্তাপ না থাকলেও গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনের কর্মীদের ছিল ব্যাপক তৎপরতা। কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে গেছে ভোটের সরঞ্জাম। কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৩। পুলিশ ছাড়াও নির্বাচনের নিরাপত্তায় থাকছে চার প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৯টি টিম। ১৭টি ইউনিয়নে দায়িত্ব পালন করবেন ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2