বাগেরহাটে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব কাক পাখির!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৩:২০ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
তারেক বিন সুলতান ও তার বন্ধু কাক ছবি সংগৃহীত
আধুনিক পৃথিবীতে আস্থা বা বিশ্বাসের জায়গা থেকে প্রকৃত বন্ধু হয়ে ওঠা কঠিন। খুব সহজেই মানুষ বিশ্বাস হারিয়ে তার প্রিয় মানুষটিকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু পশু পাখি একবার কাউকে বিশ্বাস করলে সহজে তাকে ছেড়ে যায়না। বাগেরহাটের মোংলায় এমনই এক ঘটনার জন্ম দিয়ে সাড়া ফেলেছে একটি কাক পাখি। তারেক বিন সুলতান নামে এক যুবক বছর খানেক আগে আহত অবস্থায় একটি কাক পাখিকে বাসায় নিয়ে আসেন। সুস্থ হওয়ার পর সেই কাক বন্ধু হয়ে তারেকের বাসায় থেকে যায়।
জানা যায়, কালো কাক পাখি আলাদা আলাদা মানুষের মুখের আকৃতি মনে রাখতে পারে। এছাড়া অন্যান্য প্রাণীদের অনুকরণ করার পাশাপাশি কাক মানুষকে অনুকরণ করতেও পারে। কাক সাধারণত সারা জীবন একই সঙ্গীর সাথে থাকে। তবে খুব সহজে পোষ না মানা কাক পাখিই কিনা এবার মানুষের বন্ধু হয়ে গেলো।
মোংলা পৌর শহরের জয়বাংলা সড়কের বাসিন্দা মোঃ সুলতানের ছেলে তারেক বিন সুলতান প্রায় এক বছর আগে একটি কাকের বচ্চা পাখিকে তাদের গাছের নিচে দেখতে পান। সেটির কাছে গিয়ে তিনি দেখেন বাচ্চা কাক পাখিটি খুবই আহত অবস্থায় পড়ে আছে। এরপর বাসায় নিয়ে এসে চিকিৎসা দেন তিনি। প্রায় ১৫ দিনের মধ্যে পাখিটি সুস্থ হয়ে ওঠে।
তবে তারেক ভেবেছিলেন সুস্থ হওয়ার পর পাখিটি তার আপন ঠিকানায় ফিরে যাবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো উল্টো। পাখিটির সঙ্গে তারেকের ভাল বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যে কারণে প্রায় এক বছর হলেও কাক পাখিটি তারেককে ছেড়ে যায়নি।
তারেক বিন সুলতান এসব কথা জানিয়ে এই প্রতিবেদককে আরও বলেন, ‘মানবিক দায়িত্ব থেকে আহত কাক পাখিটিকে চিকিৎসা দেই। তবে বন্ধুত্বের ব্যাপারে ভাবিনি। কাক পাখিটি প্রায় এক বছর ধরে আমার সঙ্গেই আছে। আমি তাকে সিদ্ধ ডিম, মাছ ও মাংস খেতে দেই। সারাদিন আকাশে ঘুরে বেড়িয়ে ও আবার আমার বাসায় চলে আসে’।
কাক পাখির সঙ্গে তারেকের বন্ধুত্বের ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ভিডিওতে দেখা যায় তারেকের মুখে কোন খাবার নিয়ে কাকটিকে খেতে দিলে সে তার মুখ থেকে সেই খাবারও খাচ্ছে। এমনকি তারেক কোথাও গেলে কাক পাখিটি তাকে অনুসরণ করে।
তারেক বলেন, তিনি পাখিটিকে আটকে রাখতে চাননা। বরং উড়ে যাওয়ার জন্য পাখিটিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন তিনি। সে বিশ্বাস করেন স্বাধীনতার মধ্যে এই প্রকৃত বন্ধুত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘যে কোন বন্যপ্রানীরা সবসময় তার নিরাপদ সেফটি এবং খাদ্য চায়। এটা যদি সঠিকভাবে করা হয় তাহলে তারা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়’। এছাড়া কাক সবসময় পুরোপুরি বিশ্বস্ত হয়না, তারা কখনও কখনও অন্যান্য মানুষের সাথে মিলিত হয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন-কাক একটি স্মার্ট পাখি যা অন্য একটি কাক সেখানে মারা যাওয়ার পরে সম্ভ্যাব্য হুমকি খুঁজতে সেই অঞ্চল তদন্ত করতে থাকে। তারা অন্য কাকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে যদি তারা বুঝতে পারে যে কখনও নির্দিষ্ট মানুষ বিপদজ্জনক।