বিশ্বজুড়ে করোনায় বিবর্ণ তরুণদের স্বপ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:২৫ পিএম, ৮ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৩১ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কয়েক দশক ধরে কোটি কোটি তরুণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোও আকর্ষণীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। কিন্তু পূর্বসূরিদের চেয়েও ভালো কিছু করে দেখানোর যে স্বপ্ন তরুণরা লালন করেন, তা পূরণে বাদ সেধেছে মহামারি করোনা ভাইরাস। চলমান বৈশ্বিক মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক স্থবিরতায় এশিয়ায় তরুণদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বেকারত্ব। খবর ব্লুমবার্গ।
শুধু এশিয়াতেই বিশ্বের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সিংহভাগের বসবাস। তাই এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উত্তরণ অনেকটাই তরুণদের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এশিয়ায় বর্তমানে বয়স্কদের তুলনায় তরুণরাই বেশি কর্মসংস্থান হারাচ্ছেন।
কর্মসংস্থান হারানোর অন্যতম কারণ হলো, এই যে তরুণরা, যারা মাত্রই তাদের কর্মজীবন শুরু করেছেন, তাদের বেশির ভাগই অর্থনীতির চারটি খাতে নিয়োজিত। এগুলো হলো পাইকারি-খুচরা বিক্রি, ম্যানুফ্যাকচারিং, ব্যবসায়িক সেবা এবং আবাসন-খাদ্য সরবরাহ সেবা। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এসব খাতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদন বলছে, করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক স্থবিরতায় কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নারী ও শ্রমসোপানের সবচেয়ে নিচের স্তরের কর্মীদের ক্ষতিটা বেশি। ‘লকডাউন জেনারেশন’ অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে বলেও সংস্থা দুটির প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।
পাভিসা কেতুপানিয়া, ২৬ বছর বয়সী ব্যাংককের তরুণ বৈমানিক। মাত্রই কমার্শিয়াল পাইলটের সনদ পেয়েছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল বাবার দেখানো পথ অনুসরণ করে বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার। কিন্তু যখন তার স্বপ্নের ডানা মেলার সময়, ঠিক তখনই হানা দিল করোনা মহামারি।
পাভিসা বলেন, ‘যখন আমি কমার্শিয়াল পাইলট হিসেবে লাইসেন্স পেলাম, তখন আমার মনে হয়েছিল এর মাধ্যমে আমি সারা জীবন ভালো আয় করতে পারব।’
পাভিসা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৩টি দেশের প্রায় দেড় কোটি তরুণদের একজন, যারা চলতি বছর তাদের কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অথবা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে এশিয়ায় চাহিদা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে তরুণ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী। করোনা মহামারির কারণে এই গতিশীলতায় ছেদ পড়েছে, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে মন্দার অর্থ পুরো বিশ্বের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে যাওয়া।
২০১৯ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশে অবদান ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনীতির। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর এ অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতিগুলো ১৯৬০-এর দশকের পর প্রথমবারের মতো সংকোচনের মুখে পড়তে পারে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা মহামারিপূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘নব্য দরিদ্র’ শ্রেণী তৈরি করছে। মহামারির প্রভাবে নতুন করে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সেন্টার ফর ফ্যামিলি অ্যান্ড পপুলেশন রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ওয়েই-জুন জিন ইয়েউং বলেছেন, ‘করোনা সংকটের কারণে বয়স্কদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে এবং তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। মোট কথা, আগের যেকোনো কর্মসংস্থান সংকটের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
অবশ্য তরুণদের সামনে একেবারেই যে আশার আলো নেই, তা নয়। প্রযুক্তির মতো খাতগুলোয় এখনো তরুণ শ্রমশক্তির চাহিদা রয়েছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির করোনা ড্যাশবোর্ড হোস্টিংয়ের কাজ করছে এসরি চায়না (হংকং) লিমিটেড (ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি এসরির একটি ইউনিট)।
কোম্পানিটির চেয়ারম্যান উইনি ট্যাং জানান, তার মোট কর্মী বাহিনীর ৩০ শতাংশেরই বয়স ৩০ বছরের নিচে। তার মতে, তথ্যপ্রযুক্তি খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা তরুণদের কর্মসংস্থানের ভালো উৎস হতে পারে। তবে করোনার কারণে তারুণ্যনির্ভর শ্রমবাজারে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে বলে স্বীকার করেন তিনি।
ট্যাং আরও বলেন, ‘আগামী এক দশক বা তার বেশি সময়ে তরুণ কর্মী, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদেরও আয় কমে যেতে পারে।’ ট্যাংয়ের ভবিষ্যৎবাণি বা আশঙ্কা, যাই বলি; এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটানো বিশ্বের জন্য কঠিনই হবে।
ব্রেকিংনিউজ