ভুতুড়ে হালদার বিল এখন বিনোদন কেন্দ্র
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার শেষপ্রান্ত পাহাড় উজিলাব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বেলাবো, শিবপুর ও রায়পুরা এই তিন উপজেলার মিলনস্থলে এখন বিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর এক নির্ভরযোগ্য স্থান।
এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর মনোরম পরিবেশ মানুষকে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় সৌন্দর্য উপভোগ করার এবং গোধুলিতে পশ্চিম আকাশে চমৎকার সূর্যাস্তের দৃশ্য যে কাউকেই পুলকিত করে।
বিকেল হতেই শুরু হয় নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষদের আনাগোনা। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে নারী, পুরুষ ও ছেলেমেয়েদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো হালদার বুক।
তিন উদ্যোক্তার আন্তরিকতায় গড়ে তোলা 'রিফ্রেশ কফি শপ' নামক দেশি বিদেশি খাবারের রেস্তোরাঁকে কেন্দ্র করেই বিপুল এ জনস্রোত তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তা মো. বশির উদ্দীন, মো. পারভেজ ও মো. লিটন এই এলাকার মানুষের রুচি, চাহিদা আর প্রয়োজন বিবেচনায় কাঠ, টিন আর স্টিল ও লোহার পাতের মাধ্যমে নান্দনিক ভাসমান রেস্তোরাঁ তৈরি করেন।
রেস্তোরাঁটির প্রধান ফটকের সাথে অফিস ঘর আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নয়টি মনোরম ঘর। প্রতিটি ঘরে যাওয়ার জন্য পানির উপর দিয়ে কাঠ আর পাতে তৈরি চমৎকার রাস্তা। প্রতিটি ঘর এত সুন্দর আর আকর্ষণীয়ভাবে সজ্জিত যে ছোট-বড় সবাইকে মোহিত করে।
সন্ধ্যা থেকেই রঙিন আলোর বাতিগুলো জ্বলে উঠলে পুরো এলাকাটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। অথচ একটা সময় এই হালদার বিল ছিল মানুষের জন্য এক আতঙ্কের নাম। এখান দিয়ে আসা যাওয়া তো দূরের কথা গোধূলির পর থেকে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। গ্রামের মানুষগুলোও সন্ধ্যার পর এ পথে আসা যাওয়া করতেন না। নির্জন, ভুতুড়ে ও আতঙ্কের এ হালদার বিল একাই বড়-ছোট মাছ, বুকভর্তি শাপলা আর উভয়তীরে গাছে থাকা পাখিদের মাঝেমধ্যে ঘুমভাঙানি কিচিরমিচির আওয়াজ নিয়ে রাতের পর রাত কাটাত।
মানুষজন এদিকে সন্ধ্যার পর আসতেন না নানা কারণে। সেকালে লোকমুখে ভূত-পেত্নীর অস্তিত্বের গল্প থেকে ভয় ছাড়াও ডাকাত আর সর্বহারাদের ভয়ে তটস্থ থাকতো। নির্জন এলাকা বলে চোর, ডাকাত ও সর্বহারাদের খুন, রাহাজনি ও সব অপকর্ম করার জন্য এই স্থানটি তাদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
বেলাব-মরজাল সড়কটি নির্মাণের সাথে সাথে এখানে একটি স্টীলের ব্রিজ করা হয় এবং মানুষের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হতেই অপার সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানটি মুখে মুখে রটে যায়। কিন্তু অনেক পরে মানুষের প্রাকৃতিক তৃষ্ণা নিবারণের পথ উন্মোচিত হয়।
অধুনা হালদার উপর নির্মিত ব্রিজ, ব্রিজের উভয় পাশের বেরী বাঁধ, সন্ধ্যায় রঙিন বাতির ঝলকানি থেকে একটু দূরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ উপভোগের পর দেশি ও ফাস্টফুডের মাধ্যমে রসনা তৃপ্তির অপার সুযোগ, ক্লান্ত শরীরকে চাঙা করতে এক কাপ ফ্রেশ কফি সত্যিই কর্মব্যস্ত মানুষের জীবনে ভিন্নমাত্রা এনে দেয়।