avertisements 2

অমুসলিম মাত্রই কি জাহান্নামী?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:৩৭ পিএম, ২৭ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:২৩ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

দুই বন্ধুর মধ্যে কথা হচ্ছিল।

১ম বন্ধু: দোস্ত জুম’আর নামাজের আজান হয়ে গেছে, চল নামাজ পড়তে যাই।

২য় বন্ধু: নারে দোস্ত, আজকে সকালে অনলাইনে একটা লেখা পড়লাম, তারপর থেকে মনটা কেমন খচ খচ করছে। একদম নামাজ পড়তে যেতে ইচ্ছা করছে না।

১ম বন্ধু: কেন, কি পড়েছিস?

২য় বন্ধু: ওখানে লেখক কিছু প্রশ্ন করেছেন। তিনি বলেছেন – পৃথিবীর মাত্র এক-চতুর্থাংশ মানুষ মুসলিম, আর বাকী তিন-চতুর্থাংশ মানুষ অমুসলিম। এই সব অমুসলিম মানুষগুলোর মধ্যে কত ভালো মানুষ আছে, তারা সবাই শুধু মুসলিম না হওয়ার কারণে কেন জাহান্নামে যাবে? আবার দেখ, কত মানুষ আছে যারা ইসলামের কথা ঠিক মতো কোনোদিন শুনেনি, তারাই বা কেন জাহান্নামে যাবে? চিন্তা করে দেখ, যারা অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের জন্য ইসলাম সম্পর্কে জেনে মুসলিম হওয়া কত কঠিন একটা ব্যাপার। লেখক আরো লিখেছেন – দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ শুধু মাত্র অমুসলিম হওয়ার কারণে জাহান্নামে যাওয়াটা বিরাট অন্যায়। কিন্তু, ইসলাম যেহেতু এরকম অন্যায়ের পক্ষে মত দেয়, কাজেই ইসলাম কিছুতেই সত্য ধর্ম হতে পারে না!

১ম বন্ধু: হা হা হা! তোর কি ধারণা একজন মানুষ অমুসলিম হলেই নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে?

২য় বন্ধু: তাই তো জানি!

১ম বন্ধু: তুই বড্ড ভুল জানিস রে দোস্ত! তোর এইসব প্রশ্নের উত্তর আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে কোরআন – হাদিস ঘেঁটে আল-গাজ্জালি, ইবনে তাইমিয়ার মত জায়ান্ট স্কলারেরা দিয়ে গেছেন। ইসলাম খুবই লজিকাল একটা ধর্ম আর আল্লাহ হলেন সবচাইতে দয়ালু ও ন্যায়বিচারক। আমি তোকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি দোস্ত – আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নির্বিচারে সব অমুসলিমকে জাহান্নামে ছুঁড়ে দিবেন না, আবার শুধু কালেমা পড়ার কারণেই কাউকে জান্নাত দিয়ে দিবেন না। এখন চল নামাজে চল, এখুনি খুতবা শুরু হয়ে যাবে, নামাজের পর তোকে বুঝিয়ে বলছি …

চার শ্রেণীর অমুসলিম

ইমাম আল-গাজ্জালি সমস্ত অমুসলিমকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করেছেন [২]। পরবর্তীকালের স্কলারেরা সেই শ্রেণীবিভাগকে বর্ধিত করে সমস্ত অমুসলিমকে চার শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন [৩,৫,৬]।

১ম শ্রেণী – যারা কখনোই ইসলামের কথা শুনেনি। যেমন – আফ্রিকার কোনো জংগলের অধিবাসীরা যারা কোনদিন কোন মুসলিমের সাক্ষাত পায়নি, ইন্টারনেট বা টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমেও ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেনি। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী বা প্রাপ্ত-বয়স্ক হওয়ার আগে মারা গেছে, এমন বাচ্চারাও এই ক্যাটাগরীতে পড়বে।

২য় শ্রেণী – যারা ইসলাম সম্পর্কে শুনেছে কিন্তু সঠিক তথ্য পায়নি। যেমন – বর্তমানে এই বিশ্বে এমন অনেক অমুসলিম আছেন যারা ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য মূলত এমন টিভি চ্যানেল ও ওয়েবসাইটের উপর নির্ভরশীল যেগুলোতে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয় না।

৩য় শ্রেণী – যারা ইসলাম সম্পর্কে শুনেছে, সঠিক তথ্যও পেয়েছে, কিন্তু তারপরেও ইসলামের সত্যতা নিয়ে তাদের মধ্যে জেনুইন সন্দেহ আছে। সম্ভবত, এদের মনে ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোর উত্তর তারা এখনো ঠিকমত পায়নি। বর্তমান যুগে বহু আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান এই শ্রেণীতে পড়বে। এছাড়া, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সীরাহ পাঠ করলেও আমরা এই শ্রেণীর লোকের উদাহরণ পাবো। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সা) যখন ইসলাম প্রচার করতেন তখন কুরাইশ গোত্রের এমন অনেকেই ছিল যারা প্রথম দিকে আসলেই মনে করতো যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য নবী নন। কিন্তু পরবর্তীতে একের এক যুদ্ধে মুসলিমদের অলৌকিক বিজয় দেখে তারা কনভিন্সড হয়েছেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। শাইখ ইয়াসির কাযী বলেন – আবু সুফিয়ান এবং ইকরিমা বিন আবু জেহেল এই শ্রেণীতে পড়েন।

আবু সুফিয়ানের জেনুইন সংশয় [৫]: মুসলিমরা যখন মক্কা বিজয় করতে যাবে তার ঠিক আগের রাতে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান নিশ্চিত পরাজয় উপলব্ধি করতে পেরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু অনুরোধ নিয়ে আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করেন: “হে আবু সুফিয়ান! তোমার উপর দু:খ হচ্ছে এ জন্য যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই – এই মহাসত্য উপলব্ধি করার সময় কি এখনো তোমার হয়নি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রশংসা করার পর আবু সুফিয়ান বলেছিলেন: “ওই ব্যাপারে এখনো কিছু না কিছু সংশয় তো আছেই” (আর রাহিকুল মাখতুম – পৃষ্ঠা ৪৬০)। আবু সুফিয়ানের ব্যাপারে তাই অনেক স্কলারেরই মতামত হলো – ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তিনি মনে প্রাণেই বিশ্বাস করতেন যে ইসলাম সত্য ধর্ম নয় [১১]। লক্ষ্যণীয় যে – ইনি সেই আবু সুফিয়ান যিনি বদর-উহুদের যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর নেতৃত্ব স্থানে থেকে বহু সাহাবীকে হত্যা করেছেন। অথচ, এই আবু সুফিয়ানই পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং ইয়ারমুকের যুদ্ধে একজন মুসলিম সেনাপতি হিসাবে লড়াই করতে যেয়ে তাঁর চোখ হারান।

ইকরিমা ইবনে আবি জেহেলের জেনুইন সংশয় [৬]: মুসলিমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নেতৃত্বে মদীনা থেকে মক্কাকে দখল করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে আসে, তখন মক্কার কুরাইশরা বুঝতে পেরেছিল যে শক্তিশালী মুসলিম বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নেই। ফলে তারা মুসলিমদেরকে প্রতিহত করার আর কোনো চেষ্টাই করেনি। ব্যতিক্রম ছিলেন – ইকরিমা ইবনে আবি জেহেল, যিনি কিনা তার কিছু অনুসারী নিয়ে লড়াই করেন মুসলিমদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এই লড়াইয়ে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন এবং দ্রুত মক্কা ছেড়ে পালিয়ে যান। মক্কা থেকে তিনি জেদ্দায় যান এবং ওখান থেকে জাহাজে করে আবিসিনিয়ার হাবাশার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। ওই জাহাজের সবাই মূর্তিপূজারী ছিল। পথিমধ্যে জাহাজটা ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে, বাঁচার যেন আর কোনো আশাই নেই। তখন ঐ জাহাজের ক্যাপ্টেন যাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল: “এই ঝড় থেকে বাঁচার মতো ক্ষমতা আমাদের জাহাজের নেই, আমরা নিশ্চিত ডুবতে যাচ্ছি। কাজেই, এখন সময় হলো সত্য প্রভু আল্লাহর কাছে দু’আ করার। আল্লাহর কসম করে বলছি, তোমরাও জানো আর আমিও জানি যে আমাদের মিথ্যা প্রভুরা এই বিপদ থেকে আমাদের উদ্ধার করতে পারবে না।” এই ঘটনার বর্ণনা ইকরিমা নিজেই করেছেন এবং বলেছেন: “ঠিক এই সময়ে আমার মনে হলো, আমাদের প্রভুরা যদি আমাদের দরকারের সময়ই আমাদেরকে সাহায্য না করে, তাহলে কেন আমরা সেই প্রভুর উপাসনা করব যাকে ছাড়াই আমরা চলতে পারি।” ইকরিমার এই বক্তব্যে বুঝা যায়, তিনি আসলেই এতদিন মনে করতেন যে মূর্তিগুলো তাদের প্রভু এবং রক্ষাকর্তা। ঝড়ের কবলে পড়ে তিনি উপলব্ধি করতে পারেন যে, তিনি এতদিন যাদের প্রভু বলে জানতেন তারা আসলে শুধুই কিছু মূর্তি। এই উপলব্ধির পরপরই ইকরিমা মক্কায় ফিরে যেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

ইনি সেই ইকরিমা যিনি দীর্ঘ ২০ বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি সাল্লাম)-এর সাথে জঘন্য আচরণ করেছেন, নির্যাতন করেছেন, মক্কায় ইসলামের সবচাইতে বড় শত্রুদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। অথচ, ইসলামের সত্যতা অনুধাবনের পর তিনি একজন কৃতি মুসলিম সেনাপতি হিসাবে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং অবশেষে ইয়ারমুকের যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।

৪র্থ শ্রেণী – যারা ইসলাম সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পেয়েছে এবং নিশ্চিতভাবে বুঝতে পেরেছে যে এটাই একমাত্র সত্য ধর্ম, কিন্তু তারপরেও ইসলাম গ্রহণ করেনি। এরা ইসলামের সত্যতা নিয়ে এতটাই নিশ্চিত যতটা নিশ্চিত আবু জেহেল, আবু লাহাবেরা ছিল [৩]। কিন্তু, এরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে না শুধুমাত্র এই কারণে যে তারা তাদের পূর্বপুরুষের অনুসরণ করতে চায়, টাকা-ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় অথবা তাদের নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করতে চায়।

যারা ৪র্থ শ্রেণীতে পড়েছে শুধু তারাই নিশ্চিত জাহান্নামী হবে। কিন্তু, তাই বলে আমি বা আপনি কোনো অমুসলিমকে জাহান্নামী বলতে পারবো না। কারণ, কোনও অমুসলিম ৩য় না ৪র্থ শ্রেণীতে পড়বে তা শুধুমাত্র আল্লাহই বলতে পারবেন। আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয় সে ইসলাম সম্বন্ধে কতটুকু জানতো, আমাদের পক্ষে এটাও জানা সম্ভব নয় কী তার নিয়ত ছিল, বা মৃত্যুর আগে সে কি ভেবেছিল। আবার অন্যদিকে, কোনো অমুসলিমের মৃত্যুর পর তার জন্য আমরা দু’আ করতে পারবো না বা RIP-ও বলতে পারবো না। কারণ, অমুসলিম মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আ করা ইসলামে নিষেধ [৯]।

এবার আসা যাক ১ম ও ২য় শ্রেণীর মানুষদের প্রসঙ্গে। পরকালে এদের বিচার একইভাবে হবে কারণ ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের প্রকৃত অবস্থা একই। নিচে এদের পরিণতী নিয়ে আলোচনা করা হলো।

যারা এই জীবনে ইসলাম সম্পর্কে শুনেনি পরকালে তাদের বিচার কিভাবে হবে ?

এদের সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া [২] যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো এরকম: সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষের জন্মগত বোধ (ফিতরা)-এর অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি মানুষ তার বোধ হওয়ার সাথে সাথেই যেমন বুঝতে পারে সর্বদা তার সত্য কথা বলা উচিত, সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিত – তেমনিভাবেই সে জানে তার এমন এক সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন যিনি সব কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং শুধু তাঁরই ইবাদত করা উচিত। (বৈজ্ঞানিক গবেষনাও এর প্রমাণ বহন করে[১০] )। কাজেই, কোনো মানুষের কাছে যদি ইসলামের সঠিক বাণী না-ও পৌঁছায়, তবুও তার উচিত এক স্রষ্টা ছাড়া অন্য কোনো মূর্তি বা অন্য কিছুর উপাসনা না করা। শরিয়তের ভাষায় এই মানুষগুলোর উচিত হলো তাদের “ফিতরা”কে অনুসরণ করা। যেমন – নবুয়ত প্রাপ্তির আগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁদের “ফিতরা” অনুযায়ী জীবনযাপন করতেন।

কেউ যদি এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করে, তাহলে আল্লাহ চাইলে তাকে শিরকের অপরাধে শাস্তি দিতে পারতেন, এমনকি যদি সেই ব্যক্তির কাছে কোনো নবী/রাসূলের বাণী না-ও পৌঁছে থাকে, এটা করলেও ন্যায়বিচার হতো – কারণ আল্লাহ তো মানুষকে “ফিতরা” দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা হলেন পরম দয়ালু, তাঁর দয়া তাঁর ন্যায়বিচারের চেয়ে বেশী। আর এই দয়ার অংশ হিসেবে তিনি দুনিয়াতে নবী-রাসূল পাঠান। আর তাই যেসব মানুষের কাছে ইসলামের বাণী সঠিকভাবে পৌঁছায়নি, আল্লাহ তাদের বিনা পরীক্ষায় শাস্তি দিবেন না। কারন, তিনি বলেছেন:

কোনো রাসূল (বার্তাবাহক) না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি দেই না। [সূরা ইসরা ১৭:১৫ আয়াতাংশ]

যারা এই দুনিয়ায় রাসূলের বাণী ঠিকমতো পায়নি, তাদের ঈমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে বিচার দিবসে। সেদিন তাদেরকে একত্র করে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন – “তোমাদের কাছে যদি আমার নবী পৌঁছাত তোমরা কী করতে”? তারা অবশ্যই উত্তর দিবে – “আমরা বিশ্বাস করতাম”। এর কিছুক্ষণ পরে আল্লাহ তাদের কাছে একজন ফেরেশতা পাঠাবেন এবং তারা তাকে ফেরেশতা হিসেবে চিনতে পারবে। সেই ফেরেশতা তাদেরকে একটা জ্বলন্ত আগুনের কূপ দেখিয়ে বলবে – “আল্লাহ তোমাদেরকে এই আগুনে ঝাঁপ দিতে বলেছেন”। যারা তখন ওই ফেরেশতার কথা শুনে আগুনে ঝাঁপ দিবে, তখন ওই আগুন তাদের জন্য জান্নাত হয়ে যাবে। অন্যদিকে যারা ঐ আগুনে ঝাঁপ দিবে না, তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। মুসনাদে ইমাম আহমদ ও সহীহ ইবনে হিব্বানে এই হাদিসটি পাওয়া যায়। [১,৩,৪]

শেষ কথা:

মহান আল্লাহ সুবহানাওহু ওয়া তা’আলা হলেন আল-আদল (العدل ) বা ন্যায়বিচারক। বিচার দিবসে প্রত্যেকটি মানুষ নিশ্চিতভাবেই জানবে – যে পুরষ্কার বা শাস্তি তার প্রাপ্য ছিলো ঠিক তা-ই সে পেয়েছে, কারো প্রতি এক চুল অবিচার হয়নি। অমুসলিমদের যেমন দায়িত্ব আছে তাদের ফিতরাহ (Natural Inclination)-এর অনুসরণ করে একক প্রভুর ধর্মকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা, তার চেয়েও বেশী দায়িত্ব হলো মুসলিমদের উপর – তার নিজের ধর্মকে জানা, পালন করা ও প্রচার করা [৮]।

নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ইসলাম শেখা, পালন করা ও প্রচার করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ। ইসলাম প্রচার করার অর্থ এই নয় যে, দেখা হলেই মানুষকে ইসলামের কথা বলে বলে বিরক্ত করে ফেলতে হবে। বরং, আমরা যদি কমপক্ষে নিজে ভালো মত ইসলাম পালন করি এবং নিজের চরিত্র ও ব্যবহার সুন্দর করে তুলতে পারি, তাহলে মানুষ সহজেই আমাদের মাধ্যমে ইসলামের প্রতি আকর্ষিত হবে [৭]। আমি নিজে এভাবেই প্র্যাক্টিসিং মুসলিমদের ভালো ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের পথে এসেছি। (উল্লেখ্য, ইসলাম প্রচারের আরো বিভিন্ন লেভেল আছে, সেগুলো জানার জন্য [৮] পড়ুন)

আমরা যত বেশী ইসলামকে জানবো ততই একে ভালোবাসতে পারবো, আর বুঝতে পারবো ইসলাম একটি অত্যন্ত ব্যালেন্সড ধর্ম। মহান আল্লাহ কারো প্রতি অবিচার করেন না, কারো প্রতি তিনি অবিচার করবেন না। অবিচার করি আমরা মানুষেরা – অন্যের প্রতি এবং নিজের প্রতিও।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2