avertisements 2

ছুটি শেষে অফিসে ফেরা হলো না অন্তঃসত্ত্বা পূজার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৩ এএম, ২৯ এপ্রিল,সোমবার,২০২৪

Text

সাভারে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো পরমাণু শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ইলেকট্রনিক) পূজা সরকার ছিলেন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। চিকিৎসার জন্য এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে রবিবার (৫জুন) সকালে অফিসের বাসে করে ঢাকার ওয়ারীর বাসা থেকে কর্মস্থলে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু পথেই ছেড়ে যেতে হলো পৃথিবী। আর সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন অনাগত সন্তানটিকেও। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন পূজা সরকার। তার গ্রামের বাড়ি গাজিপুরের সখিপুরে। তিনি পরিবারসহ ঢাকার ওয়ারীতে বসবাস করতেন।

সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শোকে পাগলপ্রায় পুজার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সমর সরকার এবং স্বামী ডা. তন্ময় মজুমদারকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন পূজার সহকর্মী এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের টেকনিক্যাল অফিসার আতিকুর রহমান। ঢাকা টাইমস প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘আমি আর পূজা পাশাপাশি ডেস্কে বসে অফিস করতাম। পূজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের (৪১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী থাকাকালীন আমাদের অফিসেই থিসিস করেছিল। তখন থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। এরপর বছর তিনেক আগে এখানে তার চাকরি হয়। আমরা কলিগ হওয়া সত্ত্বেও সে আমাকে চাচ্চু বলে ডাকতো। আমিও তাকে সন্তানতুল্য স্নেহ করতাম। তার স্বামী তন্ময় মজুমদার মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন বিসিএস স্বাস্থ্য অফিসার। তারা দুজনে আমাদের অফিসের ডরমিটরিতেই থাকতো।

পূজা অন্তঃসত্ত্বা ছিল এবং তার সুখবরটি অফিসে সর্বপ্রথম আমার সঙ্গেই শেয়ার করেছিল। অনাগত সন্তানকে নিয়ে বেশ খুশি ছিল পূজা। এটি তাদের প্রথম সন্তান। গত বৃহস্পতিবার (২৬মে) অফিস শেষে আমাকে বললো চাচ্চু আমি এই সপ্তাহে ছুটি নেব, ডাক্তার দেখিয়ে টেস্টগুলো করিয়ে ফেলব। সেদিনই তার সঙ্গে শেষ দেখা যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল চাচ্চু আমার খুব খাসির মাংস খেতে ইচ্ছে করছে। আমি তার জন্য মাংস কিনে এনেছিলাম। আমার ওয়াইফ সকালে ফ্রিজ থেকে সেই মাংস বের করেছে রান্নার জন্য; রাতে পুজা আর ওর স্বামীকে দাওয়াত খাওয়াবে তাই। কিন্তু নিয়তি সব উলটপালট করে দিল। আমি আর ছয়মাস পর অবসরে যাবো আমার এই চাকরি জীবনের সবচেয়ে কষ্টের স্মৃতি হয়ে থাকবে পূজাকে হারানো। কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঊনষাট বছরের আতিকুর।

এদিকে এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো আরেক জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান। তিনিও ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের ৩৫তম ব্যাচের ছাত্র। এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারহানা ইসলামও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলজিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে শোক নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী পোস্ট করে শোক প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছেন ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘নিহত দুজনেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থী। তবে শুধু আমাদের শিক্ষার্থী বলে না সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো মানুষের প্রাণ যাওয়া সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তবে আমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে কষ্টের ও শোকের জায়গাটা আমাদের জন্য অনেক বেশি। আমরা চাই সারাদেশে কেউ যাতে এভাবে আর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা না যায়। সড়কে গাড়ি চালানোর যে সুশাসন সেটা আসুক এবং একটা নিয়ন্ত্রণ থাকুক। রাস্তাগুলো গাড়িবান্ধব হোক সেটাই চাই আমরা।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2