জিতুকে ‘ভাতিজা’ দাবি করলেন সেই বান্ধবী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ জুলাই,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
শিক্ষক উৎপল কুমার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত স্কুলছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে উসকানি দেওয়ার গুঞ্জনে কলেজের এক ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই ছাত্রী জিতুর প্রেমিকা। তাদের প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় জিতুকে প্রতিশোধ নিতে বলেন ওই ছাত্রী।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বহিষ্কৃত কলেজছাত্রী। তার দাবি, জিতু সম্পর্কে তার ভাতিজা হয়। সেই সম্পর্কেই কথা হতো তাদের।আজ রবিবার বিকেলে আশুলিয়ায় বহিষ্কৃত কলেজছাত্রীর বাড়িতে যান কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় বাড়িতে ছিলেন কলেজছাত্রীর বোন। তিনিও এ ঘটনা নিয়ে কথা বলেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে।
বহিষ্কৃত কলেজছাত্রী বলেন, ‘আমরা এই জায়গাটি (বসতঘরের জায়গা) জিতুদের কাছ থেকে কিনেছি। সেই হিসেবে আমরা প্রতিবেশী। জিতু আমার ভাইস্তা (ভাতিজা) হয়। এখন আমার নামে একটা বদনাম (প্রেমের গুঞ্জন) উঠেছে। আসলে এগুলো কোনোটাই সত্যি না। আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে জিতুর বাবার বন্ধুত্ব। ফলে জিতুর বাবাকে আমি ভাই বলে ডাকি। জিতু সম্পর্কে আমার ভাইস্তা। ’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি কলেজে বিজ্ঞান শাখা ও জিতু স্কুলে বিজ্ঞান শাখার। ফলে আমার বিভিন্ন পুরনো গাইড ও বই চাইত। স্কুলে আমাদের প্রায়ই কথা হতো। এখন এলাকার মানুষ বা স্কুলের স্টুডেন্টরা যদি ভাইবা থাকে আমাদের সম্পর্ক আছে, তাহলে এটা তো ভুল। আর আমরা কথা বলছি। টিচাররা দেখছে। আমারে তো ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করবে। কিসের কথা বলো? সন্দেহ হইছে, কিন্তু আমাকে এইটা বলে নাই। তারা বাসায় অভিযোগ দিবে, যে ওই ছেলের সাথে কথা বলে। আমার বাসায় এমন কোনো অভিযোগ আসে নাই। ’নিহত উৎপল কুমার স্যারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল দাবি করেন ওই কলেজছাত্রী। তার কাছে অসুস্থ বোনের (স্কুল শিক্ষিকা) শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতেন বলেও জানান তিনি। কলেজছাত্রী বলেন, ‘স্যার আমার কাছে আপুর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইতেন। তবে কখনো জিতুর ব্যাপারে কিছু বলেননি। এখন স্কুল থেকে শুনছি স্যার আমাকে নাকি এ ব্যাপারে অনেকবার শাসিয়েছেন। এই কথা একদম মিথ্যা। ’
ওই ছাত্রী আরো বলেন, ‘আমি প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমি ও আমার ফ্যামিলি আমরা সবাই অশান্তিতে আছি। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হউক। তারপর আমি যদি দোষী হই, প্রশাসন আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি সেটাই মেনে নিব। ’জিতু সম্পর্কে বলেন, ‘জিতু ছাত্র হয়ে শিক্ষককে হত্যা করছে। তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। ’বহিষ্কৃত ওই ছাত্রীর বোন হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক। তিনি ওই কলেজ থেকেই পড়ালেখা শেষ করে একই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তবে গত তিন মাস অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন তিনি। এই কলেজ শিক্ষকও স্বীকার করেন জিতু তাদের সম্পর্কে ভাতিজা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই ছেলের (জিতু) সাথে আমার বোনের সম্পর্কের প্রশ্নই আসে না। সম্পর্কে ও তো (জিতু) ভাতিজা হয়। ’
তিনি বলেন, ‘খুবই কষ্টের কথা, এই ঘটনার মধ্যে আমার বোনটাকে কিভাবে জড়িয়ে ফেলল। আমি তিন মাস ধরে কলেজে যাই না। এখন শুনছি আমার বোনের নামটা চলে আসছে। কিন্তু কে বা কারা করল, এ বিষয়টা আমরা কিছুই জানি না। আমার বোন ২১ জুন থেকে কলেজে যায় না। ঘটনা ঘটেছে ২৫ জুন। তাহলে ওর সাথে কিভাবে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে?’বোনের সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল নোটিশ পেয়েছি। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই জবাব চাইতেও যেতে পারছি না। প্রতিষ্ঠান খোলার পর অবশ্যই এ বিষয়ে জবাব চাইব। ’শিক্ষক হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক হত্যার মতো ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উৎপল কুমার স্যার আমার গুরুজন। জিতু পৃথিবীর জঘন্যতম অপরাধ করেছে। ওর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ’
এদিকে ৩০ জুন হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানের স্বাক্ষরিত নোটিশে শিক্ষক উৎপল কুমার হত্যার ঘটনায় পুলিশি তদন্ত ও আসামির জবানবন্দিতে ওই ছাত্রীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় বলে উল্লেখ আছে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ওই ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।এ বিষয়ে অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সরাসরি তো জানতে পারিনি। তবে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক তদন্তে বিষয়টা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তার বড় বোন, যিনি আমাদের এখানে শিক্ষকতা করেন তাকে উৎপল স্যার জানিয়েছিলেন। উৎপল স্যার আমাকে বলেছিলেন। তবে পুলিশের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। আর সবচেয়ে বড় বিষয়, সেই ছাত্রী এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলে তার নিরাপত্তার একটা বড় ঝুঁকি থাকে। তাই তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্তে তার সম্পৃক্ততা না থাকলে সে আবার কলেজে আসতে পারবে। ’
নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জিতুর সঙ্গে কলেজের এক ছাত্রীর সুসম্পর্ক থাকার প্রাথমিক কিছু তথ্য এসেছে। তবে কী ধরনের সম্পর্ক, এটা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না। তবে যে ছাত্রীর কথা বলা হচ্ছে, আমরা তার হাজিরা খাতা যাচাই করেছি। সেই ছাত্রী ২১ জুন থেকে কলেজে যায়নি। ’
গত ২৫ জুন দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী কলেজের মাঠে প্রকাশ্যে শিক্ষক উৎপলকে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আঘাত করে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিতু। পরে শিক্ষককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সোমবার (২৭ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যান তিনি। সেদিন থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় রবিবার আশুলিয়া থানায় নিহত শিক্ষকের ভাই বাদী হয়ে মামলা করলে ২৮ জুন রাতে কুষ্টিয়া থেকে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজিকে এবং ২৯ জুন গাজীপুর থেকে জিতুকে গ্রেপ্তার করা হয়।সেই থেকে বন্ধ ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এক সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার প্রতিষ্ঠানটি খুলে দেওয়া হয়।