avertisements 2

সহায়তার নামে বারবার বিয়ের প্রস্তাব, বিরক্ত নাহিদের স্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৭ এএম, ১৮ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘর্ষে নিহত হন ডেলিভারিম্যান নাহিদ হাসান। পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। তার মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়েছেন মাসছয়েক আগেই নাহিদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা ডালিয়া আক্তার। স্বামী হারানোর শোক সামলে তাকে লড়াই করতে হচ্ছে আরও এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সঙ্গে। নাহিদের মৃত্যুর পর লোকজন সাহায্য-সহযোগিতা করার নামে ফোনে ডালিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ সকালে বাড়িতে গিয়েও বসে থাকছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। বারবার এমন প্রস্তাবে বিব্রত-বিরক্ত-ক্ষুব্ধ তিনি। এভাবে বিব্রত ও বিরক্ত না করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নাহিদের স্ত্রী। গত ১৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরদিন (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাহিদ হাসান। তার মৃত্যুর পর প্রথম ঈদ কেমন যাচ্ছে মা-স্ত্রী-স্বজনদের? তা জানতে জাগো নিউজ হাজির হয় রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে নাহিদের বাসায়।

সেখানেই নিজের শোক-দুঃখ আর ক্ষোভের কথা জানান ডালিয়া আক্তার। ডালিয়াদের বাড়ি টাঙ্গাইলে। তার বাবা সেখানেই থাকেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ডালিয়া থাকতেন কামরাঙ্গীরচরের কামরুল ইসলাম কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে নানির বাসায়। এখানেই নাহিদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় তার। সম্পর্কটি চিরস্থায়ী করতে ছয় মাস আগে তারা বিয়ে করেন। সুখেই কাটছিল যুগলবন্দি দিন। ভালোবাসার প্রকাশে কয়েকদিন আগেই বাঁ হাতের তালুতে মেহেদি রঙে ইংরেজিতে লিখেছিলেন, ‘আই লাভ ইউ নাহিদ।’ কামরাঙ্গীরচরের যে ঘরটিতে নাহিদ আর ডালিয়া থাকছিলেন, তার ছোট জানালার পাল্লায় বাংলায় নাহিদের নাম লেখা। আর তাদের বিয়ের কয়েকটি ছবি লেমিনেটিং করে রাখা আছে আলমারির ড্রয়ারে। সেসব দেখাতে দেখাতে স্মৃতিচারণ করছিলেন ডালিয়া। তিনি যেন এখনো ভাবতে পারছেন না, নাহিদ আর নেই। বিয়ের পর এটিই ডালিয়ার প্রথম ঈদ। স্বামীর সঙ্গে ঈদ করবেন বলে অজস্র স্বপ্ন সাজিয়েছিলেন। কিন্তু নাহিদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যেন মুছে গেছে ডালিয়ার সেসব স্বপ্নও। তিনি জানাচ্ছিলেন, ঘটনার দিন (১৯ এপ্রিল) নাহিদ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে বলেছিলেন, বাসায় ফিরে কামরাঙ্গীরচর রনি মার্কেটে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করবেন।

ঈদের পরের দিন ডালিয়ার বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলেও যাওয়ার কথা ছিল একসঙ্গে। তবে ডালিয়া সন্ধ্যায় খবর পেলেন, স্বামী আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখান থেকে আর ফেরা হলো না। সদ্য বিধবা ডালিয়ার পাশে যেন সমাজের বিত্তবানরা দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সেসব খবরে যুক্ত করে দেওয়া হয় ডালিয়ার বিকাশ নম্বর। আর এই নম্বর নিয়েই কিছু লোক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলছে ডালিয়াকে। স্বামীর মৃত্যুর সপ্তাহ না পেরোতেই ফোনে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। এমনকি ইমো নম্বরে ভিডিও কল দিয়েও সহযোগিতার নামে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে চাইছে তার সঙ্গে। ডালিয়া আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘লোকজন সহযোগিতার নামে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ফোন দিয়ে বলে, বিয়ে-শাদি করবেন কি না, সেই চিন্তা-ভাবনা আছে কি না।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ যদি আপনার (প্রস্তাবদাতা) কোনো বোন হতো, তাহলে কি এমন কথা বলতে পারতেন? আজ আমার স্বামী মারা গেছে ১২ দিন। ১২ দিন হওয়ার আগেই আপনারা এসব কথা (বিয়ের প্রস্তাব) বলেন।

আপনাদের ঘরে মা-বোন থাকলে তাদেরও কি ১২ দিনেই এসব কথা বলতেন? অন্তত ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, ছয় বছর তো যাইতো। আপনারা কেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন?’ ‘অনেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সকালে বাসায়ও আইসা বইয়া থাকে। সকাল ৭টা বাজে আইসা বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সবাই বিয়ের কথা বলে অথচ কেউ টাকা সহযোগিতা করে না। এই বিষয়টা নিয়ে পরিবার বিরক্ত। নম্বর দিয়েছি যেন আমার হেল্প হয়। তবে দয়া করে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেবেন না। যে নম্বর মিডিয়াতে দেওয়া সেই নম্বরে টাকা পাঠানোর পরিবর্তে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে।’ ভালোবাসার স্মৃতিচারণ করে ডালিয়া বলেন, ‘স্বামী আমাকে বেশিই ভালোবাসতো। সংসারের অভাব বুঝতে দিতো না।’ এসময় অশ্রু গড়ায় ডালিয়ার চোখ বেয়ে, ধরা গলায় তিনি বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ ওকে (নাহিদকে) কেন আমার কপালে মাত্র ছয় মাস লিখে রাখলো? যেদিন বাসা থেকে বের হয় সেই দিন ফোন করে বলেছিলো, তুমি রেডি থাইক্কো ঈদের কেনাকাটা করবো। আর সে বাসায় ফিরা আইলো না।’ এসময় পাশে ছিলেন নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম মিয়া ও মা নার্গিস বেগম।

নার্গিস বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সন্তান ছাড়া কি মায়ের কোনোদিন ঈদ হয়? হয় না। ছেলে মারা গেছে মাত্র কয়েকদিন আগে। সেই ক্ষত আজীবন থাকবে। ছেলেকে ছাড়া মা ক্যামনে ঈদ করবো?’ অবশ্য অনেকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে শোকাহত এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে কথা জানিয়ে নার্গিস বেগম বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। মগবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতা হেলাল সাহেব বলেছেন, আমাদের ছোট পিকআপ ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেবেন। এছাড়া ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এক লাখ টাকা দিয়েছেন।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2