বড় ভূমিকম্পে ঢাকায় প্রাণহানির মূলে থাকবে আগুন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৫ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
১৮৯৭ সালে ভারতের আসামে স্মরণকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ১২৪ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ১২ জুন। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৮ দশমিক ৭। এ ঘটনার প্রভাব পড়েছিলো ২৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা ঢাকাতেও, ভূমিকম্প তীব্রতার স্কেলে সেসময় রাজধানীর কম্পন ছিলো সাতের বেশি। বর্তমান সময়ে একই দূরত্বে এই মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেটার তীব্রতায় ঢাকায় কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সাজানো হয়েছে ইত্তেফাক অনলাইনের তিন পর্বের বিশেষ প্রতিবেদন। আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
ডাউকি ফল্টে অতীতের একই মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহর তীব্রতার স্কেলে সাত থেকে আটের মধ্যে কাঁপবে। এই কম্পন ঠেকিয়ে টিকে থাকবে এমন ভবন ঢাকা শহরে খুব বেশি নেই। তাই এমন ঘটনায় শহরে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
কয়েক বছর আগে সিসমিক ভারনাবিলিটি এসেসমেন্ট অফ বিল্ডিং অফ ঢাকা নামের এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, শহরে ৩০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ইত্তেফাক অনলাইনকে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে রাজধানীর ৩০ ভাগ বিল্ডিং পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। ঢাকায় এখন ভবনের সংখ্যা চার লাখের আশেপাশে। সে হিসেবে আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে প্রাণহানি হতে পারে ৪০ লাখের কাছাকাছি। প্রাণহানির মূল কারণ হতে পারে আগুন। ভেঙে পড়া গ্যাসের পাইপলাইন থেকে গ্যাস বেরোনোর সম্ভাবনা ব্যাপক। গ্যাস থেকে পুরো ভবনে আগুন লাগতে পারে। ভূমিকম্পের সময় চুলা জ্বলন্ত অবস্থায় থাকলে এ ঘটনার সম্ভাবনা বেশি। পাশাপাশি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেও আগুন সৃষ্টি হওয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, ঘরের ভারি জিনিসপত্রের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারাবে মানুষ। তাছাড়া পানির লাইন ভেঙে স্যুয়ারেজের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকটে পড়বে মানুষ। এর বাইরে ভেঙে পড়া ভবনের নিচে চাপা খাওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই।
কাঠামো প্রকৌশলী ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. আলী আকবর মল্লিক বলেন, ঢাকার বিল্ডিং ধসে পড়লে গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন থেকে বড় আগুন লাগবে। জাপানে যখন ভূমিকম্প হয় তখন সব সুইচ অটোমেটিক অফ হয়ে যায়। বাংলাদেশে এমন সেন্টার কন্ট্রোল নেই। ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের চুলা জ্বলন্ত অবস্থায় থাকলে আগুন লাগার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গ্যাসের চুলা যাতে নিজের জায়গা থেকে সরে না যায় এজন্য চুলাগুলো দেয়াল বা টেবিল বা তাকের সঙ্গে ফিক্সড করে দেওয়া দরকার। চুলা ছিটকে পড়লে গ্যাস বের হয়ে আগুন লাগতে পারে। এছাড়া আগুনের আরেকটি কারণ হবে শর্টসার্কিট।
ভূ-তত্ত্ববিদ প্রফেসর সৈয়দ হুমায়ুন আখতার জানান, ৬০-এর দশকের গ্যাস পাইপলাইনগুলো পরিবর্তন করা উচিত ছিল। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে মসজিদের নিচে গ্যাস পাইপ বিস্ফোরিত হলে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। ঢাকার পুরনো গ্যাসলাইনের মধ্যে ২০ শতাংশ বা ৩০ শতাংশের মতো পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বাকিগুলি এখনো চলছে। আবার যেগুলো নতুন লাগানো হচ্ছে সেগুলোও দেখা যাচ্ছে লিক হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পে ওয়াসার পানির লাইন ভেঙে স্যুয়ারেজের সঙ্গে এক হয়ে যাবে। গ্যাসের লাইনগুলো লিক হয়ে আগুন ধরার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ভূমিকম্পে যত মানুষ নিহত হবে তার চেয়ে বেশি নিহত হবে অবরুদ্ধ হয়ে আগুনে পুড়ে, পানীয় জলের অভাবে।
ঘরের ভেতরের জিনিসপত্রে চাপা পড়ার প্রসঙ্গে ড. মল্লিক বলেন, মানুষের প্রাণহানি ভবন ধসে হবে না। প্রাণহানির কারণ হবে বিল্ডিংয়ের ভেতরের জিনিসপত্র। আলমারি, শোকেস, টিভি ইত্যাদি মাথার ওপর পড়ে মানুষ মারা যাবে। আর মারা যাবে আগুন লেগে।