দুর্ঘটনায় নয়; স্ত্রীর লাশ নিয়ে সাকিবুলের দিনভর নাটক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৫৩ পিএম, ৪ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩৩ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
স্ত্রী ঝিলিক আলম (২৩)কে আগেই হত্যা করেছেন। পরে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দুর্ঘটনার নাটক সাজান স্বামী সাকিবুল আলম। কিন্তু পরিকল্পনা দুর্বল থাকায় ফেঁসে যান ঘাতক স্বামী নিজেই। হাতিরঝিলে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। অচেতন ঝিলিক আলমকে উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে আসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ঝিলিকের গলায়, নাকে, কপালে চিকিৎসকরা আঘাতের চিহ্ন পান এবং সন্দেহ করেন তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও দেখা গেছে অচেতন অবস্থায় চারজন লোক বাসার সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে গাড়িতে তুলছে ঝিলিককে।
এ ছাড়া তার স্বামী সাকিবুল আলম অগোছালো কথা বলছিলেন। সন্দেহ হওয়াতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গতকাল সকালে গুলশান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথিমধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে।
নিহতের স্বামী সাকিবুল দাবি করে বলেন, তাদের বাসা গুলশান-২ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর রোডে। তিনি তার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে ঢামেক হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হাতিরঝিল আমবাগান এলাকায় তাদের বহনকারী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তার স্ত্রী গুরুতর আহত হন এবং তিনিও আহত হন। পরে ঝিলিককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আর তিনি ওই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঢামেকের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঝিলিককে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে আলামত মিলেছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ঝিলিককে ঢামেকের ইমারজেন্সির যে চিকিৎসক প্রথম দেখেছিলেন, আমি নিজে তার সঙ্গে কথা বলেছি। ওই চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা যদি হয়েও থাকে, তবুও ঝিলিককে আগেই হত্যা করা হয়েছে। আমার ধারণা, তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাকে বেঁধে নির্যাতনও করা হয়েছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের লাশ দেখে আমারও মনে হয়েছে, তাকে আগেই হত্যা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা আর হত্যার বিষয় তো আলাদা, যা বোঝা যাওয়ার কথা। এরপর ঢামেক হাসপাতালে সাকিবুলের আচরণ রহস্যজনক মনে হওয়ায় পুলিশ তাকে জেরা করে। তার গুলশানের বাসায় খোঁজ নিলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, চার ব্যক্তি ওই নারীর হাত-পা ধরে ঝুলিয়ে বাসার সিঁড়ি দিয়ে নামছে। নিহতের স্বজনরাও সাকিবুলের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেছেন। এরপর সাকিবুলকে আটক করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। তিনি জানতে পেরেছেন, গুলশান থেকে মৃত অবস্থায়ই ঝিলিককে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল। সাকিবুল ঘটনাটি আড়াল করছেন। তাকে ও তার বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে গুলশান থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
নিহতের মা আসমা বেগম জানান, ঝিলিক ও সাকিবুল ভালোবেসে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। আট মাস বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে তাদের। প্রায়ই ঝিলিককে নির্যাতন করতো সাকিবুল। ঝিলিকের মামি মনোয়ারা বেগম ঢামেক মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি জানান, ঝিলিকের গ্রামেরবাড়ি মুন্সীগঞ্জ। ঝিলিকের বাবা বছরখানেক আগে মারা যান। ঝিলিকের বিয়ের পর থেকে তারই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে মা আসমা বেগম মোহাম্মপুরে থাকেন। ঝিলিকের স্বামীর পরিবার বেশ সম্পদশালী। তবে সাকিবুল তেমন কিছুই করতো না। সাকিবুল আমাদের মেয়েকে হত্যা করেছে। আমরা তার বিচার চাই।
নিহতের ভাই বলেন, দুলাভাই সকাল ৮টায় আমার মাকে ফোন দিয়ে কনফার্ম করে জানিয়েছে, আমার বোন মারা গেছে। রাতের বেলা নাকি ঘুমিয়েছিল সকালে উঠে দেখে হাত-পা ঠাণ্ডা। তারপর ৯টার দিকে হাসপাতালে নেয়ার সময় হাতিরঝিলে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায়। বৃহস্পতিবার আপুর সঙ্গে আমাদের সর্বশেষ কথা হয়েছে। এরপর অনেকবার আপু ও দুলাভাইকে ফোন দিয়েছি কিন্তু তারা কেউ ফোন ধরেনি। শুক্রবার রাতেও আম্মু আপুকে ফোন দিয়ে পায়নি। তিনি বলেন, আমার দুলাভাই আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। কারণ গলায় দড়ির দাগ আছে। নাকে, কপালে আঘাতের চিহ্ন আছে। এছাড়া পুলিশও বলেছে, বালিশ চাপা দিয়ে আমার বোনকে মারা হয়েছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ঝিলিককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহতের মা থানায় এসেছেন। মামলা করবেন। মামলা হলে বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে। সুত্র: দৈনিক মানবজমিন