বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা
দেশেই ঘাপটি মেরেছেন ওয়াসার এমডি তাকসিম খান!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৬:৩৫ এএম, ৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যন্ত দাপুটে কর্মকর্তা ঢাকা ওয়াসার সাবেক এমডি তাকসিম এ খান রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে শেষ অফিস করেছেন গত ৪ আগস্ট। পদত্যাগ করেছেন আরও দিন দশেক পর। এর পর থেকে তিনি দেশে আছেন, নাকি বিদেশে গেছেন– তা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সমকালের অনুসন্ধানে তাঁর দেশে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি অনেক চেষ্টা করেও বিদেশ যেতে পারেননি। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁর স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। সুযোগ পেলে তিনিও সেখানে চলে যাবেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাকসিম এ খান বর্তমানে বিশেষ একটি প্রভাবশালী বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আশ্রয়ে আছেন। সুযোগ পেলেই তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থেকেও আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদে তিনি টানা ১৬ বছর এমডির দায়িত্বে ছিলেন।
তাকসিমের গাড়িচালক মাধব গোপাল মজুমদার সমকালকে বলেন, গত ৩ আগস্ট তাকসিম রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঢাকা ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের নিজ অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে পৌঁছলে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর গাড়িতে ঢিল ছোড়ে। পরে রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নয়াপল্টনের বাসায় যান। পরদিন ৪ আগস্ট তাকসিম যথারীতি অফিসে আসেন। অফিস ছুটির পর নির্ধারিত অফিসিয়াল গাড়ি না নিয়ে অন্য একটিতে অফিস থেকে বের হয়ে যান। ৫ আগস্ট থেকে তাকসিমের সঙ্গে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তাকসিম ১৪ আগস্ট ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
ঢাকা ওয়াসার একাধিক সূত্র জানায়, তাকসিম অতি গোপনীয়তার সঙ্গে রাজধানীর পাঁচতারকা সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাতে তিনি এই হোটেলে প্রবেশ করেন। অবস্থান করেন টপ ফ্লোরের একটি কক্ষে। পরে তিনি সুবিধাজনক সময়ে মুখ ঢেকে একটি প্রভাবশালী বাহিনীর গাড়িতে সোনারগাঁও হোটেল থেকে বের হয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যান।
তাকসিম ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে যোগ দেন। সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১৪ অক্টোবর তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হতো। তিনি বর্তমানে ঢাকা ওয়াসায় না থাকলেও তাঁর গ্রুপভুক্ত লোকজনই ওয়াসার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বহাল তবিয়তে আছেন তাকসিমের দুর্নীতির সহযোগীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ব্যাপক হারে বহিষ্কার এবং ওএসডি করা হলেও, ঢাকা ওয়াসা এখনও অক্ষত। সাবেক এমডির দপ্তরের পিএস, এপিএস, স্টাফ অফিসার ৫ আগস্টের পর কিছুদিন লুকিয়ে থাকলেও বর্তমানে তারা নিয়মিত অফিস করছেন। তাকসিমের পদত্যাগের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফজলুর রহমানকে ঢাকা ওয়াসার এমডির (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছেন তাকসিম। তাঁর দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুদক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে তাকসিমসহ ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম। নতুন কমিশন যোগদানের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, তাকসিমের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করে অর্গানোগ্রামের বাইরে দু’জন পরিচালক নিয়োগ দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে তাকসিমসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছেন দুদক কর্মকর্তা। এ ছাড়া প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে আরও দুটি মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতির মাধ্যমে ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।
দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সমকালকে বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা ওয়াসার এমডি ফজলুর রহমান বিদেশ সফরে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।