রাজধানীর দর্জিপাড়ায় নেই চির চেনা ব্যস্ততা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘সাধারণ সময়েও ভালো ফরমাশ মেলে। এবার একদম কম। যেগুলো এসেছে, দিন-দুয়েক কাজ করলেই শেষ হয়ে যাবে। ২৭ বছর দর্জির কাজ করছি, এমন কখনও দেখিনি।’ ১৬ রমজানের দিনে শনিবার কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর চাঁদনী চকের সূর্যমুখী লেডিস টেইলার্সের কারিগর ও ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান।
সরেজমিনে এ মার্কেটের তৃতীয় তলার বেশিরভাগ দর্জির দোকানেই কর্মীদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। দোকানের মালিকরা জানান, অন্যান্য বার শবেবরাত থেকে শুরু হয়, মোটামুটি ১০ রমজানের আগেই নতুন পোশাকের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু এবার ১৭ রোজাতেও অর্ডার নিচ্ছেন। কারণ আশানুরূপ অর্ডার পাননি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ২৭ রমজানেও কেউ এলে না করবেন না।
কারিগর ও কর্মীরা জানান, সারাবছর যেমন-তেমন গেলেও, রোজার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা। সকাল ১০টা থেকে সেহরি পর্যন্ত কাজ করেন। বাড়তি আয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ ভালোভাবে কাটাতে পারেন। এবার ১৬ রোজা চলে গেল, এক দিনও সেহরি পর্যন্ত কাজ করতে হয়নি। রাত ১২টার মধ্যেই কাজ শেষ হচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময় গল্পগুজব করে কাটছে।
আবদুর রহমান সমকালকে আরও জানান, করোনাকালে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। তারপরও শেষদিকে ভালো কাজ হয়েছে। এবার কেন এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি একটি কারণ হতে পারে। কিন্তু উৎসবপ্রিয় বাঙালির এ চরিত্র তাঁকে সত্যিই অবাক করছে বলে জানান।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে একই তলার ইস্কয়ার লেডিস টেইলার্সের তিন কর্মীর একজন কাপড় কাটছেন। বাকিরা খোশগল্প করছেন। দোকানের কারিগর মোহাম্মদ সাগর বলেন, এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। ঈদ ঘিরে অর্ডার বেড়েছে। কিন্তু বিগত বছরের তুলনায় খুবই কম। কাজের চাপ নেই বললেই চলে।
চাঁদনী চকের আরেক কারিগর এমরান হোসাইন সেলাইয়ের কাজের জন্য নিউমার্কেট এলাকায় কারখানা করেছেন। আগে ২৬ কর্মী থাকলেও তা কমিয়ে এবার ২০ করেছেন। এমরান জানান, ঈদ উপলক্ষে ১০-১২ লাখ টাকার অর্ডার পেতেন। এবার ৫ লাখ টাকার মতো এসেছে। বাড়তি কর্মী এ জন্য রাখেননি।
মার্কেটের কাটিং মাস্টাররা জানান, মন্দার মধ্যেও পাকিস্তানি থ্রি-পিসের ভালো অর্ডার পেয়েছেন তাঁরা। নায়রা কাট, ফ্রগ, লেহেঙ্গার অর্ডার ছাড়াও গরমে সুতি পোশাকের ফরমাশ মিলেছে কিছু। বরাবরের মতো পোশাকের ছাঁটে ও হাতায় বৈচিত্র্য চাহিদার শীর্ষে। সালোয়ার-কামিজ তৈরিতে ৭০০ থেকে শুরু করে নকশা ও কাপড়ভেদে মজুরি নিচ্ছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা।
পছন্দসই পোশাক সাজাতে গজ কাপড় ও লেইস কেনা শেষে দর্জি বাড়িতে ছোটেন ক্রেতারা। সেখানেই নেই ভিড়। রংধনু লেইছের বিক্রয়কর্মী মো. শামীম জানান, ঈদে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। আরেক লেইছ ব্যবসায়ী ইয়াছিন রিয়াদ জানান, এবার ক্রেতারা কারচুপি ও ক্যাটওয়াক বেশি কিনছেন। রাজধানীর গুলশান, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র পাওয়া গেছে। জামার জন্য বিদেশি ক্যাটালগ থেকে গলা ও হাতার নকশা পছন্দ করছেন বেশিরভাগ নারী। উত্তরার বাসিন্দা শাকিলা পারভীন বলেন, ‘বরাবরই তৈরি পোশাকে আস্থা রাখি। এবার পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় গজ কাপড় কিনে ডিজাইন দেখিয়ে তৈরি করিয়ে নিচ্ছি।’
তবে রাজধানীর অলিগলিতে গড়ে ওঠা দর্জির দোকানে এবার ভিড় একটু বেশি দেখা গেছে। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ এসব টেইলার্সে পোশাক তৈরি করছেন। পোশাককর্মী মোসা. সাগরিকা বলেন, ‘বাজেট কম থাকায় নিজের জন্য কিছু নিচ্ছি না। দুই সন্তানকে কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এ জন্য গজ কাপড় কিনে টেইলার্সে ২৫০ টাকায় তাদের জামা বানিয়েছি।’