দিনে বাসন্তী রাতে শীতার্ত বিকিকিনিতে ফিরছে ছন্দ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:০৯ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
দিনের বেলা বইমেলায় প্রবেশ করতেই এখন ভিন্ন আবহ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের গাছগুলো থেকে এখনই কোকিলের ডাক শোনা যাচ্ছে। রৌদ্রময় আভা জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির পরিবর্তনের। অনেকে এখনই বাসন্তী সাজে মেলায় আসছেন। হলুদ শাড়ি, মাথায় ফুলের টায়রা পরে মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যার পরের চিত্রটা আবার ভিন্ন। তখন শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। তাই শীতের কাপড় গায়ে জড়াতেই হয়। ঋতু পরিবর্তনের এই ঠান্ডা-গরম পরিবেশে বইমেলা ধীরে ধীরে তার স্বরূপে ফিরছে। পাঠকের আনাগোনা আর বইয়ের বিকিকিনিতে ফিরছে চেনা ছন্দ।
শনিবারও মেলার শুরুটা সকালে শিশুপ্রহরের মধ্যে দিয়ে। দ্বিতীয় ছুটির দিনে শিশুকর্নারে শিশুরা মেতে ছিল সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি, শিকুদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে নাচেগানে মেতে থেকেই শিশুকর্নার থেকে ওরা কিনেছে বই।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বইমেলায় ভিড় ছিল বেশ কম। ছিমছাম পরিবেশে কিছু মানুষ আরাম নিয়ে মেলা ঘুরে বই কিনেছেন। বিকাল ঘনিয়ে আসতেই হাজার হাজার মানুষ মেলায় প্রবেশ করতে শুরু করেন। সেই রেশ থাকে মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত। তবে চতুর্থ দিনে এসেও মেলাবিষয়ক কিছু অসঙ্গতির কথা বলছেন প্রকাশকরা। অনেক প্রকাশক বলেন, মেলায় এত মানুষের আনাগোনার পরও ময়লা ফেলার ঝুড়ি হাতেগোনা কয়েকটি। শৌচালয়ে আলাদা স্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
শোভা প্রকাশনীর প্রকাশক মো. মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাডেমি যেন দায়সারা গোছের। এখনো অনেক জায়গায় ময়লা পড়ে আছে। মেলার সময় ৯টা পর্যন্ত। কিন্তু সাড়ে ৮টার পর থেকেই যেভাবে মাঠে বাঁশি বাজিয়ে এবং মাইকে বলে তাদের বের হওয়ার তাড়া দেওয়া হয় তা বেশ দৃষ্টিকটু।
শনিবার ছিল অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিন। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : ড. আকবর আলি খান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মো. মোফাকখারুল ইকবাল এবং কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সাদিক।
প্রাবন্ধিক বলেন, ড. আকবর আলি খান প্রশাসনের বহু পদে সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মুজিবনগর সরকারে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন, পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে জেলও ঘোষণা করেছিল। বহুকাল তিনি অর্থসচিব হিসাবে কাজ করেছেন, সরকারি প্রশাসনের শীর্ষপদ-মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাও ছিলেন। সরকারি প্রশাসনিক কর্মে এসব সাফল্য সত্ত্বেও আকবর আলি খানের মূল পরিচয় তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখাজোখায় ছড়িয়ে আছে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, অর্থনীতি, ইতিহাস নৃবিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে গভীর জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনা ড. আকবর আলি খানকে যেমন অমর করেছে তেমনি বাঙালি জাতিকে করেছে ঋদ্ধ। এমন একজন বিবেকবান, স্পষ্টভাষী, সৎ ও নির্মোহ মানুষ আমাদের নতুন প্রজšে§র জন্য নিঃসন্দেহে অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।
শনিবার মেলায় নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১১৩টি। মেলায় প্রকাশ হয়েছে সোমা দেবের গল্পগ্রন্থ শুক্লপক্ষ। শব্দশৈলী থেকে প্রকাশিত এ বইয়ে এগারোটি ছোটগল্প রয়েছে। আমাদের সমাজের নারীদের জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের বিভিন্ন গল্প আবিষ্কার করে লিপিবদ্ধ করেছেন লেখক।
সাংবাদিক মাসুদ করিমের সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে পলল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে বই ‘লণ্ঠন হাতে কণ্টক পথে’। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস ‘১৯৭৫-১৯৮১ হে সন্তপ্ত সময়’ প্রকাশিত হয়েছে। মেলায় এসেছে শিহান ওমরের লিওনেল মেসির অজানা গল্প নিয়ে ‘ম্যাজিক্যাল মেসি’।
শনিবার মেলায় আসা নতুন বইয়ের মধ্যে কথাপ্রকাশ এনেছে জিয়া হাশান অনূদিত ‘সেই রাত নাৎসি গণহত্যার স্মৃতি’, ইমতিয়ার শামীমের ‘পাঠ প্রান্তরে’, আগামী প্রকাশনী এনেছে ‘একাত্তরে সিরাজুদ্দীন হোসেনের অকুতোভয় সাংবাদিকতা জাহান্নামের আগুনে বসিয়া’। শৈশব প্রকাশনী এনেছে হরিশংকার জলদাসের ‘এক যে ছিল জলধর’, ভাবনা প্রকাশ এনেছে সালেহা চৌধুরীর ‘মুনশী আবদুল হাকিমের কোর্ট ও অন্যান্য গল্প’, ঐতিহ্য এনেছে অদিতি ফাল্গুনীর ‘আদিবাসী জনগণের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণা’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘হাজার বছরের নির্বাচিত কবিতা’, অন্যপ্রকাশ এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘নদীপথে সঙ্গে ইউলিসিস’, অনন্যা এনেছে ‘মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘স্মার্টফোন নাকি স্মার্ট বাচ্চা’, সময় প্রকাশন এনেছে আনিসুল হকের ‘ভয়ঙ্কর ভূত’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।