avertisements 2

২০২২ সালে হারিয়েছি যাঁদের

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৩৯ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

২০২২ সালে শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, রাজনীতি, চিকিৎসা, গণমাধ্যম, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন অঙ্গনে বাংলাদেশ হারিয়েছে অনেক কৃতী সন্তান। বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও শারীরিক নানা জটিলতায় মারা গেছেন তাঁরা। না ফেরার দেশে চলে গেলেও সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

সাহাবুদ্দীন আহমদ
প্রখ্যাত আইনবিদ ও ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি ছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। দু'বার রাষ্ট্রপতির আসনে বসেন। রাজনীতিক না হলেও দেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত নাম সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সমাজসেবী ও জনহিতৈষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং ১৯৯৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাহাবুদ্দীন আহমদ আবার তাঁর মূল পদে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। গত ১৯ মার্চ ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত
অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৩৪ সালে তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরামর্শক হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদে কাজ করেন। ১৯৮২ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মুহিতকে ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক সমস্যাসহ নানা বিষয়ে তাঁর ২২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী
সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী। ভাষা আন্দোলনের কালজয়ী গান 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো'-এর রচয়িতা। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন। গাফ্‌ফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের গ্রাম উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত মাসিক সওগাত পত্রিকায় তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস 'চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান'। ১৯৫৬ সালে যোগ দেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাকে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলমযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাস করছিলেন। গত ১৯ মে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আকবর আলি খান
আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস, কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পড়েছেন। পিএইচডি গবেষণাও অর্থনীতিতে। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। এর পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিলেন, তবে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার মুখে পদত্যাগ করেন। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্যসহ বিচিত্র বিষয়ে তাঁর গবেষণামূলক বই ব্যাপক সমাদৃত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বেড়ে ওঠা সাদাসিধে বালক আকবর আলি ছিলেন কল্পনাবিলাসী ও অন্তর্মুখী। গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

তোয়াব খান
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক তোয়াব খান গত ১ অক্টোবর না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদক ছিলেন। এর আগে দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দৈনিক সংবাদে কাজ শুরু করেন। ১৯৬১ সালে বার্তা সম্পাদক হন। ১৯৬৪ সাল থেকে বার্তা সম্পাদক হিসেবে দৈনিক পাকিস্তানে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক ছিলেন। তাঁর লেখা ও উপস্থাপনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচারিত হতো 'পিন্ডির প্রলাপ'। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে একুশে পদক পান।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
সাজেদা চৌধুরী ১৯৫৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতার গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক উইম্যান অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার সিএমএইচে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার
জনপ্রিয় রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গানে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহ ও অনুভূতির কথা। তাঁর রচিত গান ২০ হাজারের মতো। জনপ্রিয় বেশ কিছু সিনেমার পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন তিনি। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটি গান গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা। গীতিকার হিসেবে পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়া ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতিপদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সভাপতি ছিলেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

কাজী আনোয়ার হোসেন
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার ও রহস্যভেদী চরিত্র মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন গত বছর ১৯ জানুয়ারি মারা যান। তিনি একাধারে লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক। ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন।

ফজলে রাব্বী মিয়া
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ফজলে রাব্বী মিয়া ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধী দলের হুইপ ছিলেন। দশম জাতীয় সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মাহবুব তালুকদার
কবি ও শিশুসাহিত্যিক মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৭ থেকে ২০২২ মেয়াদে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মাহবুব তালুকদার তাঁর সহকারী প্রেস সচিবের (উপসচিব) দায়িত্ব পান। তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। গত ২৪ আগস্ট তিনি মারা গেছেন।

আরও যাদের হারিয়েছি
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর (১০ জানুয়ারি), চিত্রশিল্পী মাহমুদুল হক (১১ জানুয়ারি), সাবেক বিচারপতি তোফাজ্জেল হোসেন খান (১৬ জানুয়ারি), সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান (৫ ফেব্রুয়ারি), আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ (১ এপ্রিল), সংগীত ব্যক্তিত্ব আলম খান (৮ জুলাই), আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক (১৪ জুলাই), শিক্ষাবিদ প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা (১৭ আগস্ট), সাংবাদিক রণেশ মৈত্র (২৬ সেপ্টেম্বর), নাট্য নির্মাতা এবং অভিনেতা মাসুম আজিজ (১৭ অক্টোবর), আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী (১৪ নভেম্বর), শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম (২১ নভেম্বর), সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসেন (২১ নভেম্বর), বীরবিক্রম শাহজাহান সিদ্দিকী (২৪ নভেম্বর), সাবেক মন্ত্রী ও সচিব এ বি এম গোলাম মোস্তফা (৩ ডিসেম্বর), বীরউত্তম শামসুল আলম (৮ ডিসেম্বর) প্রমুখ।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2