avertisements 2

পুলিশের গায়ে জামায়াতের হাত

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ জানুয়ারী, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৩৪ পিএম, ১৭ মে,শুক্রবার,২০২৪

Text

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবন্ধকতা ঠেকাতে ‘স্মার্ট পুলিশ বাহিনী’ গড়ে তোলা হবে, বাংলাদেশ কখনো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ‘

জামায়াত-শিবির দিবালোকে প্রকাশ্যে নির্দয়ভাবে পুলিশের গায়ে হাত দিয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবিররা পুলিশকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে। কোনো দেশে কোথাও এভাবে কেউ পুলিশের গায়ে হাত দেয় না। দিবালোকে পুলিশের গায়ে হাত দেয়ার দৃশ্য কখনো দেখা যায় না। অথচ তা বাংলাদেশে ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সে সময় (২০১৩-১৪-১৫ সালের আন্দোলন) প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ এবং ৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছে। পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি। ২৯ জন পুলিশ সদস্যও নির্দয় নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন; অনেকে আহত হন। এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টি লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সে সময়ের বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের অগ্নিসন্ত্রাসে অনেক পুলিশ সদস্য আগুনে দগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন। কারও চেহারা এত বিকৃত হয়েছে যে, তারা মানুষের সামনে যেতে পারেন না। বাংলাদেশে এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা যেন আর না ঘটে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে যে কোনো ঝুঁকি নিতে পিছপা না হওয়াটাই পুলিশের কাজ এবং সেটা তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই করে যাচ্ছেন। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে তিনি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সময় পুলিশ সদস্যদের বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন।

করোনার কারণে গত দুই বছর আসতে না পারলেও এবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একটি খোলা জিপে করে পুলিশের কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশের বিভিন্ন দল বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে। পরে প্রধানমন্ত্রী ১১৭ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) সাহসিকতা, প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) সাহসিকতা, বিপিএম সেবা এবং পিপিএম-সেবা প্রদান করেন।

দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক চক্রান্ত আছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। যখন বাংলাদেশ একটু ভালোর দিকে যায় তখন নানা ধরনের চক্রান্ত শুরু হয়। আমার বাবা-মা-ভাই এবং ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল। এই বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ কখনও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করেও আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা যে ক্ষমতায় আসতে পারব এটা কেউ ভাবতে পারেনি। আল্লাহর রহমতে এই চুতর্থবারের মতো আমরা সরকারে আছি। আর আছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, পুলিশ বাহিনীসহ সবার জন্য কাজ করতে পেরেছি। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করেও আমরা যে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কোথাও এক ইঞ্চি আবাদি জমি যেন পড়ে না থাকে। প্রত্যেকেই কিছু উৎপাদন করবেন। কারণ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা যেন বাংলাদেশে না আসে। পুলিশ বাহিনীকে একটি দক্ষ চৌকস বাহিনী হিসেবে, ‘স্মার্ট পুলিশ বাহিনী’ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো প্রতিবন্ধকতায় যেন আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধা দিতে না পারে। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ অগ্নিদগ্ধ এবং ৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীও রেহাই পায়নি। ২৯ জন পুলিশ সদস্যও নির্দয় নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং অনেকে আহত হন। খুব নির্দয়ভাবে পুলিশকে বিএনপি-জামায়াত-শিবিররা যেভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছে তা কোথাও দেখা যায় না। এদের হামলায় সাড়ে তিন হাজার বাস-ট্রাক, ১৯টি ট্রেন, ৯টি লঞ্চ পুড়ে ধ্বংস হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর করে এবং ৬টি ভূমি অফিস সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখে দিয়েছিল এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা বাংলাদেশে যেন আর না ঘটে সে বিষয়েও তিনি সকলকে সতর্ক করেন। তিনি জঙ্গি প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে হলিআর্টিজন বেকারির জঙ্গি হামলার ঘটনায় আত্মাহুতিদানকারী দু’জন পুলিশ সদস্যকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশকে জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছে এবং পুলিশ বাহিনী জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালানি বা মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের পুলিশ বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এ জন্য পুলিশের বিশেষ করে মহিলা কন্টিনজেন্ট আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও ভূয়সী প্রশংসা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে এখন খুব সহজেই বিপদাপন্ন মানুষজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। জনগণ ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের সেবা পাচ্ছে এই ‘৯৯৯’ ব্যবহার করে। তিনি কক্সবাজারে বেড়াতে এসে হারিয়ে যাওয়া একদল ছাত্রকে ’৯৯৯’-এ ফোন করার পর উদ্ধারের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেত। এখন জানে পুলিশ সেবা দেয় ও তাদের পাশে দাঁড়ায়। মানুষের তথা জনগণের আস্থা অর্জন করা যেকোনো বাহিনীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনারা তা করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আপনারা এই সেবা করে যাবেন। জনগণের মনে পুলিশের প্রতি যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটা যেন অক্ষুণ্ন থাকে। আমরা চাই আমাদের পুলিশ বাহিনী জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী হিসেবেই জাতির পিতার সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা প্রদান সহজ করতে প্রতিটি থানায় নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ডেস্ক স্থাপন করেছে, নারীবান্ধব বিভিন্ন অ্যাপস্ চালু করেছে। এছাড়া, অনলাইন জিডি কার্যক্রম ও অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক সেবা ও মোবাইল অ্যাপস্ প্রবর্তনের মাধ্যমে পুলিশের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় আমরা সিআইডিতে একটি ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন’ করেছি। এছাড়া, ডিএমপির ‘সিটিটিসি’সহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। অচিরেই আমরা বাংলাদেশ পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপন করব এবং জেলা পর্যায় পর্যন্ত এ ইউনিটের শাখা বিস্তৃত করা হবে। তার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ্একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশকে তার সরকার আরো অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত। তারপরও ২০৪১ নাগাদ তার সরকার এই বাংলাদেশকে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে এবং প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন তাকে স্বাগত জানান। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য ও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।

বইয়ের মোড়ক উদ্বোধন : ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এই বই দু’টি সম্পাদনা করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত করিম। বই দু’টি হলো ‘চিঠিপত্র : শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং একই বইয়ের ইংরেজি সংস্করণ ‘লেটারস অব শেখ মুজিবুর রহমান’। কারাগার থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত পত্রাবলি নিয়ে এই বই দু’টি সংকলিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুলিশের চাকরির পাশাপাশি লেখালেখি ও নানা ধরনের সমাজসেবা কার্যক্রমে সক্রিয় অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। এর আগে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ সম্পাদনা করেন।

‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে তার গ্রন্থিত আরেকটি বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে আসে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি সম্পাদনায় মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন হাবিবুর রহমান। এছাড়াও হাবিবুর রহমানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার’ আলোচিত। এই বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন।

১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে জন্ম নেয়া হাবিবুর রহমান ১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন। এই পুলিশ কর্মকর্তা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে আসা কর্মকর্তার পেশাগত সাফল্য তাকে নিয়ে গেছে ঈর্ষণীয় অবস্থানে। ২০১৯ সালের ১৬ মে তিনি ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে দায়িত্ব পান। তার আগে তিনি পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গেল বছরের ১০ অক্টোবর তিনি অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব নেন। কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2