avertisements 2

প্রশাসনে চাপা ক্ষোভ অসন্তোষ বাড়ছে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ নভেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৩২ এএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪

Text

যুগ্মসচিব পদে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পদোন্নতিবঞ্চিত করার আলোচিত অভিযোগ এখন ‘টক অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। অনেকের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ। ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য সন্তান বঞ্চিত’ শিরোনামে রোববার তথ্যভিত্তিক রিপোর্ট প্রকাশিত হলে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলও নড়েচড়ে বসে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও তাদের অসন্তোষের কথা জানান। ইতোমধ্যে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে।

এদিকে রিপোর্ট প্রকাশের পর আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সূত্রগুলো বলছে, শুধু প্রয়াত যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল কুমার রায়ের সন্তান গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অভিজিৎ রায় নন, আরও অনেক স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানও পদোন্নতি পাননি। পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরীর আপন ভাগিনাও। বঞ্চিত এ উপসচিবের নাম নেওয়াজ হোসেন চৌধুরী। যিনি বর্তমানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদলের একান্ত সচিব (পিএস) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেওয়াজ হোসেন চৌধুরীর পরিবারে পাঁচজন স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। প্রয়াত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন চৌধুরী ও প্রয়াত শ্বশুরও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম শামসুদ্দীন। এছাড়া তার আপন আরও দুই মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন সিলেটস্থ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজীদ চৌধুরী এবং বিজিবির সাবেক ডিডিজি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম চৌধুরী।

উপসচিব নেওয়াজ হোসেন চৌধুরী ২১তম ব্যাচে একজন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী কর্মকর্তা হিসাবে সুপরিচিত। তিনি ঢাকার স্বনামধন্য স্কুল এবং ঢাকা কলেজ থেকে স্টার মার্কস নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও (ভূতত্ব বিভাগ) প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া লন্ডনের গ্রিনউইচ ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি (ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিক্স) করেন। একটি উচ্চশিক্ষিত পরিবারে গড়ে ওঠা এ কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের সময়ে তার দক্ষতার জন্য ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের পিএস ছিলেন। পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরের পিএস হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।

জানা যায়, সবদিক দিয়ে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এমন একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি না হওয়া অনেকে মেনে নিতে পারছেন না। এ ঘটনা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত অনেককেও বিস্মিত করেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পদোন্নতি না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন সচিবও সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কথা বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি রিভিউ হতে হবে। আমরা প্রশাসনে কোনো রাজনীতি কিংবা দলাদলি চাই না। প্রশাসন হবে প্রফেশনাল। দল বদলকারী সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তাদেরও আর দেখতে চাই না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার যোগ্য ও মেধাবী সন্তানদের পদোন্নতি হবে না, এটা মানা যায় না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেক কিছুর ঊর্ধ্বে।’ তারা বলেন, আমাদের ব্যর্থতার দায় সরকারের ওপর চাপানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সৎ ও দক্ষ প্রশাসন দেখতে চান।’

পদোন্নতিবঞ্চিত ২১তম ব্যাচের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষাজীবনেও পড়াশোনার বাইরে কিছু করিনি। এখনো চাকরিজীবনে কীভাবে নিজেকে আরও বেশি দক্ষ করা যায়, সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিলাম না, এখনো নেই। শুধু দক্ষতার জন্য সিনিয়র স্যাররাও আমাকে পছন্দ করেন। এজন্য দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছি। অথচ আমাকেও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো কারণ খুঁজে পাইনি। পরিবার এবং পরিচিতজনের কাছে বিব্রত হতে হচ্ছে। কাজে মন দিতে পারছি না।’

প্রসঙ্গত, ২ নভেম্বর যুগ্মসচিব পদে ১৭৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। নিয়মিত ব্যাচ হিসাবে পদোন্নতি দেওয়া হয় প্রশাসনের ২১তম ব্যাচকে। এর মধ্যে অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাসহ আরও বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাননি। এমন অভিযোগ চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2